Kamarhati: ফের কলেরা আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি কামারহাটিতে, কেন অনিয়ন্ত্রিত সংক্রমণ?

TV9 Bangla Digital | Edited By: tista roychowdhury

Sep 10, 2021 | 1:37 PM

Kamarhati Municipality: বৃহস্পতিবারই কলেরায় আক্রান্ত হয়েছিলেন ৩জন। শুক্রবার আরও ১৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন।

Kamarhati: ফের কলেরা আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি কামারহাটিতে, কেন অনিয়ন্ত্রিত সংক্রমণ?
আক্রান্ত, নিজস্ব চিত্র

Follow Us

উত্তর ২৪ পরগনা: ফের কলেরা সংক্রমণ বৃদ্ধি কামারহাটিতে (Kamarhati)। আগেই কলেরায় (Cholera) আক্রান্ত হয়েছিলেন ৩জন। শুক্রবার নতুন করে ফের আক্রান্ত হয়েছেন ১৮ জন। আক্রান্তদের জন্য তিনটি অস্থায়ী স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে। সেখানেই মূলত চিকিত্‍সার জন্য় যাচ্ছেন আক্রান্তরা। প্রশ্ন উঠছে, কেন এখনও অনিয়ন্ত্রিত সংক্রমণ?

কামারহাটি (Kamarhati) পুরসভা সূত্রে খবর, নাইসেডের রিপোর্টে সম্প্রতি কলেরা সংক্রমণের খবর এসেছে। বৃহস্পতিবারই কলেরায় আক্রান্ত হয়েছিলেন ৩জন। শুক্রবার আরও ১৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন। তবে, কেউই খুব গুরুতরভাবে আক্রান্ত নন। এক পুর আধিকারিক জানিয়েছেন, আক্রান্তেরা সকলেই এখন মৃদু উপসর্গ নিয়েই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসছেন। তাঁদের কমবেশি সকলেরই পেট ব্যথা, জ্বর, বমি হচ্ছে।

তিনটি অস্থায়ী স্বাস্থ্য়কেন্দ্রে চব্বিশ ঘণ্টাই উপস্থিত থাকছেন চিকিত্‍সকেরা। মূলত জল থেকেই এই সংক্রমণ বলছেন চিকিত্‍সকেরা। যে ১৮ জন আক্রান্ত চিকিত্‍সা করাতে আসেন তাঁদের প্রাথমিক চিকিত্‍সা করিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। পুরসভার কর্মীরা পরিশোধিত জল পানের জন্য মাইকে প্রচার করে চলেছেন। জল শোধনের জন্য বিলি করা হচ্ছে হ্যালোজেন ট্যাবলেট, ওআরএস ও অ্যান্টিবায়োটিক।

এছাড়াও কামারহাটির যে জলাধার থেকে পানীয় জল সরবরাহ করা হয়, সেই জলাধারও ওষুধ দিয়ে পরিশোধনের কাজ চলছে এমনটাই খবর পুরসভা সূত্রে। তবে, কামারহাটির ১ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডে সংক্রমণ বৃদ্ধি পেলেও ২ ও ৪ নম্বর ওয়ার্ডে সংক্রমণ এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত বলে জানিয়েছে পুরসভা।

ঠিক কীভাবে এই সংক্রমণ বৃদ্ধি তা জানতে নাইসেডে নমুনা পাঠিয়েছিল রাজ্য স্বাস্থ্য় দফতর। মোট ৯ জনের নমুনা পাঠানো হয় নাইসেডে। সেখানকার প্রাথমিক রিপোর্টে বলা হয়, ডায়ারিয়া নয়, কলেরার জীবাণু থেকেই সংক্রমণ বৃদ্ধি কামারহাটি পুরসভা এলাকায়। স্থানীয়দের অভিযোগ, বর্ষা হলেই জল জমে যায় এলাকায়। প্রবল বৃষ্টিপাতে জল যন্ত্রণার সঙ্গে বাড়ে পেটের অসুখও। এই বৃষ্টির কারণেই কোনওভাবে পানীয় জলেও ডায়ারিয়ার জীবাণু ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে মনে করছেন এলাকার মানুষ।

বৃহস্পতিবার কামারহাটির নানা স্থানে ক্যাম্প করেন স্বাস্থ্য় দফতরের আধিকারিকরা। সব দিক খতিয়ে দেখার পর তাঁরা প্রাথমিকভাবে দাবি করেন জল থেকেই মূলত কলেরার জীবাণু ছড়িয়েছে। গত মঙ্গলবার, কামারহাটির ১,২,৩,৪ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডে আচমকা ডায়ারিয়ার সংক্রমণ বৃদ্ধি পায়। সংক্রমণের জেরে ৬৮ জন সাগর দত্ত হাসপাতালে ভর্তি হন। তাঁদের মধ্যে আশঙ্কাজনক ৬ জন। ২জনের মৃত্যুও হয়। পরে স্বাস্থ্য় দফতর জানায়, ডায়ারিয়া নয়, কিডনি কাজ না করায় ওই দুই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।

সেপ্টেম্বরের গোড়া থেকে কামারহাটিতে জলবাহিত রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায় বলেই দাবি করেন স্থানীয়রা। কামারহাটি অঞ্চলের ১ নম্বর ওয়ার্ডে আক্রান্তের সংখ্যা সবথেকে বেশি। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন বেশিরভাগ শিশু এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। বুধবার সকাল থেকেও সাগর দত্ত হাসপাতালে অন্তত ২০ জন আসেন ডায়ারিয়ার উপসর্গ নিয়ে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, বেশির ভাগেরই পেটে ব্যাথা, বমির মতো উপসর্গ দেখা যাচ্ছে।

জানা গিয়েছে, মোট ৪ জনের একই উপসর্গে মৃত্যু হওয়ায় ডায়ারিয়া বলেই সন্দেহ করা হয়েছিল। কিন্তু স্বাস্থ্য দফতরের রিপোর্ট অনুযায়ী, ডায়ারিয়াতে দু’জনেরই মৃত্যু হয়েছে কামারহাটিতে। বাকি দুই মৃত্যুর সঙ্গে এই রোগের কোনও যোগ নেই বলেই জানিয়ে দিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। একটি বিবৃতি জারি করে স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, দু’টি মৃত্যু ডায়ারিয়ার কারণে হয়েছে। তবে আরও যে দু’টি মৃত্যু হয়েছে তার সঙ্গে ডায়ারিয়ার যোগ নেই। একইসঙ্গে জানানো হয়েছে, বুধবার পর্যন্ত সুডার রিপোর্ট অনুযায়ী, কামারহাটিতে ডায়ারিয়া আক্রান্ত হয়েছেন ১৬০ জন। সাগরদত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ৭৬ জন। কামারহাটি ইএস‌আইয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৪০ জন।

যদিও, নাইসেডের নয়া রিপোর্টে ডায়ারিয়ার বদলে কলেরার জীবাণু পাওয়া গিয়েছে বলে বৃহস্পতিবারই জানিয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। কামারহাটির এ হেন পরিস্থিতি নিয়ে বুধবার একটি বিবৃতি জারি করেন স্বাস্থ্য দফতরের অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী। তিনি জানান, জেলা প্রশাসন ও পুরসভার কর্মীদের এ নিয়ে সজাগ থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে তারা সবরকম খোঁজ খবর নিচ্ছে। প্রয়োজনীয় পরামর্শ থেকে প্রাথমিক পথ্য, ওআরএসের প্যাকেট দেওয়া হচ্ছে। জলের রিজারভারগুলি পরিষ্কারের পাশাপাশি এলাকায় স্বাস্থ্য শিবিরের আয়োজন করা হচ্ছে। সকাল ছ’টা থেকে সন্ধ্যা ছ’টা পর্যন্ত মেডিক্যাল অফিসার, প্যারামেডিক্যাল কর্মীরা এলাকায় থেকে মানুষের সঙ্গে কথা বলেছেন। পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে।

আগেই কামারহাটির তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র জানিয়েছিলেন, “কামারহাটিতে স্বাস্থ্যদফতরের নির্দেশে বিশেষজ্ঞ দল পৌঁছেছে। আমাদের দলের স্বেচ্ছাসেবকরা তৈরি রয়েছেন। আমার বাড়ির ল্যান্ডলাইন নম্বর হেল্পলাইন হিসেবে খুলে দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক মুহূর্তে আমাদের দলের কর্মীরা কাজ করছেন। আশা করছি দ্রুত এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।” আরও পড়ুন: পৌরসভায় গুপ্ত কক্ষ, ৬ফুটের আলমারি, জানেনই না পুরপ্রশাসক, শ্যাম-কাণ্ডে চাঞ্চল্যকর তথ্য!

 

Next Article