বসিরহাট: ২০১৭ সালে ব্রেন স্ট্রোকে মারা যান সরকারি দফতরের গাড়ির চালক উত্তর ২৪ পরগনার বাদুড়িয়ার গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর তাঁর পেনশনেই সংসার চলছিল স্ত্রী ও ছেলের। এতগুলো বছর সব ঠিকঠাক চললেও এ মাসে কোটি টাকা ধাক্কায় বেসামাল পরিবার। অভিযোগ, অ্যাকাউন্টে আচমকাই প্রায় দেড় কোটি টাকা ক্রেডিট হয়। এরপরই অ্যাকাউন্টে লেনদেনই বন্ধ করে দিয়েছে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। বিএসএনএলে কাজ করতেন গৌতমবাবু। স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ায় তাঁর অ্যাকাউন্ট ছিল। সেখানেই পেনশনের টাকা ঢোকে এখন। স্ত্রী সেখান থেকে টাকা তোলেন। অভিযোগ, চলতি মাসে পেনশনের টাকা তুলতে এটিএমে গিয়েছিলেন লক্ষ্মীদেবী। দেখেন, টাকা তোলা যাচ্ছে না। এদিকে একটি স্লিপ বেরিয়ে আসে, তাতে ১ কোটি ৫৭ লক্ষ টাকা ক্রেডিট হয়েছে অ্যাকাউন্টে। এই স্লিপ দেখে তো চোখ কপালে ওঠে তাঁর। ছোটেন ব্যাঙ্কে। এরপরই জানা যায়, জটিলতা তৈরি হয়েছে তাঁর অ্যাকাউন্ট ঘিরে।
বসিরহাটের বাদুড়িয়া পুরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্বপাড়ার ঘটনা। গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় মারা যাওয়ার পর তাঁর স্ত্রী ৪৭ বছর বয়সী লক্ষ্মী বন্দ্যোপাধ্যায় নিয়মিত পেনশন তোলেন। তিনি বলেন, “এই মাসে পেনশন তুলতে এটিএমে যাই। গিয়ে দেখি কোনও টাকা উঠছে না অ্যাকাউন্ট থেকে। একটি স্লিপ বেরিয়ে আসে। তাতে দেখা যায় অ্যাকাউন্টে ১ কোটি ৫৭ লক্ষ টাকা ঢুকেছে। পরে এসবিআইয়ের বাদুড়িয়া শাখার ম্যানেজারের কাছে যাই। উনি সবই দেখে বললেন কেওয়াইসি জমা দিতে। বলেন বেঙ্গালুরু থেকে যা হওয়ার হয়েছে, আমরা কিছু করতে পারব না। জানান, ওখান থেকে দেখা হচ্ছে। এখানকার শাখার কিছু করার নেই বলেও জানান তিনি।” এরপর ব্যাঙ্কে কেওয়াইসি জমা দেওয়ার পাশাপাশি থানাতেও যান তিনি।
লক্ষ্মীদেবী বলেন, অ্যাকাউন্টটিতে কোনও কাজ হচ্ছে। তাঁর জমানো টাকাও তুলতে পারছেন না। এদিকে তিনি অসুস্থ। মাসে ৪-৫ হাজার টাকার ওষুধই লাগে। সংসারে কিছুটা চাপ পড়ে গিয়েছে এর জেরে। ছেলে পার্থ জানান, তিনি এখনও চাকরি করেন না। মায়ের পেনশনেই দু’জনের সংসার চলে।
পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “ব্যাঙ্ক বলছে আমাদের কিছু করার নেই। যারা অ্যাকাউন্টে কাজ স্থগিত রেখেছে তারাই চালু করে দেবে। বলল কেওয়াইসি পাঠাবে আবার। ব্যাঙ্কে ইমেলও করতে বলেছে। ওরা বলছে এখান থেকে কিছু করার নেই বলেও জানান। আমাদের অ্যাকাউন্টে যেটুকু টাকা ছিল সেটাও তুলতে পারছি না। মায়ের পেনশনে আমাদের সংসার চলে। খুবই সমস্যায় পড়েছি আমরা।” এই টাকা কোথা থেকে এল, কেনই বা লক্ষ্মীদেবীর অ্যাকাউন্টে ঢুকল তা খতিয়ে দেখছে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। যদিও এ নিয়ে তারা কোনও মন্তব্য করেনি। ঘটনাটি খতিয়ে দেখছে বাদুড়িয়া থানার পুলিশও।