গত রবিবার ৪২টি কেন্দ্রেই প্রার্থী ঘোষণা সারা তৃণমূলের। এবার জেলায়-জেলায় প্রচারে গিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার হাবড়ায় সভা করছেন মমতা। এ দিনের হাবড়ায় তৃণমূল সুপ্রিমোর সভা খুবই উল্লেখযোগ্য কারণ। কারণ গতকাল ই সিএএ কার্যকর করা হয়েছে দেশজুড়ে। আর মুখ্যমন্ত্র বরাবরই এর বিরোধিতা করে এসেছেন। এখন তিনি হাবড়ায় কী প্রতিক্রিয়া দেন তার দিকেই নজর থাকবে।
‘এই আইন সরিয়ে ফেলুন। বহাল তবিয়তে বাংলায় থাকুন। কেউ গায়ে হাত দিলে আমরা বুঝে নে।’
‘কয়েকদিন আগে খুব ইমপর্টেন্ট ছেলেকে ডেকেছিল। তারপর বলছে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন। এরপর বলেছে রাজনৈতিক ব্যক্তির ফোন আসবে। ফোন এল। বলছে বিজেপি যা বলবে তাই শুনবে। বিরুদ্ধে প্রচার করবে না। এত ভয়ানক, কুৎসিত দল দেখিনি। ওরা মহিলাদের বিরুদ্ধে। আসল হিন্দু মানে না। এরা বহিরাগতের হিন্দুত্ব তৈরি করেছে।’
‘বিজেপির ১৮টা সাংসদ কী করেছে? তৃণমূল করলে কালো। বিজেপি হলে ভাল? চোরেদের সব থেকে বড় নেতা বিজেপি। কে কত সম্পত্তি করেছে দেখুন। তৃণমূলের সবাই চোর নয়। একটা দুটো কেউ সিপিএম থেকে আসা হতে পারে।’
‘এটা বাংলা ভাগের খেলা। আমরা সবাই নাগরিক এটাই পরিচয়। এরপর যদি অনুপ্রবেশকারী বলে তাহলে আপনার স্ট্যাটাস কী থাকবে? কাকের বাসায় কোকিল ডিম পাড়ে। কাক ভাবে কাকের ছানা। এরপর কোকিল বড় হলেই কুহু আওয়াজ করে মায়ের কাছে যায়। নির্বাচনের আগে বিজেপি শুধু মিথ্যে বলে। ভোটের আগে ১০০টাকা দাম কমাবে।’
‘কী করেছেন মতুয়াদের জন্য? ঠাকুরবাড়ির উন্নয়ন আমরা করেছি। বড় মা যতদিন বেঁচে ছিলেন তার কে দেখা শোনা করেছে? আমি করেছি। মমতা বালা ঠাকুর করেছেন। জিজ্ঞাসা করুন ওকে। অসুস্থ হলেই বেলভিউতে ভর্তি করতাম। মতুয়াদের নামে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, সবটাই করব আমরা। তোমরা ভেব না আমরা গাছের আমড়া-আমড়া। আমরা নাগরিক। আমাদের অধিকার কেড়ে নেওয়া চলবে না।’
‘আমার রাজ্যে আমি কাউকে অধিকার কাড়তে দেব না। সারা ভারতে যদি সুযোগ আসে করতে দেব না।’
‘আমরা বাংলায় থাকতে ডিটেনশান ক্যাম্প করতে দেব না। কোনও এনআরসি করতে দেব না। কোনও বঞ্চনা-লাঞ্চনা করতে দেব না। এর জন্য আমার যদি জীবন যায় আমি জীবন দেব। বাংলার মানুষের অধিকার কাড়তে দেব না।আমি সব রাজ্যকে বলব আপনারা তৈরি হন।’
‘আমি বই লিখেছিলাম নাগরিকত্বের আতঙ্ক। বইটা পারলে কিনে পড়বেন। যারা খুশি হচ্ছেন তাঁরা পড়ে দেখবেন আইনটা কত ভয়ঙ্কর।’
‘ফর্মের এক জায়গায় বলা হয়েছে বাবার বার্থ সার্টিফিকেট জমা দাও। সবার বাবার বার্থ সার্টিফিকেট আছে? আমার বাবার বার্থ সার্টিফিকেট নেই। আমি বাবা-মার জন্মদিনই কবে জানি না। আমার মতো আপনাদেরও এমন অনেক পরিবার আছে যাঁদের বাবার ৫০-৬০ বছর বয়স। তাঁরা বার্থ সার্টিফিকেট পাবেন তো?’
‘হিন্দু-মুসলিম-উত্তর পূর্বের লোক কাঁদছে। অসমে বাঙালি হিন্দুরাও কাঁদছে। নীতি যদি স্বচ্ছ হত তাহলে মতুয়া, নমশূদ্র, আধার বাতিল করেছিলেন কেন? একবছর সময় নিতেন।’
‘ভোটে জিততে ভাঁওতা দিচ্ছে। মতুয়া ভাইবোনদের বলছি, এই আইন ২০১৯ সালে পাশ হয়েছে। এতদিন কার্যকর কেন করেনি? এখন নির্বাচনের আগে মানুষ অধিকার পায়। খবরদার এই পথে যাবেন না। বিজেপি বিভিন্ন কথা বলবে। কিন্তু এই পথে হাঁটবে না।’
‘একজনের ১৮ বছরের আগে নাগরিকত্ব পাবে না। সে কণ্যাশ্রী পাবে না, শিক্ষাশ্রী পাবে না, মেধাশ্রী পাবে না, স্বাস্থ্যসাথী, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার পাবে না। আপনাকে বেআইনি হতে হবে। এটা একটা ঝুমলা। যদি সত্যি কেউ নাগরিকত্ব পায় আমি খুশি হব। প্রথমে তাঁকে অনুপ্রবেশকারী বলবেন। আর যাঁরা নাগরিক তাঁরাও বেআইনি হবেন। এর কোনও যৌক্তিকতা নেই। আইন বিশেষজ্ঞরাও আমাদের একই কথা বলেছেন।’
‘ইউনাইটেট নেশনে বলা হয়েছে, অনুপ্রবেশকারীরা যেন বৈধ কারণ ছাড়া রাষ্ট্রহীন না হয়ে পড়ে। এমনকী শরণার্থীরাও যদি পাশের জায়গায় গিয়ে আশ্রয় নেয় তাদেরও কিন্তু মানবিকতার খাতিরে তাঁদের আশ্রয় দিতে রাষ্ট্র বাধ্য থাকে।’
‘এপাড় বাংলার সঙ্গে ওপাড় বাংলার বিয়ে হয়েছে। তাদের কী হবে? মেয়ে বাপের বাড়ি যেতে পারবে না? ছেলে শ্বশুরবাড়ি যেতে পারবে না? ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব কখনও শুনেছেন?’
‘এই CAA হল NRC-র সঙ্গে যুক্ত। সব রাষ্ট্রহীন হবে। আপনি যদি নাগরিক না হন তাহলে সংবিধানের ১৪ নম্বর ধারা, ২১ নম্বর ধারায় সব অধিকার থেকে আপনি বঞ্চিত হবেন কী করে? আদালতেও চ্যালেঞ্জ করতে পারবে না। আপনি নাগরিক।’
‘আফগানিস্থান তো ভারতের বর্ডার নয়। তাহলে এল কেন? মায়ানমার,শ্রীলঙ্কা বাদ। এটা ধর্মনিরপেক্ষতায় আঘাত করেছে।’
‘আপনাদের ভাওতা দিচ্ছে। ধাপ্পা দিচ্ছে। সব হারাবেন। এটাও যাবে। ওইটাও যাবে। সব হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৌন ২০১৫ সালের পর যাঁরা ভারতে এসেছেন তাঁরা বেআইনি হয়ে যাবেন। সংখ্যালঘুরা তো আছেনই। সকলের মধ্যেই ভেদাভেদ করা।’
“সারা পৃথিবীতে নিয়ম আছে। কোনও দেশে পাঁচ বছর, কোনও দেশে তিন বছর সেখানে থাকে তাহলে গ্রিন কার্ড পায়। আগে ডিএম-রা এই গ্রীন কার্ড দিত। সেইটাও ওরা বন্ধ করল। আপনারা তুলে দেবেন নিজের ভাগ্য বিজেপি-র হাতে?”
‘যারা CAA-তে আবেদন করবেন এর কোনও স্বচ্ছতা নেই। এতদিন ভোট দিয়েছেন? আধার কার্ড ছিল? জমি আছে? এই আইনে যেই দরখাস্ত করবেন আপনি বিদেশি হয়ে যাবেন।’
‘মণিপুরে অনেক চার্চ পুড়িয়েছে। সেখানকার মহিলাদের নির্যাতন করা হয়েছে। কোথায় ছিলেন বিজেপি নেতারা।’
‘একটা মানুষ অধিকার পেলে খুশি হব। কিন্তু কেউ বঞ্চিত হলে আমি তার সামনে দাঁড়িয়ে সেলটার দেব। বাংলা থেকে কাউকে বিতাড়িত করতে দেব না।’
‘আপনারা দরখাস্ত করলে সব নাগরিকত্ব বাতিল করে দেবে। অধিকার বাতিল করে দেবে। এটা এনআরসি-র সঙ্গে কানেকটেড। আপনাদের ডিটেনশান ক্যাম্পে নিয়ে যাবে। এই দরখাস্ত করার আগে বারবার ভাববেন। একবার নয় হাজার বার ভাবুন।’
‘লুডো খেলা জানেন তো? ছক্কা মারে ঘর খোলে। এটা বিজেপির লুডো খেলার ছক্কা। ওরা ভাবছে এটা করলে ছক্কা পাবে। কিন্তু নিট রেজাল্ট শূন্য।’
‘এখন যাদের দরখাস্ত করতে বলা হচ্ছে এটা মানে নাগরিক থাকা সত্ত্বেও বেআইনি অনুপ্রবেশকারী হয়ে যাবেন। তাহলে আপনাদের সম্পত্তি, চাকরি, বাড়ি কী হবে? এটা অধিকার কাড়়ার খেলা।’
‘ভোটের আগে যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলা। ২০১৯ সালে অসমে এনআরসি-র নামে ১৯ লক্ষ হিন্দু লোকের মধ্যে ১৩ লক্ষ বাঙালি হিন্দুকে বাদ দেওয়া হয়েছি। অনেক মানুষকে বাদ করা হয়েছিল।’
‘আমরা জবকার্ড হোল্ডারদের টাকা দিয়েছি। নামেই ওটা একশো দিনের কাজ হত। বছরের ৩০-৩৫ দিনের কাজ হত। তাই ধাপ্পা না দিয়ে, দিল্লির কাছে মাথা নত না করে কর্মশ্রী প্রকল্প চালু করছি। এতে ৫০ দিন জব কার্ড হোল্ডাররা টাকা পাবেন।’
হাবড়ার সভার পূর্বে মুখ্যমন্ত্রীকে CAA নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছিলেন, ‘হাবড়ার সভা থেকে বলব’। স্বভাবতই তাঁর এই সভা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।