ব্যারাকপুর : রাজ্যজুড়ে নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে ভূরি ভূরি অভিযোগ। অনেক স্কুলেই শিক্ষকের অভাব নিয়ে অভিযোগ উঠেছে। প্রচুর শূন্যপদ পড়ে রয়েছে বলে দাবি একাংশের। সম্প্রতি সেই সমস্ত শূন্যপদে নিয়োগ নিয়ে তৎপরও হয়েছে রাজ্য সরকার। আর এর মধ্যেই সামনে এল চাঞ্চল্যকর এক ছবি, যা রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে ফের একবার প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। উত্তর ২৪ পরগনার বারাকপুরে এ যেন উলটপুরান। একাধিক স্কুলে শিক্ষকের সংখ্যা যথেষ্ঠ, কিন্তু দেখা নেই ছাত্র কিংবা ছাত্রীর। শুধু পড়ে রয়েছে ঝকঝকে স্কুলের ভবন। ক্লাসে ক্লাসে পড়ে রয়েছে ফাঁকা বেঞ্চ। সম্প্রতি আরটিআই করে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এসেছে।
ব্যারাকপুর মহকুমার এমন অন্তত ৪৫ টি সরকারি স্কুলের একই ছবি। কোথাও কোথাও পড়ুয়ার তুলনাতে শিক্ষকের সংখ্যা দ্বিগুণ কিংবা তিনগুন। সোদপুর সুশীল কৃষ্ণ শিক্ষায়তন ফর বয়েজে ছাত্রের সংখ্যা মাত্র ৪, আর সেখানে শিক্ষকের সংখ্যা কিনা ১৭। আবার সোদপুর ঘোলা ভুবনেশ্বরী বালিকা বিদ্যামন্দিরে ছাত্রীর সংখ্যা ৯, আর সেখানে শিক্ষিকার সংখ্যা কিনা ১৪। কাকিনাড়া মাদ্রাল হাইস্কুলে আবার ছাত্র সংখ্যা ১০ আর শিক্ষকের সংখ্যা ১২।
প্রায় ফাঁকা ক্লাসরুমে মন খারাপ পড়ুয়াদের। তানিয়া নস্কর নামে এক স্কুল ছাত্রী জানিয়েছে বর্তমানে দশম শ্রেণিতে তাঁর সহপাঠি বলতে রয়েছে মাত্র একজন। বন্ধুর সংখ্যা কম হওয়াতে স্কুলে আসতে খারাপই লাগে তানিয়ার। সে জানায় চারপাশে স্কুল হয়ে যাওয়াতে এভাবে পড়ুয়ার সংখ্যা ধীরে ধীরে কমে গিয়েছে।
এভাবে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা কমতে থাকায় মাথাতে হাত পড়েছে শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরও। কেন এমন অবস্থা? সোদপুর সুশীল কৃষ্ণ শিক্ষায়তন ফর বয়েজের প্রধান শিক্ষক অমিত হবিষ্যাশীর দাবি, ইংরেজি মাধ্যমে ছেলে-মেয়েদের পড়ানোর প্রবণতা বেড়েছে অভিভাবকদের। আর সেটাই এভাবে পড়ুয়ার সংখ্যা কমে যাওয়ার একটা বড় কারণ হতে পারে বলে মনে করছেন ওই শিক্ষক। পরিস্থিতি ঠিক করতে আশপাশের প্রাথমিক স্কুলগুলির সঙ্গেও কথা বলেন অমিতবাবু। কিন্তু তাতে কোনও কাজ হয়নি বলেই দাবি করেছেন তিনি। কার্যত খালি হাতেই সব জায়গা থেকে ফিরতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অমিত হবিষ্যাশী।
সোদপুর ঘোলা ভুবনেশ্বরী বালিকা বিদ্যামন্দিরের প্রধান শিক্ষিকা চন্দনা বাস্কে জানাচ্ছেন, প্রবেশিকা পরীক্ষা উঠে যাওয়াতেই পড়ুয়ারা অপেক্ষাকৃত নামি স্কুলে ভর্তি হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে পানিহাটি পুরসভার কাউন্সিলর প্রদীপ বড়ুয়া জানিয়েছেন, এই ইস্যুতে তৎপর এলাকার বিধায়ক। তবে এই ব্যাপারে মুখে কুলু এঁটেছে জেলা শিক্ষা দফতর। স্কুল পরিদর্শকের অফিসে গিয়ে ডি আই শান্তনু সিনহার দেখা পাওয়া গেলেও এই বিষয়ে একটা শব্দও খরচ করেননি তিনি। মিটিংয়ে ব্যস্ত বলে পুরো ব্যাপার টাই এড়িয়ে গেলেন ওই আধিকারিক।
তবে স্কুলের যখন এমন বেহাল দশা সেই সময়ে খোদ স্কুল পরিদর্শকের কি নিয়ে এমন জরুরি বৈঠক? তা নিয়ে থেকে যাচ্ছে প্রশ্ন।