আসানসোল: বাসের একেবারে কোণার সিটে রাখা ছিল ব্যাগটি। পাশেই যাত্রীরা বসেছিলেন। বাস চলছে তার নিজের গতিতে। আচমকাই মাঝ রাস্তায় সজোরে ব্রেক কষে দাঁড়িয়ে যান চালক। কয়েকজন উঠে তল্লাশি শুরু করেন। যাত্রীরা তখন স্তম্ভিত। প্রত্যেকটা সিটের তলা, যাত্রীদের ব্যাগ খুঁটিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। যাত্রীরা ততক্ষণে বুঝে গিয়েছেন বিপদ রয়েছে। তারপর তদন্তকারীদের নজরে পড়ে সেই ব্যাগ। কালো ব্যাগের চেন খুলতেই ভয়ে বুকে কেঁপে ওঠে যাত্রীদের! এ তো মৃত্যুকে বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছেন তাঁরা। যাত্রীবোঝাই বাসেই ব্যাগে করা হচ্ছিল বোমা পাচার। তাও আবার দেশি বোমা। ভয়ঙ্কর ঘটনা আসানসোলের কুলটিতে।
মঙ্গলবার রাত্র ১১ টা ১৫ নাগাদ পানাগড় সেনা ছাউনির গোয়েন্দা বিভাগের কর্মীরা সূত্র মারফত খবর পেয়ে পানাগড় থেকে বাসটির পিছু নেয়। আসানসোলের কুলটির কাছে দু’নম্বর জাতীয় সড়কে বাসটিকে দাঁড় করিয়ে তল্লাশি চালানো হয়।
দু নম্বর জাতীয় সড়কের উপর কুলটির ডুবুরডিহি মোড়ের কাছে কুলটি থানার পুলিশ ও পানাগড় সেনা ছাউনির গোয়েন্দা বিভাগ ওই যাত্রীবাহী বাসে অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করে ৩০ টি তাজা বোমা। ব্যাগে থাকা নথি থেকে জানা গিয়েছে , কলকাতা থেকে বোমাগুলি ঝাড়খণ্ডে পাঠানো হচ্ছিল।
৩০ টি দেশি বোমার প্রতিটির মূল্য ১০০০ টাকা । চিরকুটে লেখা থেকে জানা গিয়েছে, ঝাড়খণ্ডে সফি মহম্মদ ভাই নামে কারও কাছে পাঠানো হচ্ছিলো বোমাগুলি। কলকাতার ও দুই ব্যক্তির নাম লেখা রয়েছে চিরকুটে । লেখা রয়েছে একটি কোড নম্বর ১২৪৬১ । সমস্ত কিছু নিয়েই তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ ।
বোমাগুলিকে পুলিশ থানায় নিয়ে যায়। একটি জলের বালতির মধ্যে রেখে বোমাগুলিকে নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, গোপন সূত্রে খবরটা আসে। বাসে বোমা পাচারের এমন ঘটনা সচরাচর শোনা যায় না। যাত্রীদের সঙ্গে ব্যাগে ভরে বোমা পাচার করা হচ্ছিল। কয়েকটা নাম পাওয়া গিয়েছে। তদন্ত চলছে। তবে যে কোনও সময়ে একটা বড় বিপদ ঘটে যেতেই পারত। এই ঘটনার সঙ্গে আন্তঃরাজ্য যোগ রয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। যার নাম পাওয়া গিয়েছে, প্রাথমিকভাবে তার খোঁজ করা হচ্ছে। আশা করা যায়, সেখান থেকে নতুন সূত্র পাওয়া যাবে।
তবে এ সবের মাঝে ভয়ে কাঁপছেন সাধারণ যাত্রীরা। তাঁদের বক্তব্য, “এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে, তা কোনওদিনও ভাবিনি। আর পাঁচ জন সাধারণ যাত্রীর সঙ্গেই বোমা রাখা হয়েছিল। যে কোনও সময়েই ফেটে যেতে পারত। বাসে এত লোক, প্রত্যেকেরই তো জীবন সংশয় হতে পারত। এত গুলো বোমা বলে কথা! এভাবে বাচ্চা নিয়ে কীভাবে বাসে যাতায়াত করা যায়?” অপর আরেক যাত্রীর কথায়, “পুলিশ যখন বাসে উঠল, ভেবেছিলাম কোনও অপরাধীকে ধরতে উঠেছে। তখনও কেউ বুঝিনি বোমাই রয়েছে বাসে! এ তো সিনেমাকেও হার মানাবে।” আরও পড়ুন: নম্র স্বভাব, কাজের ছেলে, হেল্পফুলও! কর্মচারীকে বাড়িতে আশ্রয় দেন মালিক, দুঃসাহসিক পরিণতি