উত্তর ২৪ পরগনা: ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের আগে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন অর্জুন সিং। টিকিট পেয়ে ভোটে জয়। অর্জুনের বিজেপিতে যোগদান, ব্যারাকপুর লোকসভার সাংসদ হওয়া এবং পরবর্তীকালে একাধিকবার এই এলাকায় রাজনৈতিক উত্তেজনার অভিযোগ। প্রতিটি ক্ষেত্রেই শাসকদলের নিশানায় ছিলেন ভাটপাড়ার অর্জুন। এমনকী ভাটপাড়া বিধানসভার উপনির্বাচনেও মদন মিত্রকে তৃণমূলের প্রার্থী করা, অর্জুন-পুত্র পবনের কাছে হেরে যাওয়া নিয়েও অর্জুনকে কম কথা শুনতে হয়নি। তবে এখন সেই অর্জুনেরই ‘ঘরওয়াপসি’ হয়েছে। তৃণমূলে ফিরেছেন। তাঁর ফিরে আসার এক সপ্তাহের মধ্যে ব্যারাকপুরের শ্যামনগরে সভা করেছেন স্বয়ং তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। অনেকেরই মনে হয়েছিল, এত তাড়াতাড়ি অর্জুনের এলাকায় অভিষেক আসছেন, তবে কি বিশেষ বার্তা থাকবে? সোমবার সেই কৌতূহলের নিরসন করলেন অভিষেক নিজেই। ঘরে ফেরা নেতা কিংবা ফিরতে চাওয়া নেতাদের জন্য এদিনের সভা থেকে রইল অভিষেকের কড়া বার্তা। ঘরওয়াপসির জন্য দরজা খোলা হবে কি হবে না তা জনতাই ঠিক করবেন। কারণ, এ দলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক নম্বরে। দু’ নম্বরে রয়েছেন দলের কর্মী-সমর্থকরা।
এই মুহূর্তে বাংলার রাজনীতির অলিন্দে জোর গুঞ্জন, বিজেপির অন্তত তিনজন বিধায়ক, তিনজন সাংসদ তৃণমূলে যোগ দিতে পারেন। উল্লেখযোগ্য এর মধ্যে দুই সাংসদ আবার তৃণমূল থেকে একটা সময় বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। এদিন ভরা সভায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এখনও অনেক গদ্দার, মীরজাফর, দু’নম্বরিরা লাইনে আছে। আমি আপনাদের বলছি, দরজা বন্ধ করে রেখেছি। আমার কথা বোঝেন তো? আমি আছি বলে একটু চাপে আছে। দরজা বন্ধ।” এরপরই জনতার রায় নেন তৃণমূলের ‘সেকেন্ড-ইন-কমান্ড’। বলেন, “আপনারা কি চান দরজা খুলি, নাকি বন্ধ রাখব? আমরা দরজা খুলে দিলে ওই দলটাই উঠে যাবে। এই যে বড় বড় ভাষণ দেয় সব। এই যে কথায় কথায় বলে সবথেকে বড় দল। তা ছোট্ট দলে নাম লেখানোর জন্য বড় দল থেকে সবাই লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন, বড় দলের লোকেরা কী করছেন?”
অভিষেকের দাবি, তালিকায় এমন কিছু নাম রয়েছে যা বঙ্গ রাজনীতিতে হইচই ফেলার জন্য যথেষ্ট। অর্জুন সিং বিজেপিতে থাকাকালীন বারবার ডায়মন্ড হারবারের সাংসদের নিশানায় এলেও, এদিন খুব একটা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়নি। শুধু বলেছেন, “এই যে অর্জুন সিং ফিরে এসেছেন, কারণ একটাই, তিনি বুঝেছেন বিজেপিতে যাওয়া, বাংলার জন্য খাল কেটে কুমীর আনা।” ২০১৯ সালের এই ৩০ মে নৈহাটিতে এক পথসভা করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ব্যারাকপুর বিজেপির দখলে যাওয়ার পর তৃণমূলের লোকজন হিংসার শিকার হন বলে অভিযোগ উঠেছিল। সেই সময় তৃণমূল সুপ্রিমো বলে এসেছিলেন, তাঁর একজনও কর্মী-সমর্থক ঘরের বাইরে থাকবেন না। সকলকে ফেরানো হবে। বিজেপি ধরাশায়ী হবে। রাজনৈতিক মহল বলছে, অর্জুন সিং তৃণমূলে ফেরার পর বিজেপির মাটি আলগা হতে শুরু করেছে সেখানে।
এদিন অভিষেকের গলাতেও সেই প্রত্যয়ই শোনা গেল, “তিন বছর আগে এই ৩০ মে ঘরছাড়াদের ঘরে ফেরানোর ডাক দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ বিজেপির দর্প চূর্ণ বিচূর্ণ হয়েছে। বিজেপি ছেড়ে সকলেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে চলে আসছেন। তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীরাই তৃণমূলের সবথেকে বড় সম্পদ। বিজেপির কাছে অর্থ আছে, এজেন্সি আছে, যা পারছে তাই করছে। কিন্তু একটা জিনিস বিজেপির কাছে নেই, তা হল কর্মী। যে দল ভেবেছিল বারাকপুরকে অশান্ত করবে আজ তারাই ভেঙে চুরমার।” আরও অনেকেই ফিরবেন তৃণমূলে, আত্মবিশ্বাসী অভিষেক। তবে তাঁদের জন্য ‘বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ’, “আমি জয় হিন্দ, জয় বাংলার রাজনীতিতে বিশ্বাস করি। জয় শ্রীরামের রাজনীতিতে নই। যদি কেউ তৃণমূল কংগ্রেসে ঢোকেন, আমরা তৃণমূলের আদর্শ বদলাব না। তাঁকে আদর্শ পাল্টে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শে উজ্জীবিত হতে হবে।”