আসানসোল : বীরভূমের একসময়ের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা অনুব্রত মণ্ডলের জেলেই কেটে গেল প্রায় দুমাস। মঙ্গলবার তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য তাঁকে আসানসোল জেল থেকে বের করে আসানসোল জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ২ মাসেই বেশ খানিকটা ওজন কমে গিয়েছে। তবে আর তেমন কোনও শারীরিক সমস্যা ধরা পড়েনি নতুন করে। সুগার, প্রেসার সহ একাধিক শারীরিক সমস্যা রয়েছে তাঁর। সে কারণেই সম্ভবত তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানোর ব্যবস্থা করেছে জেল কর্তৃপক্ষ।
আসানসোল জেলা হাসপাতালে মেডিক্যাল অফিসার নীলাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে এক সার্জেন ও দুই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সহ মোট চারজনের একটি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছিল কেষ্টর শারীরিক পরীক্ষার জন্য। জানা গিয়েছে, রক্তচাপ বা সুগার স্বাভাবিক রয়েছে তাঁর। ফিসচুলা সংক্রান্ত সমস্যাও খুব একটা বাড়েনি। তবে অনুব্রতর ওজন কমেছে প্রায় ১০ কেজি।
আসানসোল বিশেষ সংশোধনাগার থেকে মঙ্গলবার সকাল ১১ টা ২৫ নাগাদ বের করা হয় গরু পাচার মামলায় অভিযুক্ত অনুব্রতকে। হাসপাতালে অনুব্রত পৌঁছন ১১ টা ৩৫ নাগাদ। স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষ হয় ১২ টা ৩৫ মিনিট নাগাদ। জেল কর্তৃপক্ষের দাবি, রুটিন চেকআপ করা হয়েছে তাঁর।
গত ২৪ অগস্ট থেকে আসানসোল বিশেষ সংশোধনাগারে রয়েছেন অনুব্রত। ২৫ অগস্ট তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল জেলা হাসপাতালে। তারপর থেকে জেলেও চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হয় অনুব্রতকে। তবে একধাক্কায় এতটা ওজন কমে যাওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে, তিনি কি মানসিক অবসাদের শিকার? তার জন্যই কি শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে?
দুর্গা পুজো থেকে কালী পুজো, সবটাই জেলে কাটাতে হয়েছে অনুব্রতকে। এদিকে আবার তাঁর মেয়ে সুকন্যা মণ্ডলকে দিল্লিতে তলব করেছে ইডি। তাঁর প্রাক্তন দেহরক্ষী সায়গল হোসেনকে ইতিমধ্যেই দিল্লি নিয়ে গিয়ে জেরা করছে ইডি। আর এসবই করা হচ্ছে গরু পাচার মামলার তদন্তে, যে মামলায় যোগ থাকার কারণেই গ্রেফতার করা হয়েছে অনুব্রতকে। প্রশ্ন উঠছে, সুকন্যা, সায়গল আতস কাচের নীচে চলে আসায় কি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছেন অনুব্রত? হাসপাতাল সূত্রে খবর অনুব্রতর শারীরিক অবস্থা খুব একটা খারাপ নেই আর।
তবে সংশোধনাগার থেকে বেরিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার তাঁর মেজাজ ছিল আগের মতোই। সূত্রের খবর, হাসপাতালে স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে তিনি গল্পগুজবও করেছেন। সেখানে নাকি বলেছেন, কোনওদিন বোলপুর হাসপাতালে তাঁকে চিকিৎসার জন্য যেতে হয়নি। কিন্তু আসানসোল জেলা হাসপাতালে তাঁকে দুবার আসতে হল।
উল্লেখ্য, সংশোধনাগারে পুজোর সময় ডাক্তার ছিলেন না। গত ১৫ সেপ্টেম্বর রাজ্যের কারা দফতরের পক্ষ থেকে আসানসোল সংশোধনাগারের জন্য একজন আংশিক সময়ের চিকিৎসক চেয়ে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কোনও আবেদনই জমা পড়েনি বলে সূত্রের খবর। আসানসোল সংশোধনাগার হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরেই তেমন কোনও চিকিৎসক নেই। এমনকি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র চালানোর মতো পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মী, নার্সিং স্টাফও নেই বলে অভিযোগ।