Khardah: ৪৪ বছর ধরে শাসক দলের প্রার্থী ‘বহিরাগত’! সাংগঠনিক দুর্বলতা, নাকি অন্য কিছু?

Khardah Constituency: খড়দহে প্রার্থীর 'বহিরাগত' আখ্যাটা এই প্রথম নয়। কয়েক দশক আগে বাম জমানায় অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত এবং পরে তৃণমূলের টিকিটে প্রার্থী হয়ে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী হওয়া অমিত মিত্র- সকলকেই 'বহিরাগত' বলে আখ্যা দিয়েছিল বিরোধীরা। এ নিয়ে কি খড়দহবাসীর মনেও হতাশা ছিল? হয়ত বা ছিল।

Khardah: ৪৪ বছর ধরে শাসক দলের প্রার্থী 'বহিরাগত'! সাংগঠনিক দুর্বলতা, নাকি অন্য কিছু?
কেন খড়দহে প্রার্থী হন 'বহিরাগতরা'?
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Oct 18, 2021 | 5:16 PM

খড়দহ: শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়কে (Sovandeb Chattopadhyay) ‘বহিরাগত’ বলে আখ্যা দিয়েছেন ওই কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী জয় সাহা (Joy Saha)। তাঁর আক্রমণ ছিল, “শোভনবাবু হয়তো অনেক বার জিততে পারেন, কিন্তু খড়দহের মানুষের কাছে তিনি ‘বহিরাগত’। খড়দহ থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে থাকেন। আজকে এই কেন্দ্র থেকে জিতবেন এবং ফিরে যাবেন। আর মানুষ অ্যাপোয়েন্টমেন্ট নিয়েও তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারবেন না। কিন্তু আমি এক কথায় এখানকার ভূমিপুত্র, দিন রাত সবসময় মানুষ আমাকে তাঁদের কাছে পাবেন।”

যদিও খড়দহে প্রার্থীর ‘বহিরাগত’ আখ্যাটা এই প্রথম নয়। কয়েক দশক আগে বাম জমানায় অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত এবং পরে তৃণমূলের টিকিটে প্রার্থী হয়ে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী হওয়া অমিত মিত্র- সকলকেই ‘বহিরাগত’ বলে আখ্যা দিয়েছিল বিরোধীরা। এ নিয়ে কি খড়দহবাসীর মনেও হতাশা ছিল? হয়ত বা ছিল। কিন্তু কেন ‘বহিরাগত’ প্রার্থীর উপরই নির্ভর করে রাজ্যের শাসক দল?

টানা ৪৪ বছর শাসক দলের খড়দহের প্রাথীরা ‘বহিরাগত’। ৩৪ বছরের বাম জমানা থেকে তৃণমূলের ১০ বছর, মোট ৪৪ বছর ধরে খড়দহ বিধানসভার প্রাথী কিন্তু কলকাতা অথবা অন্য জায়গার বাসিন্দা। দীর্ঘ ৪৪ বছর পরে শাসক দলের তরফে খড়দহের মানুষকেই সেখানকার প্রার্থী করা হয়েছিল। সেই “ঘরের লোক” কাজল সিনহা (Kajal Sinha) প্রার্থী হয়ে ২৮ হাজারের বেশি ভোটে জয়লাভ করেছিলেন। কিন্ত কোভিডে আক্রান্ত হয়ে ভোটের ফলপ্রকাশের আগেই মারা গেলেন তিনি!

খড়দহের মানুষ কাজল সিনহা-কে বিধায়ক হিসেবে খুব করে চেয়েছিলেন। তাই বিজেপি, সিপিএম এর সঙ্গে শাসক দলের ত্রিমুখী লড়াইয়ের মধ্যেও কাজল সিনহা ২৮ হাজার ভোটে জয়ী হয়েছিলেন। একদিকে কাজল সিনহা ‘ভূমিপুত্র প্রার্থী’, অপরদিকে কাজলবাবুর দারুণ সংগঠনিক ভিত্তি, এটাই দলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন জয় করেছিল। তাই এই প্রথম বার কোনও হেভিওয়েট প্রাথী না দিয়ে কাজলে আস্থাশীল ছিল শাসক দল। কিন্তু কাজলবাবুর আকস্মিক প্রয়াণে সেই হেভিওয়েট প্রার্থীর ছকে আস্থাশীল হতে হল শাসক দলকে।

এবার উপনির্বাচনে খড়দহের প্রার্থী তৃণমূলের প্রথম বিধায়ক, দুঁদে নেতা শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু সবশেষে যে হেভিওয়েট প্রার্থীতেই আস্থা রাখে শাসক দল, এটা কি সাংগঠনিক দুর্বলতা? খড়দহের ট্র্যাডিশনই কি হেভিওয়েট প্রাথী দেওয়া?

এর উত্তরে প্র‍য়াত কাজল সিনহার স্ত্রী, খড়দহের তৃণমূলের মহিলা প্রেসিডেন্ট নন্দিতা সিনহা অবশ্য তা একরকম স্বীকারই করে নিয়েছেন। তিনি জানান, খড়দহের সাংগঠনিক দুর্বলতা তাঁর স্বামীই কাটিয়ে তুলে দলের কাছে দক্ষ সাংগঠক হিসেবে আস্থা অর্জন করেছিলেন। তাই প্রথমবার শাসক দল তাঁকে প্রার্থীর মর্যাদা দিয়েছিল। এবং তিনি তা প্রমাণও করেছেন ভোটের ফল দিয়ে। তাহলে এখন প্রশ্ন উঠছে, কাজল সিনহার মৃত্যুর পর খড়দহে কি আবার তৃণমূলের সাংগঠনিক ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ল? আর সেই দুর্বলতা ঠেকাতে শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের মতো হেভিওয়েট প্রার্থীর দিয়ে দলকে চাঙ্গা করতে হল তৃণমূলকে?

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নন্দীগ্রামে হেরে যাবার পর শোভন দেব চট্টোপাধ্যায় তাঁর ভবানীপুর কেন্দ্র থেকে পদত্যাগ করে নেত্রীকে ফের ভোটে দাঁড়াবার জায়গা ছেড়ে দেন। তার পর থেকেই খড়দহের মানুষের সঙ্গে প্রায় প্রতিদিন এসে জনসংযোগ শুরু করেন এই বয়সেও। তবে খড়দহের প্রার্থী কেন বারে বারে কলকাতার, তা নিয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে শোভনদেব ঘুরিয়ে ব্যাখ্যা দেন। বলেন, “খড়দহের মানুষের কথা বলব, খড়দহের উন্নয়ন করব, খড়দহের মানুষ আমাকে সব সময় পাবেন।”

আর ‘বহিরাগত’ আখ্যা উড়িয়ে দিয়ে তিনি বলেন, খড়দহের বিভিন্ন কারখানার ট্রেড ইউনিয়নে একসময় রাজনীতি করেছেন। তাই তিনি কী করে বহিরাগত। দলের সাংসদ সৌগত রায়ও একই সুরে জানান, শোভনদেব দীর্ঘ দিনের নেতা। দলের সিনিয়র তিনি। বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়ন সঙ্গে যুক্ত থাকার সুবাদে খড়দহের সঙ্গে অনেক দিনের সম্পর্ক তাঁর। তাই দল তাঁকে এখানকার প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি যোগ করেন, এর আগে অসীম দাশগুপ্ত-ও বাইরের লোক ছিলেন। তিনি জিতেছেন। অমিত মিত্র-ও বাইরের ছিলেন, তিনিও জিতেছেন। তবে শোভনদেব খুব ‘ডায়ানামিক’, উনি-ও জিতবেন।

যদিও বিজেপির প্রার্থী জয় সাহার দাবি, মানুষ তাঁকেই বেছে নেবে এবং জয়ের রাস্তা দেখাবেন, যিনি ভূমিপুত্র। আবার সিপিএম প্রার্থী কলকাতার না হলেও তিনি-ও বেলঘড়িয়ার বাদিন্দা। তিনি এবার নির্বাচনেও প্রার্থী ছিলেন। ফের আবার বাম-কংগ্রেসের পক্ষ থেকে প্রার্থী হয়েছেন গার্গী চট্টোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, বিধায়ক রাজ্যে যে কোনও প্রান্ত থেকেই দাঁড়াতে পারেন। তিনি সবার কথা বিধানসভায় গিয়ে বলবেন। খড়দহ একটা ঐতিহ্যশালী জায়গা। একটা গণ আন্দোলনের জায়গা। তাই-ই এখানে দল হেভিওয়েটদের প্রার্থী করে।

এদিকে খড়দহের বিধানসভার প্রার্থী ভূমিপুত্র হওয়া নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যেও বিভিন্ন রকম প্রতিক্রিয়া। কেউ বলছেন, ‘কাজলদার মতো ভূমিপুত্র প্রার্থী (তৃণমূলের) হলে ভাল হত’। আবার কেউ বলছেন, ‘শোভনদেবকে কাজলদার মতো পাওয়া যাবে না’। এই আবহে আর কয়েকদিন অপেক্ষা। ফের উপনির্বাচনের মুখোমুখি খড়দহ।

আরও পড়ুন: Malda: চুরির অপবাদে শিক্ষককে বেধড়ক মার, তৃণমূল কাউন্সিলর লেলিয়ে দিলেন পোষা কুকুর!