Kaliyaganj Chaos: ‘থানার দারগা বলল শ্যুট করো, আর পুলিশ ডায়রেক্ট…’, বললেন প্রত্যক্ষদর্শী
Kaliyaganj Chaos: তিনি বললেন, "তিনগাড়ি পুলিশ এসে বিষ্ণকে খুঁজল। তারপর ওর বাবাকে গাড়িতে তুলতে গেল। মারধর করল।মৃত্যুঞ্জয় এসে জিজ্ঞাসা করল কেন তুলেছেন। থানার দারগা বলল শ্যুট করো। আর পুলিশ ডাইরেক্ট গুলি করল।"
কালিয়াগঞ্জ: বিয়ের পান্ডেল হয়েছিল। বাজছিল সানাই। আনন্দ করছিলেন সকলে। আর সেই বিয়েবাড়িতেই এখন শ্মাশানের নিস্তব্ধতা। উঠছে কান্নার রোল। পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয়েছে বছর তেত্রিশের মৃত্যুঞ্জয় বর্মণের। অন্তত তেমনটাই বলছেন এলাকাবাসী। আজই ভোরের ট্রেনে মৃত্যুঞ্জয়ের ফিরে যাওয়ার কথা ছিল শিলিগুড়ি। কাকার ছেলের বিয়ের জন্যই এসেছিলেন গ্রামে। তবে তরতাজা যুবক আর ফিরতে পারলেন না প্রাণ নিয়ে।
কালিয়াগঞ্জের রাধিকাপুর সংলগ্ন চাঁদকা গ্রাম এখন ক্ষোভে ফুঁসছে। মৃত্যুঞ্জয়ের এক বন্ধু বললেন, “আর এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “আমরা রাজবংশীরা শান্তিপ্রিয় মানুষ। মৃত্যুঞ্জয় কালিয়াগঞ্জের ঘটনায় ছিলই না। ও শিলিগুড়িতে থাকে। কনস্ট্রাকশনের কাজ করে। কাকার ছেলের বিয়ের জন্য এসেছিল। আজকেই ভোরে শিলিগুড়ি ফিরে যেত। কিন্তু হল না। পুলিশ ইচ্ছা করে একের পর এক রাজবংশী মানুষকে টার্গেট করছে।” ঘটনার বিবরণ দিলেন আরও এক প্রত্যক্ষদর্শী। তিনি বললেন, “তিনগাড়ি পুলিশ এসে বিষ্ণকে খুঁজল। তারপর ওর বাবাকে গাড়িতে তুলতে গেল। মারধর করল।মৃত্যুঞ্জয় এসে জিজ্ঞাসা করল কেন তুলেছেন। থানার দারগা বলল শ্যুট করো। আর পুলিশ ডাইরেক্ট গুলি করল। এই গ্রামে আমাদের অনেকে বিজেপি করেন। অনেকে তৃণমূল করেন। আমরা সকলে মিলেমিশে রয়েছি। মোট দুই রাউন্ড গুলি চলল। এমনকী গ্রামের উপপ্রধানকেও মারতে গিয়েছিল। উনি বসে পড়ায় লাগেনি। বিএসএফও বলছে দু’রাউন্ড গুলির আওয়াজ শুনতে পেয়েছে।”
হাউমাউ করে কাঁদতে-কাঁদতে মৃতের পিসি বললেন, “আমি ভাতের হাঁড়ি ফেলেই চলে এসেছি…., ও বলেছিল আমি যাওয়ার আগে দেখা করে যেও পিসি।” কথার বলার মতো পরিস্থিতিতেই নেই মৃত্যুঞ্জয়ের মা। শুধু বললেন, “ছেলেটা তো এখানে থাকেই না। কিছুতেই ছিল না। বাড়ি ফিরে যেত আজই। ওরা এমনিকেই মেরে দিল…”
এ দিকে, যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় লেগেছে রাজনীতির রঙ। বিজেপি- দাবি করেছে, ওই যুবক বিজেপি কর্মী। আজ এলাকায় যাচ্ছেন বিজেপির প্রতিনিধি দল। এই বিষয়ে ক্ষোভ উগরে দেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। টুইটারে একটি ভিডিয়ো পোস্ট করে তিনি লেখেন, “কালিয়াগঞ্জে ৩৩ বছর বয়সী এক রাজবংশী যুবককে নির্মম ভাবে হত্যা করেছে ‘মমতা’ পুলিশ। ট্রিগার হ্যাপি ‘মমতা’ পুলিশ মধ্যরাত ২টো ৩০ মিনিটে বিজেপির পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য বিষ্ণু বর্মনের বাড়িতে হানা দেয়। কিন্তু তাঁকে পায়নি। এর পর ৩৩ বছর বয়সী রাজবংশী যুবক মৃত্যুঞ্জয় বর্মনকে নৃশংসভাবে গুলি করে খুন করে তারা। এটা রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের নিকৃষ্ট নজির।
শুভেন্দু অধিকারী আরও লিখেছেন,”গতকাল বিকেলে এক সাংবাদিক বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কালিয়াগঞ্জের মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ তাঁর আজ্ঞা পালন করল। তাঁকে এই নৃশংস রাষ্ট্রীয় হত্যার দায়িত্ব নিতে হবে। এই সর্বঘাতী হিংসা ও রক্তপাতের বিরুদ্ধে মানুষকে সরব কণ্ঠে গণতান্ত্রিকভাবে সোচ্চার হতে হবে”বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ বলেন, “দাড়িভিটে পুলিশ গুলি চালায়। ঠিক একই ঘটনা। দুষ্কৃতীরা যখন অন্যায় করে পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে না। এই ঘটনার পর জনরোষ আরও বাড়ল।” সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, “পুলিশের গুলিতে একজন নিরীহ মানুষ মারা গেছে। যাকে গ্রেফতার করতে গেল সে নেই তাই তোকে পেলাম না অন্যজনকে গুলি করলাম। আসলে মুখ্যমন্ত্রী যেমন বুদ্ধি দিচ্ছে তেমন পুলিশ লাফাচ্ছে। বিনাশকালে বুদ্ধি নাশ।” তৃণমূল সাংসদ শান্তুনু সেন বলেন, “মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি বিজেপির সংস্কতি। কালিয়াগঞ্জে যে ঘটনা ঘটেছে তাতে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে দেখা পাওয়া গেল আত্মহত্যা। আর পুলিশ বাংলায় সহনশীলতার পরিচয় দেয় তা দেখেছেন ২০২২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর। বিজেপি ভাড়াটে গুন্ডা দিয়ে মারধর করেছিল। এই কালিয়াগঞ্জেই দেখলেন পুলিশের উপর কীভাবে আক্রমণ হয়েছে। আসলে মানুষ যত প্রত্যাখান করছে ওরা তত জলঘোলা করে বেঁচে থাকতে চাইছে।”