সন্দেশখালি: শেষ পর্যন্ত পুলিশের জালে ধরা পড়লেন শেখ শাহজাহান। গত ৫ জানুয়ারি থেকে শেখ শাহজাহানের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। তিনি কোথায় আত্মগোপন করেছেন, তা নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হয়েছে। অবশেষে সন্দেশখালিতে ইডির টিম আক্রান্ত হওয়ার ৫৬ দিনের মাথায় বৃহস্পতিবার পুলিশের হাতে গ্রেফতার হলেন সন্দেশখালির ‘রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার’ শেখ শাহজাহান। কয়েকদিন আগে ‘ফুল অ্যাকশন মোডে’ সন্দেশখালিতে দেখা গিয়েছে রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমারকে। দুপুর থেকে সারা রাত সন্দেশখালিতে কাটিয়েছেন তিনি। কলকাতা হাইকোর্টও জানিয়ে দেয়, শাহজাহানকে গ্রেফতার করতে রাজ্য পুলিশের কোনও বাধা নেই। এরপরই পুলিশের জালে ধরা পড়লেন সন্দেশখালির বাঘ।
অভিযোগের অন্ত নেই শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে। প্রথমে নাম জড়ায় রেশন দুর্নীতি কাণ্ডে। জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক যখন হাসপাতালে ছিলেন, তখন মেয়েকে লেখা তাঁর একটি চিঠি ইডির হাতে এসেছে বলে দাবি। সেখান থেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে ইডি। সূত্রের দাবি, সেই চিঠিতেই ছিল এই শেখ শাহজাহানের নাম। গত ৫ জানুয়ারি ইডির টিম সন্দেশখালিতে তাঁর বাড়িতে তল্লাশি অভিযানে গিয়েছিল। শাহজাহানের বাড়িতে ঢোকার মুখে চরম জনরোষের মুখে পড়তে হয়েছিল ইডির অফিসারদের। আক্রান্ত হয়েছিল ইডি। রক্ত ঝরেছিল ইডির অফিসারদের। পরে বিবৃতি দিয়ে ইডি জানিয়েছিল, তারা সন্দেহ করছে শেখ শাহজাহান ও তার সাগরেদদের উস্কানিতেই ওই হামলা হয়েছিল অফিসারদের উপর।
এই গেল প্রথম পর্ব। এরপর গত দেড় মাসে সন্দেশখালির খাড়ি ভেড়ি দিয়ে বহু জল বয়ে গিয়েছে। এক সম্পূর্ণ ভিন্ন ছবি দেখা গিয়েছে সন্দেশখালিতে। তৈরি হয়েছে জনরোষ। লক্ষ্য শাহাজাহান। শেখ শাহজাহান ও তাঁর সাগরেদদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেন গ্রামবাসীরা। এককাট্টা হতে দেখা যায় গ্রামের মহিলা-পুরুষ-বৃদ্ধদের একাংশকে। কখনও অভিযোগ শাহজাহানের বিরুদ্ধে। কখনও তাঁর সাগরেদ উত্তম সর্দার, শিবু হাজরাদের বিরুদ্ধে। মূল অভিযোগ, শাসক দলের নামে দাপট দেখিয়ে এলাকায় জমি দখলের। চাষের জমি, খেলার মাঠ কিছুই বাদ যায়নি বলে অভিযোগ উঠে আসছে। বেআইনিভাবে জমি দখল করে মাছের ভেড়ি তৈরির অভিযোগ উঠছে। অভিযোগ কখনও উঠেছে শিবু, কখনও উত্তম, কখনও শাহজাহানের ভাই সিরাজউদ্দিনের বিরুদ্ধে। কিন্তু সব ক্ষেত্রেই ঘুরেফিরে উঠে এসেছে এদের ‘মাথা’ শেখ শাহজাহানের নাম।
যেদিন ইডির উপর হামলা হয়েছিল সন্দেশখালিতে, সেদিন থেকেই বেপাত্তা ছিলেন শেখ শাহজাহান। ইডির বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে, তারা শাহজাহানের মোবাইলের লোকেশন ট্র্যাক করে দেখেছেন। যখন ইডির উপর চড়াও হয়েছিল একদল উন্মত্ত জনতা, তখন শাহজাহানের মোবাইলের লোকশন ছিল ঘরের ভিতরেই। কিন্তু, এতদিন ধরে কিছুতেই শাহজাহানের নাগাল পাচ্ছিল না পুলিশ। প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল পুলিশের ভূমিকা নিয়েও। দিল্লি থেকে একের পর এক প্রতিনিধি দল এসেছে সন্দেশখালিতে। শাহজাহানের এই মেঘনাদের মতো লোকচক্ষুর আড়ালে বসে থাকা, বার বার অস্বস্তিতে ফেলেছিল পুলিশকে। অবশেষে ইডির উপর হামলার ৫৪ দিনের মাথায় ধরা পড়লেন সন্দেশখালির ‘বাঘ’।