উত্তর ২৪ পরগনা: কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত যখন চরমে তখন দোসর যেন রাজ্য়-রাজ্য়পাল সংঘাত। ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়কে টুইট বিদ্ধ করেছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। পাশাপাশি, রাজ্য়ের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্নও তুলেছেন রাজ্য়পাল। সম্প্রতি, দিল্লি গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গেও বৈঠক সেরেছেন জগদীপ। নিজেই টুইট করে জানিয়েছেন সেই খবর। রাজ্যপালের এ হেন আচরণে ক্ষুব্ধ খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকী, রাজ্যপালের অপসারণ চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে তিনবার চিঠিও লিখেছেন মমতা এ কথা নিজেই জানিয়েছেন সাংবাদিক বৈঠকে। এ বার তৃণমূলের নিশানায় খোদ রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়।
রবিবার, বনগাঁ মহাকুমা আইএনটিটিইউসি রক্তদান শিবিরে এসে রাজ্যপালকে ‘পাগল’বলে তোপ দাগলেন সর্বভারতীয় আইএনটিটিইউসি সভাপতি দোলা সেন। পাশাপাশি, রাজ্য আইএনটিটিইউসি সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্য়পালকে সরাসরি ‘বিজেপির মুখপাত্র’ বলে নিশানা করেন।
এদিন, আইএনটিটিইউসি নেত্রী বলেন, “রাজ্যপালকে নিয়ে একটা কথাই বলতে ইচ্ছে করে, পাগলে কী না বলে ডট ডট ডট বলে একটা কথা আছে না…সেইটা। আসল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই জয় ওদের গায়ে লাগছে। কী করবে বুঝতে পারছে না। তাই ভুলভাল বকছে। বকুক একটু। ওমন কত বকবে। আমাদের কাজ উন্নয়ন আরও উন্নয়ন করা। আমরা সেই দিকেই নজর দেব।”
রক্তদান শিবির প্রসঙ্গে দোলা আরও বলেন, “কেন্দ্র সরকারের আত্মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে তামিলনাড়ুর ২৪০ টি আসনে এক দফায় ভোট হয়। আর বাংলার ২৯৪ টি আসনে আট দফায় ভোট হয়। ফলে নির্বাচন আবহে তিন মাস বন্ধ ছিল রক্তদান শিবির। থ্য়ালাসেমিয়া রোগী থেকে শুরু করে অনেকের রক্তের প্রয়োজন। তাদের কথা চিন্তা করেই রক্তদান শিবির। শুধু বনগাঁতে নয়, সর্বত্রই আইএনটিটিইউসির পক্ষ থেকে এই শিবির আয়োজন করা হচ্ছে।”
এই রক্তদান শিবিরেই উপস্থিত ছিলেন রাজ্য আইএনটিটিইউসির সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্য়োপাধ্যায়। তিনি বলেন, “রাজ্যপাল যেভাবে দিল্লি-কলকাতা করছেন মনে হচ্ছে ওঁ যেন বিজেপির মুখপাত্র। বাংলা ভাগের ধারাবাহিক চক্রান্ত করে চলেছে বিজেপি। স্টক একচেঞ্জ অন্য জায়গায় সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এইসব চক্রান্ত করা হচ্ছে। বাংলার মানুষ বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির মুখে ঝামা ঘষে দিয়েছে সেটা না মানতে পেরেই চক্রান্ত করা হচ্ছে। মানুষই এর জবাব দেবেন।”
উল্লেখ্য, কেবল দোলা সেন বা ঋতব্রত নন, সম্প্রতি রাজ্যপালের দিল্লি সফর নিয়ে মুখ খুলেছেন বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তিনি বলেছেন, ““রাজ্যপালের যা লেভেল না, তাতে ওঁর এখানে থাকাই উচিত নয়। দিল্লি কেন, গোটা ভারতবর্ষও কম পড়বে ওঁর জন্য। ওঁ বরং, আমেরিকায় গিয়ে বাইডেন সাহেবকে বলুন বা রাষ্ট্রপুঞ্জে গিয়ে অভিযোগ করুন। বিজেপি তো এখনও ওঁকে রাজ্য সভাপতি করেনি, তাহলে ওঁর এত ইনসিকিউরিটি কেন?ভোটের পর সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে আমাদের ছেলেরা। সম্পূর্ণ মিথ্য়া কথা বলছেন রাজ্যপাল।”
নির্বাচন আবহেও একবার রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের অপসারণ চেয়ে রাষ্ট্রপতির দ্বারস্থ হয়েছিল তৃণমূল। নির্বাচনের পর থেকে শুরু করে নারদ মামলায়, সর্বত্রই রাজ্যপালের ‘সংবিধানমান্য’ টুইট বিদ্ধ করেছে রাজ্য় সরকারকে। ফলে, রাজ্য়-রাজ্যপাল সংঘাত যে নয়া মোড় নিয়েছে তা অস্বীকার করতে পারছে না রাজনৈতিক মহল।
আরও পড়ুন: ‘রাজ্যপাল রাষ্ট্রপুঞ্জে গিয়ে অভিযোগ করুন’, বিস্ফোরক বনমন্ত্রী