উত্তর ২৪ পরগনা: ভোট পরবর্তী সন্ত্রাস (Post Poll Violence) মামলায় ইতিমধ্যেই সিবিআইয়ের হাতে ন্যস্ত হয়েছে তদন্তভার। সেই মোতাবেক, বৃহস্পতিবার, ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রের ভাটপাড়ার ১ নম্বর ওয়ার্ডের নিহত বিজেপি (BJP) কর্মী জয়প্রকাশ যাদবের বাড়িতে আসেন সিবিআই আধিকারিকরা। গত ৬জুন বোমাবাজির জেরে মৃত্যু হয় ওই বিজেপি কর্মীর।
এদিন, নিজস্ব ফরেনসিক দল ও চিত্রগ্রাহকদের সঙ্গে নিয়ে নিহত বিজেপি কর্মীর বাড়িতে আসেন সিবিআই কর্তারা। কথা বলেন মৃতের পরিবারের সঙ্গেও। ঘটনাস্থলে পৌঁছে গোটা এলাকা পরিদর্শন করেন তাঁরা। জয়প্রকাশের বাড়ির দেওয়ালে বোমার দাগ থেকে শুরু করে সম্ভাব্য সমস্ত খুঁটিনাটি তথ্য় প্রমাণ এদিন একত্রিত করেন তদন্তকারীরা। পাশাপাশি এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের থেকেও খোঁজখবর নেন। সিবিআই সূত্রে খবর, নিহতের পরিবারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাঁদের বয়ান ছাড়াও অন্যান্য তথ্য় প্রমাণ জোগাড় করার চেষ্টা চলছে।
গত ৬ জুন, ভাটপাড়া এক নম্বর ওয়ার্ডের মুক্তারপুর এলাকায় বিজেপি কর্মী জয়প্রকাশ যাদবকে লক্ষ্য করে বোমাবাজি হয়। পায়ে হেঁটে বাড়িতে এসে তাঁকে বোমা ছুড়ে পালিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। বোমার স্পিলিন্টারে মাথা ফেটে যায় মৃত জয় প্রকাশের মায়ের। তাঁকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে ভাটপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে। কিন্তু চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান বারাকপুরের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিং। তিনি বলেন, “দলের সক্রিয় কর্মী ছিলেন জয় প্রকাশ যাদব। একজন কার্যকর্তা, গরিব মানুষ। তাঁকেই তিন জন তৃণমূলের লোক মাথার ওপর বোমা মেরে চলে যায়। বাংলার যে কী হাল হয়েছে তা তৃণমূল দেখাচ্ছে। যে অবস্থা চলছে মানুষ আর বাঁচতে পারবে না। মুখ্যমন্ত্রী ভাষণ দিচ্ছেন শান্তি ফিরবে। আর তাঁর দলের নেতারা প্রকাশ্যে খুন করে বেড়াচ্ছে।” যদিও বিজেপির এই অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূল। এলাকায় মোতায়েন করা হয় বিশাল পুলিশ বাহিনী।
পরবর্তীতে মৃত জয়প্রকাশের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন বিজেপি নেতৃত্ব। মৃত বিজেপি (BJP) কর্মীর বাড়িতে আসেন বিধায়ক পবন সিং,বিজেপির রাজ্য মহিলা সম্পাদিকা ফাল্গুনী পাত্র এবং ব্যারাকাপুর জেলা সাংগঠনিক সভাপতি রবিন্দ্র নাথ ভট্টাচার্য। মৃত জয়প্রকাশের বাবার কথায়, “ওদিন, আমাদের বাঁচাতে গিয়ে ও মরল। প্রথমে ওকে কিছুজন ডাকতে আসে। আমরা কথা বলতে গেলে দেয়নি। নিজেই এগিয়ে গেল। কিছু একটা গোলমাল হচ্ছে বুঝতে পেরে ডাক দিলাম। ‘ও কিছু না’ বলে যেই ও ঘুরল অমনি বোমা মেরে দিল। প্রাণে বাঁচল না ছেলেটা।” ঘটনায় লাল সিং এবং চন্দন সিং নামে দুই দুষ্কৃতীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন জয়প্রকাশের পরিবার।
শুধু জয়প্রকাশ নন, রাজ্যের সমস্ত জেলায় নিহত বিজেপি কর্মীদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন সিবিআই আধিকারিকরা। রাজ্যে ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের (NHRC) সুপারিশকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছিল রাজনৈতিক তরজা। পক্ষপাতিত্ব করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছিল তৃণমূল। কিন্তু, সেই মামলায় জোর ধাক্কা খেয়েছে রাজ্য সরকার। ধর্ষণ ও খুনের ঘটনাগুলির তদন্তভার তুলে দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই-এর হাতে। অন্যদিকে, বাকি হিংসার ঘটনার তদন্তের জন্য রাজ্য পুলিশের তিন সদস্যের একটি সিট গঠন করা হয়েছে। দুই দলকেই আগামী ৬ সপ্তাহের মধ্যে তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট জমা দিতে বলেছে আদালত।
রাজ্য সরকারের দেওয়া নিরাপত্তার উপর বিন্দুমাত্র ভরসা নেই কেন্দ্রীয় সরকারের। যে কারণে ভোট পরবর্তী হিংসার ঘটনায় তদন্ত করতে আসা সিবিআই-এর তদন্তকারী দলকে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। সূত্রের খবর, চার সিবিআই-এর নিরাপত্তায় ৪ কোম্পানি আধাসেনা মোতায়েন করা হয়েছে। সিবিআই-এর চারটি দলকে চারভাগে বিভক্ত হয়ে নিরাপত্তা প্রদান করবেন আধাসেনা বাহিনী। এর মধ্যে তিনটি কোম্পানি থাকবে দক্ষিণবঙ্গে, একটি যাবে উত্তরে। ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় দিল্লিতে সিবিআই-এর সদর দফতরে ৯টি এফআইআর রুজু করা হয়েছে। অর্থাত্ ৯টি এফআইআর-এর ভিত্তিতেই তদন্ত শুরু করলেন গোয়েন্দারা। এদিন, নিহত জয়রপ্রকাশ যাদব ছাড়াও কাঁকুড়গাছিতে মৃত বিজেপি কর্মী অভিজিত্ সরকারের বাড়িতেও যান সিবিআই কর্তারা। আরও পড়ুন: ‘এটা কী সংস্কৃতি!’ দিলীপের কাঠগড়ায় অনুব্রতর ‘গুন্ডাবাহিনী’