PM Narendra Modi On Women Power: এরমধ্যেই বাংলার ১৬ কোটি মহিলা ‘লাখপতি দিদি’ হয়েছেন, বারাসতে ‘লক্ষ্মীর ভান্ডারে’র পাল্টা ‘লাখপতি দিদি’র ঘোষণা মোদীর!
PM Narendra Modi On Women Power: "১ কোটি মহিলাকে লাখপতি দিদি বানাতে বিজেপি সফল। বাংলাতেও ১৬ লক্ষের বেশি মহিলা লাখপতি দিদি হয়ে গিয়েছেন।" তবে অভিযোগও করলেন, বাংলায় মহিলাদের সুবিধার জন্য কেন্দ্রীয় প্রকল্পের চালু হতে দেয় না রাজ্য সরকার।"
বারাসত: বারাসতের মঞ্চ থেকে নারীশক্তি জাগরণের কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এদিন তাঁর বক্তৃতার সিংহভাগই জুড়ে ছিল মহিলাদের কথা। আর তার আভাস মিলেছিল আগে ছিল। সভাস্থলের প্রথম সারিতেই ছিলেন সন্দেশখালির মহিলারা। আর মঞ্চে উঠতেই মোদী বাংলায় বললেন, ‘জয় মা কালী’, ‘জয় মা দুর্গা’। মোদী বললেন, ‘বাংলায় মহিলাদের ঝড় উঠবে… নারীশক্তির বিকাশ ঘটবে…’। ‘নারী শক্তি’, ‘নারী’, ‘মহিলাদের বিকাশ’, মোদীর ভাষণে বারবার ফিরে এসেছে শব্দবন্ধগুলো। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, লোকসভা নির্বাচনের আবহে বাংলায় মহিলাদের ভোট কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা বুঝিয়ে দিলেন মোদী স্বয়ং।
মোদীর মুখে এদিন উঠে এল রাসমণি, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, কল্পনা দত্ত, মাতঙ্গিনী হাজরাদের নাম। ভগিনী নিবেদিতা, সরলা দেবীর কথা বললেন। আর মহীয়সীদের কথা বলতে গিয়েই বাংলার শাসকদলকে বিঁধলেন মোদী। বললেন, “এখান তৃণমূল সরকার বাংলার মহিলাদের সম্মান দেয় না।”
তৃণমূলকে বিঁধে মোদী বলেন, “মা-বোনেদের সঙ্গে অত্যাচার করে তৃণমূল ঘোর পাপ করেছে। সন্দেশখালিতে যা যা হয়েছে, তাতে যে কারোর মাথা লজ্জায় ডুবে যাবে। কিন্তু এখানকার তৃণমূলের সরকারের আপনার দুঃখে কিছু যায় আসে না। বাংলার মহিলাদের দোষীদের বাঁচাতে পুরো শক্তি লাগিয়েছে। কিন্তু হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে ধাক্কা খেয়েছে রাজ্য। গরিব, দলিত আদিবাসী মহিলাদের সঙ্গে তৃণমূলের নেতারা জায়গায় অত্যাচার করছে, কিন্তু TMC সরকারকে আপনার অত্যাচারী নেতার ওপর ভরসা রয়েছে, বাংলার মা-বোনেদের ওপর ভরসা নেই।”
সন্দেশখালির ঝড় গোটা রাজ্যে, গোটা দেশে উঠবে বলেও মন্তব্য করেন মোদী। তিনি বলেন, “সন্দেশখালির মহিলারাই দেখিয়েছে, তাঁদের আওয়াজ শুনবে কেবল বিজেপি। তোলাবাজদের হয়ে কাজ করা তৃণমূল সরকার মেয়েদের কথা শুনবে না।” কেন্দ্র সরকার মহিলাদের সম্মান রক্ষা স্বার্থে ঠিক কী কী পদক্ষেপ করেছে, তারও বিবরণ দেন মোদী। বলেন, “যেখানে কেন্দ্র সরকার ধর্ষণের মতো অভিযোগের জন্য ফাঁসির সাজার ব্যবস্থা করেছে। মহিলারা যাতে অভিযোগ জানাতে পারে, তাই মহিলা হেল্পলাইন বানিয়েছে। কিন্তু এখানে এই সুবিধা লাগু হতে দিচ্ছে না।”
পাশাপাশি, জনধন যোজনা, পিএম আবাস যোজনা, মহিলাদের কৃষিক্ষেত্রে বিকাশের জন্য নমো ড্রোন যোজনা-সহ একাধিক সরকারি প্রকল্পের সুবিধায় মহিলারা কতটা এগিয়ে, তার পরিসংখ্যান দেন। পাশাপাশি এদিনের সভা থেকে নেতৃত্বদের উদ্দেশে বার্তা দিতেও দেখা যায়, এবারের নির্বাচনী প্রচারের ক্ষেত্রেও মহিলাদের প্রধান্য দিতে হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বাংলায় বরাবরই শাসকদল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভোটব্যাঙ্ক সুদৃঢ় করতে মহিলাদের প্রাধান্য দিয়েছে। ইতিমধ্যেই লক্ষ্মীর ভান্ডারের বরাদ্দ বাড়িয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সঙ্গে আশাকর্মীদেরও বেতন বৃদ্ধির ঘোষণা করেছেন। লোকসভা নির্বাচনের আগে মমতা-সরকার মহিলাদের ভোট সুরক্ষিত করতে যেখানে আর্থিক সুবিধা প্রদানের ওপর জোর দিচ্ছে, সেখানে বিজেপি জোর দিচ্ছে মহিলাদের নিরাপত্তা ও আর্থিক স্বাধীনতার ওপরই। আর সেই স্ট্র্যাটেজিই এদিন স্পষ্ট করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। স্পষ্ট বললেন, ‘আমাদের লক্ষ্য গ্রামের মহিলাদের লাখপতি দিদি বানানোর।’ রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের বক্তব্য, মমতা সরকারের ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্পের পাল্টা কেন্দ্রীয় ‘লাখপতি দিদি’র প্রচার করলেন মোদী। আর ঘোষণা করলেন, ইতিমধ্যেই বাংলার ১৬ কোটি মহিলা লাখপতি দিদি হয়েছেন। মোদী বলেন, “আমাদের প্রয়াস গ্রামের থাকা আপনাদের মতো মহিলাকে লাখপতি দিদি বানানো। গ্রামে গ্রামে এত লাখপতি দিদি যখন থাকবে, তাহলে গ্রামের ছবিটাই বদলে যাবে। ১ কোটি মহিলাকে লাখপতি দিদি বানাতে বিজেপি সফল। বাংলাতেও ১৬ লক্ষের বেশি মহিলা লাখপতি দিদি হয়ে গিয়েছেন।” তবে অভিযোগও করলেন, বাংলায় মহিলাদের সুবিধার জন্য কেন্দ্রীয় প্রকল্পের চালু হতে দেয় না রাজ্য সরকার।
যদিও মোদীর কটাক্ষের পরই মুখ খুলেছেন শাসকমন্ত্রী। নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, “তাঁর দুশ্চিন্তা থাকা উচিত, দেশের প্রত্যেকটি মহিলার ওপর, যাঁরা অত্যাচারিত হয়েছেন। সন্দেশখালির মহিলাদের সম্বন্ধে কথা বলেছেন। কিন্তু তাঁর এটাও উচিত ছিল মণিপুরের ওই ঘটনার পর সেখানে পৌঁছানোর। আপনার নেতারা কেউ রোহিঙ্গা বলবে, কেউ চোর বলবে, কেউ ফুফা বলবে, কেউ তাঁর শাড়ি নিয়ে বলবে! এটা কী হচ্ছে? এই মেকি কুমির কান্না না করলেই চলবে।”