কলকাতা: ‘ভাইজান আপ জাইয়ে, কোয়ি মুশকিল নেহি হ্যায়…’, কাবুল ছাড়ার আগে নিমতার পদার্থবিদ্যা-রসায়নের শিক্ষক তমাল ভট্টাচার্যকে ঠিক এই কথাটাই বলেছিলেন তালিবানরা। তিনি কাবুলে শিক্ষকতা করতেন। রবিবার রাতে তিনি নিমতার বাড়িতে পৌঁছন। আর তাঁর মুখেই শোনা গেল তালিবানি-রাজের অন্য গল্প।
তরুণ শিক্ষকের কথায় প্রতি পরতে পরতে উঠে এসেছে তালিবানের কথা, তাঁদের আন্তরিতাকতা, সৌজন্য , ভালোবাসা, সহযোগিতার কথা! হ্যাঁ, ঠিক এমনটাই বলছেন তমাল। শুধু তাই নয়, নারীদের প্রতি তালিবানরা ঠিক কী মনোভাবাপন্ন, সেটাও স্পষ্ট করেছেন তিনি।
তমাল তখন নিরাপদ আশ্রয়ে। তবে কাবুলেও তালিবানের আখড়াতে তিনি যে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলেন না, তা ফিরে এসেও বারবার বলেছেন তিনি। বরং অনান্য বিপদের থেকে তালিবানের নজরাধীনেই অনেক বেশি নিরাপদ ছিলেন তিনি। বারবারই সে কথা বলছেন। তমাল বললেন, “আমাদের পাসপোর্ট-সহ সব নথি ওঁরা দেখেছিলেন। যাতে আমাদের কেউ টাচ করতে না পারে। পরশু রাত থেকে আমরা এয়ারপোর্টে আটকে ছিলাম। ওদের তিন রকম পদ থাকে। তালিবান অ্যাডমিনিস্ট্রেটর, তালিবান ফাইটার্স, ল অ্যান্ড ফোর্সেস- এই তিনটি ভাগে তালিবানরা কাজ করে থাকে। তালিবান ফাইটার্সরা তখন খবর পাঠায় ফোর্সের কাছে, যে আমরা আনসেফ! অনান্য অনেক গ্রুপ রয়েছে। কিন্তু এই তালিবানরা আমাদের মারাত্মক সাহায্য করেছে। জল দিয়েছে, খাবার দিয়েছে। ওঁদের হেল্প ছাড়া আমরা আজকে আসতে পারতাম না।”
তালিবানদের প্রতি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ তিনি। সেটাই বারবার বোঝাতে চেয়েছেন। তমাল জানিয়েছেন, যাঁদের কাছে পাসপোর্ট ছিল না, তাঁদেরকেও পর্যন্ত নিজেদের দেশে ফিরতে দিয়েছেন তালিবানরা। প্রত্যেককে যেতে দিয়েছে, যাতে কারোর কোনও অসুবিধা না হয়, সেদিকে তাঁরা বিশেষ নজর রেখেছিলেন বলেও জানান তমাল।
তমালের কথায়, “আপনারা আফগানিস্তান না গেলে বুঝবেনই না যে ওখানে কী হয়…তালিবান সম্পর্কে আপনারা যা দেখেছেন…তা সম্পূর্ণ সত্যি নয়… তালিবান নেভার কিলড এনি ওয়ান..”
তালিবানরা কি নারী বিদ্বেষী? সে প্রশ্নেরও সোজাসাপটা উত্তর দেন তমাল। স্পষ্ট বললেন, ‘নো..’ তাঁর কথায়, “দ্যাটস অ্যানাদার লাই.. আমিও যেটা ভাবতাম, তালিবান মানে হচ্ছে প্রচণ্ড রকমের নারী বিদ্বেষী। নারী স্বাধীনতা তাঁরা মানতে পারেন না। ৯/১১ হওয়ার পর থেকে আমি বিভিন্ন বই পড়েছি। তালিবানরা ইসলামি শরিয়তি আইন মেনে চলেন। সেখানে কখনই বলা নেই, মেয়েরা স্কুলে যেতে পারবে না। তালিবানরা সেটাই মেনে চলে। আফগানিস্তানে প্রচুর শিক্ষিত মহিলা রয়েছেন। তাঁরা বিভিন্ন জায়গায় কাজ করেন। তাঁদের কর্মস্থলে যেতে বাধা দিচ্ছেন তালিবানরা। হিজাব পরার কথাটা বলেছেন।”
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, তাহলে কাবুলের সরকারি চ্যানেল যে প্রচুর মহিলা সাংবাদিকের চাকরি চলে যায় তাহলে কি সে খবর মিথ্যা? গুলি করে খুন করার খবরও কি মিথ্যা? তমালের সাফ জবাব, “আমি কাবুলে ছিলাম। কাবুলে তো এমন কিচ্ছু হয়নি। যাঁরা মারা গিয়েছেন, সেটা অন্য কারণে। আমি যে স্কুলে পড়াতাম, সে স্কুলেও প্রচুর মহিলা শিক্ষকতা করেন। তাঁরা প্রত্যেকেই কাজ করছেন এখনও। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় স্তরেও প্রচুর মহিলাকে অধ্যাপনা করছেন এখনও।”
তবেও এটাও বললেন, “যাঁদের মৃত্যু হয়েছে, সেটা অন্য কারণে। এটা বলে রাখি, দে (তালিবান) লাভ টু টেক রিভেঞ্জ…” তমালের এই কথায় অবশ্য অন্য গন্ধ রয়েছে। তবে তালিবান সম্পর্কে মানুষের মনে যে ভ্রান্ত ধারণা আছে, তা থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা বারবারই বলেছেন শিক্ষক তমাল। তাঁর চোখে, ‘দে আর হেল্পফুল…’ আরও পড়ুন: শুভেন্দুর কনভয়ে ‘হামলা’, ‘মীরজাফর’-কে সাবধান করে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিতর্কিত পোস্ট আনিসুরের!