আসানসোল: গরু পাচার মামলায় ১৪ দিনের জেল হেফাজত হল অনুব্রত মণ্ডলের দেহরক্ষী সায়গল হোসেনের। ২২ জুলাই তাঁকে ফের আসানসোল সিবিআই আদালতে পেশ করা হবে। শুক্রবার সায়গল হোসনকে আসানসোলের বিশেষ সিবিআই আদালতে আনা হয়। বিশেষ সিবিআই আদালতে তোলার পর এ দিন সিবিআইয়ের আইনজীবীরা ফের সায়গল হোসেনের বিপুল সম্পত্তির কথা জানান বিচারককে। সিবিআই সূত্রে খবর, এ দিন ৪৫ টি জমির ডিড বা দলিল জমা দেওয়া হয়েছে। যে জমিগুলি তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের ও তাঁর স্ত্রী-মেয়ের নামে রয়েছে বলে খবর। সিবিআইয়ের দাবি, এই জমিগুলি কেনা হয়েছে ২০১৫ সাল থেকে ২০২০ সালের মধ্যে। অর্থাৎ সায়গল হোসেনে যে সময় সম্পত্তি কেনাবেচা করেছেন, সে সময়েই অনুব্রত মণ্ডলের নামে ওই জমিগুলি কেনা হয়েছে বলে খবর। যদিও সায়গল হোসনের আইনজীবীর দাবি তাঁরা এ ধরনের সম্পত্তির হিসাব সম্পর্কে কিছু জানেন না। জমির ডিড আদালতে জমা পড়েছে কি না তাও জানেন না তিনি।
সায়গল হোসেনের আইনজীবী অনির্বাণ গুহঠাকুরতা বলেছেন, “গরু পাচার একটি স্মাগলিং কেস। এই কেসে এখনও পর্যন্ত কোনও স্মাগলার গ্রেফতার হননি। কেন্দ্র সরকারের কোনও কাস্টম অফিসার গ্রেফতার হননি। কোনও বিএসএফ অফিসার গ্রেফতার হননি। এই গরু পাচার হয়েছে বিহার উত্তরপ্রদেশ হয়ে বাংলাদেশে। অন্য রাজ্যের কোনও পুলিশ বা কেউ গ্রেফতার হননি। এমনকি যে দেশে এই গরুপাচার হয়েছে সে দেশে এই ঘটনা ঘটেছিল কি না তার তদন্ত হয়নি। হঠাৎ করেই বীরভূমকে টার্গেট করা হয়েছে। রাজ্য সরকারের পুলিশকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কেন্দ্রের এই এজেন্সি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কাজ করছে।“
এ দিন সিবিআই আইনজীবী রাকেশ কুমার আবারও সায়গলের প্রভাবশালী তত্ত্ব তুলে তাঁর জামিনের বিরোধিতা করেন। শেষ পর্যন্ত দুই পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে একঘন্টা সওয়াল-জবাব শেষে বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী সায়গলের জামিন নাকচ করে ফের ১৪ দিনের জেল হেফাজতর নির্দেশ দেন। এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য হয়েছে আগামী ২২ জুলাই।
প্রসঙ্গত গত ১০ জুন সায়গলকে প্রথম আসানসোল বিশেষ সিবিআই আদালতে তোলা হয়। সেদিন সাতদিনের সিবিআই হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর পর ১৭ জুন ফের তাঁকে আদালতে তোলা হয়েছিল। সেদিনও বিচারক জামিনের আবেদন নাকচ করে সাতদিনের সিবিআই হেফাজতের নির্দেশ দেন। ২৪ জুন সায়গল হোসেনকে জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সেই মতো আসানসোলে সিবিআইয়ের বিশেষ জেলে ছিলেন তিনি।
উল্লেখ্য, গরু পাচার মামলায় ধৃত তৃণমূল কংগ্রেসের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের দেহরক্ষী সায়গল হোসেনের কাছে গরু পাচার মামলার অনেক তথ্য রয়েছে। এমনটাই দাবি সিবিআইয়ের। সায়গলকে একাধিকবার নিজামের প্যালেসে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে তদন্তকারী অফিসাররা। সায়গলের বক্তব্যে, বেশ কিছু অসঙ্গতি ছিল বলে দাবি করে সিবিআই।
গরু পাচার মামলায় বীরভূম জেলার তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডসেক ঘনিষ্ঠদের একের পর এক ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। মামলার প্রধান অভিযুক্ত বিনয় মিশ্র এখনও পলাতক। এই মামলার অন্যতম অভিযুক্ত এনামুল হক ও বিএসএফের কম্যান্ড্যান্ট সতীশ কুমারকে সিবিআই গ্রেফতার করলেও তাঁরা এই মুহুর্তে শর্ত সাপেক্ষে জামিনে রয়েছে। একই সঙ্গে বিনয়ের ভাই বিকাশ মিশ্রকেও গ্রেফতার করেছিল সিবিআই। বিকাশ এক মাস আগেই আসানসোলের সিবিআই আদালত থেকে গরু পাচার মামলায় জামিন পেয়েছেন।