উত্তর ২৪ পরগনা: ‘১৯ এর লোকসভা নির্বাচন, তারপর একুশের বিধানসভা মহারণ। গত দুটি ভোটে মতুয়া গড়ে কার্যত এক চেটিয়া দাপট বজায় রেখেছিল গেরুয়া শিবির। কিন্তু এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে কিছুটা হলেও পায়ের তলার মাটি নরম হয়েছে। উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁয় বিজেপির ভোট ব্যাঙ্ক ছিল সুদৃঢ়। নাগরিকত্ব আইন চালু করে মতুয়াদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে, এই আশ্বাস দিয়েই মতুয়াদের মন জয় করে নিয়েছিলেন গেরুয়া নেতৃত্ব। কিন্তু এবার মতুয়াদের ভোটেও রক্তক্ষরণ হয়েছে।
বনগাঁ মহকুমার ৩৮টি পঞ্চায়েতের মোট আসন ৯২৪টি। গণনা শেষ না হলেও, এখনও পর্যন্ত যা ট্রেন্ড তাতে তৃণমূল পেয়েছে ২৬৪টি আসন বিজেপির ঝুলিতে ১২৬। বনগাঁ এলাকার মধ্য়েও মতুয়া সম্প্রদায়ের বেশিরভাগ বাসিন্দাই থাকেন বাগদা এলাকায়। সেখানে পঞ্চায়েতের ২৪০টি আসনের মধ্যে তৃণমূল পেয়েছে ৭০টি ও বিজেপি ৫৪টি।
দক্ষিণবঙ্গের নদিয়া ও উত্তর ২৪ পরগনা ছাড়াও উত্তরবঙ্গের বেশ কিছু এলাকায় মতুয়াদের ভোট ব্যাঙ্ক ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায়। এর মধ্যে দক্ষিণবঙ্গের বনগাঁ উল্লেখ্য। কারণ এখান থেকেই প্রতিনিধিত্ব করেন কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর। এবার শান্তনু ঠাকুরের নিজের বুথেই পরাজিত বিজেপি।
যদি কয়েক বছর পিছিয়ে গিয়ে দেখতে হয়, তাহলে বলা যায়, ২০০৮ সালেই বামেদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন মতুয়ারা। ২০১০ সাল থেকে আস্তে আস্তে সেখানে ঘাসফুলের রোপণ হতে থাকে। ২০১১-র নির্বাচনে মতুয়াদের সিংহভাগ যায় তৃণমূলের ঝুলিতে।
কিন্তু তার মাঝেই আস্তে আস্তে শুরু হয় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর ঠাকুরবাড়িতে আনাগোনা। ২০১৯ সাল থেকে খেলা ঘুরতে শুরু করে। বিজেপির ঝুলি পূরণ করে দেন মতুয়ারা। তারপর একুশের তৃণমূলের ল্যান্ডস্লাইড ভিক্ট্রিতেও রানাঘাট ও বনগাঁ দুই লোকসভা দখলে রেখেছিল বিজেপি। কিন্তু হঠাৎ এবারে কেন বিজেপির রক্তবিক্ষরণ? কারণ কী হতে পারে?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, হতে পারে নাগরিকত্বের অধিকারের যে আশ্বাস দিয়ে বিজেপি মতুয়াদের মন জয় করেছিল, তা পূরণ হয়নি। তাতেই হয়তো মন ঘুরছে। আর তাতে অনুঘটকের কাজ করেছে, বারবার মতুয়া এলাকায় তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কম্যান্ড অভিষেকের আগমন। ঠাকুরবাড়ির মন্দিরে ঢোকা নিয়ে যে অশান্তি হয়েছিল, সেটাও অনুঘটকের কাজ করেছিল।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর অবশ্য এখনও বলছেন মতুয়ারা তাঁর সঙ্গেই রয়েছেন। শান্তনু ঠাকুরের বক্তব্য, “কোন রাজ্যে বাস করছি, এটা আমার কাছে বিস্ময়। নৈরাজ্যের বাতাবরণ। আমরা হাইকোর্টে রিট পিটিশনে যাব।” অর্থাৎ মতুয়াদের ভোটও লুঠ হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।