উত্তর ২৪ পরগনা: বিজেপির (BJP) দৌলতে বর্তমানে রাজ্যে প্রবলভাবে চর্চায় পিকনিকের রাজনীতি। বনগাঁর বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরকে (MP Shantanu Thakur) এই রাজনীতির ‘জনক’ বলেও বিভিন্ন মহল তকমা দেওয়া শুরু হয়েছে। দলে বিদ্রোহ ঘোষণা করে বিজেপির বিভিন্ন স্তরের নেতারা যখন এ নিয়ে রাজ্য–রাজনীতি সরগরম করে তুলেছ, সেই সময় পুরভোটকে সামনে রেখে জনসংযোগের কাজ এগিয়ে নিতে একইভাবে পিকনিকের রাজনীতির কৌশল গ্রহণ করল তৃণমূল (Trinamool Congress)।
রবিবার বনগাঁতেই এই ধরনের ঘটনা সামনে এসেছে। পুরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের মগপাড়ায় প্রাক্তন পুরপিতা শংকর আঢ্যর উদ্যোগে এই এলাকার সাধারণ মানুষকে নিয়ে এদিন পিকনিকের আয়োজন করা হয়। এক হাজারেরও বেশি মানুষ তাতে অংশগ্রহণ করেন। শংকরবাবুর স্পষ্ট বক্তব্য, “এই ধরনের পিকনিকের আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য জনসংযোগ। এলাকার মানুষেরও দীর্ঘদিনের চাহিদা ছিল। অনেকেই স্থানীয়দের বেশ কিছুদিন ধরে ভয় দেখাচ্ছিল। তাই স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব দাবি করে পিকনিকের আয়োজন করে একটা জনসংযোগ করা হোক। এর থেকে ভাল ব্যবস্থা হয় না মানুষের সঙ্গে মেশার। সেই কারণেই এলাকার মানুষের সঙ্গে একটু জনসংযোগ করা হল।”
তবে ওয়ার্ডটি সংরক্ষিত হয়ে যাওয়ায় শংকরবাবু এখান থেকে প্রার্থী হতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন। তার পরও এলাকায় শান্তি বজায় রাখতে এই ধরনের জনসংযোগের আয়োজন বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। একইসঙ্গে শান্তনু ঠাকুরের দেখাদেখি তৃণমূল এই পিকনিকের আয়োজন করেছে এমনটা মানতে নারাজ তিনি। বলেছেন, “কে কী করেছে আমাদের দেখে লাভ নেই। তৃণমূল সবসময়ই জনসংযোগ করে মানুষকে নিয়ে। কখনও পুজো, কখনও বিজয়োৎসব, কখনও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলতেই থাকে। বিরোধীরা কী একটু পিকনিক করে ছবি তুলছে, তা নিয়ে আমরা ভাবিত নই।”
একই উদ্যোগ নেওয়া হয় ১২ নম্বর ওয়ার্ডেও। ওয়ার্ডের কো-অর্ডিনেটর টুম্পা রায়ের উদ্যোগে স্থানীয় স্তরে সংগঠনের মহিলা তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীদের নিয়ে এদিন পিকনিকের আয়োজন করা হয়। সেখানে আয়োজন আরও রকমারি। ওয়ার্ডের প্রায় দেড় হাজার মহিলা এদিন হাজির ছিলেন। শুধু খাওয়া-দাওয়া নয়, ছিল স্থানীয় ব্যান্ডকে এনে গান–বাজনারও আয়োজন। দর্শকরা পছন্দের গানও গাইতে বলেন শিল্পীদের। সবশেষে প্রীতিভোজ। অনুষ্ঠানপর্ব শেষে এই কো-অর্ডিনেটরও সেই জনসংযোগের কারণে পিকনিকের আয়োজন বলেই জানিয়েছেন। তবে একইসঙ্গে টুম্পা রায় বলেছেন, “এমন প্রীতিভোজ প্রতি বছরই হয়। অন্যান্যবার বুথে বুথে হয়। এবার ওয়ার্ডের সকলকে নিয়ে একসঙ্গে আয়োজন।” তবে শান্তনু ঠাকুরের দেখাদেখি এমন আয়োজন করা হয়েছে বলে তিনিও মানতে নারাজ। বলেছেন, “আমরা এমন আয়োজন প্রতি বছরই করি। অনেক জায়গায় ইতিমধ্যে এমন পিকনিক হয়েও গিয়েছে। এদিন এখানে হল।”
বিজেপি এই নিয়ে অবশ্য কটাক্ষ করতে ছাড়েনি। সাংগঠনিক জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক দেবদাস মণ্ডলের বক্তব্য, “শান্তনু ঠাকুরের নেতৃত্বে পিকনিকের আয়োজন করা হয়েছিল জনসংযোগ যাত্রা করতে। বহু কর্মী বসে গিয়েছেন। তাঁদের একজোট করে নতুন উদ্যোগে পথে নামাতে এই উদ্যোগ নেওয়া।” তাঁর কথায়, “তৃণমূল যতই বিজেপিকে অনুকরণ করুক না কেন, যে পদ্ধতিই অবলম্বন করুক না কেন, কোনও লাভ হবে না। বনগাঁর মানুষ ২০১৯–এ ভারতীয় জনতা পার্টির উপরে আস্থা রেখেছে। ২০২১–এও ভারতীয় জনতা পার্টির উপর আস্থা রেখেছে। ২০২২ সালেও ভারতীয় জনতা পার্টির উপর আস্থা রাখবে। তৃণমূলের অত্যাচার মানুষ ভোলেনি।”
আরও পড়ুন: ‘শিশুমনে প্রভাব পড়ছে, স্কুল খুলুন’, মুখ্যমন্ত্রীকে এবার চিঠি শিশুরোগ চিকিৎসকদের