বসিরহাট: সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকা। নিত্যনৈমিত্তিক কাজ, রান্না, খাওয়ার জন্য মিষ্টি জলের পুকুরই ভরসা গ্রামবাসীদের। আর সেই সুযোগকেই কাজে লাগিয়ে টাকা তছরূপের অভিযোগ উঠল। বসিরহাট মহকুমার সুন্দরবনের হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের সান্ডেলেরবিল গ্রাম পঞ্চায়েতের দক্ষিণ বাঁকড়া গ্রামের কালিন্দী নদীর বাঁধের পাশে রয়েছে একটি মিষ্টি জলের বিশাল পুকুর। আর সেই পুকুরের জলই স্থানীয় বাসিন্দারা নিত্তনৈমিত্তিক কাজে ব্যবহার করেন। তাতে একদিকে যেমন পানীয় জলের অভাব পূর্ণ হয়, অন্যদিকে নিত্তনৈমিত্তিক সমস্ত ধরনের সাংসারিক কাজে এই জল ব্যবহার করে থাকেন সুন্দরবনের বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষজন। আর এই পুকুরের একটি ঘাট রয়েছে জরাজীর্ণ অবস্থায়। ভেঙে-চুরে পড়ছে ইট, এমনকী মূল কাঠামোর থেকে অনেকটাই সরে গিয়েছে সেই ঘাট।
যার ফলে ব্যবহারযোগ্য অবস্থায় নেই সেই ঘাট। পুকুরটির ব্যক্তিগত মালিকানা রয়েছে স্থানীয় বাসিন্দা জাহাঙ্গির ঢালির। যেহেতু এই জলাশয়ের ব্যবহার এলাকার প্রায় কয়েক হাজার মানুষ করেন। তাই পঞ্চায়েত থেকে সেই ঘাট সংস্কার করার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল মাস তিনেক আগে। কিন্তু বাধ সেধেছে অন্য জায়গায়। পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে শামীম কনস্ট্রাকশন নামক এক সংস্থাকে টেন্ডার দেওয়া হয়েছিল এই ঘাট নির্মাণের জন্য। উক্ত সংস্থার মালিক শাহানুর গাজী, তিনি যথাসময়ে কাজও শুরু করে দিয়েছিলেন। ১৫ দিন কাজ করার পরে, পুকুরের জল সরানোর জন্য তিনি কিছুদিন সময় নিয়েছিলেন। তারপরে সেই নির্মাণ সংস্থার সদস্যরা যখন পুনরায় ঘাট নির্মাণ করতে যায় তখন তাঁরা জানতে পারেন সেই ঘাটের সংস্কার বাবদ বরাদ্দ অর্থ আগেই তুলে নেওয়া হয়েছে।
ওই সংস্থার মালিক শাহানুর গাজী অভিযোগ করছেন, পঞ্চায়েত প্রধানের সই করা টেন্ডার নোটিশ তাঁর কাছে থাকা সত্ত্বেও, অন্য একটি নির্মাণ সংস্থা পঞ্চায়েত থেকে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ টাকা তুলে নিয়েছে। তিনি জানান, ‘জলি কনস্ট্রাকশনের মালিক ইকবাল আহমেদ গোপনে পঞ্চায়েত থেকে প্রায় ৩ লক্ষ ০৩ হাজার ২৪৪ টাকা তুলে নিয়েছেন। অথচ ঘাটের কাজ একফোঁটাও হয়নি।’ এই ঘটনার জানার পর সরব হয়েছেন গ্রামবাসীরা। সান্ডেলেরবিল গ্রাম পঞ্চায়েতের শিল্প ও পরিকাঠামো উপ সমিতির সঞ্চালক মিতা মণ্ডল বিবি ঘটনাটি জানতে পেরে সরব হয়েছেন। পাশাপাশি তিনি হিঙ্গলগঞ্জের সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক ও থানাকে লিখিত ভাবে এই ঘটনার অভিযোগ দায়ের করেছেন।
যদিও, এ ব্যাপারে সান্ডেলেরবিল গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান জয়নাল আবেদীন গাজী জানান, এরকম ধরনের ঘটনা ঘটে থাকলে পঞ্চায়েতের তরফে তদন্ত করা হবে এবং দোষী সাব্যস্ত হলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ‘ঘাটে উঠতে-নামতে যথেষ্ট কষ্ট পোহাতে হয় তাদের। প্রায়শই ছোটখাট দুর্ঘটনা ঘটে, বিশেষ করে সমস্যা হয় বর্ষাকালে। একেতো ভাঙা, তার উপর পিচ্ছিল হয়ে যাওয়ায় মহিলারা অনেক সময় পড়েও যান। তারা চাইছেন দ্রুত সমস্যার সমাধান হোক।’ বিষয়টিতে জলি নির্মাণ সংস্থার কোনও প্রতিনিধির প্রতিক্রিয়া মেলেনি।