আসানসোল: অতিমারি করোনা (Corona) কেড়েছে অনেক কিছু। গিয়েছে লক্ষ লক্ষ প্রাণ, রুজিরুটি হারিয়েছেন লাখো লাখো মানুষ। তেমনই বন্ধ হয়েছে দেশে ও বিদেশের একাধিক উৎসব। মঞ্চের অনুষ্ঠান, নাচ, গান, নাটক প্রদর্শন সবই প্রায় বন্ধ। কিছু কিছু উৎসব অবশ্য হচ্ছে ভার্চুয়াল পথে। অনলাইনে বসেই সেসব অনুষ্ঠান উৎসব উপভোগ করছেন ঘরবন্দি মানুষ। কিন্তু পুরুলিয়ার ছৌ-শিল্পীদের মতো শিল্পীরা কী করবেন? এই সঙ্কটের আবহে তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। আর সোমবার সেই ছৌ শিল্পীদের অনুষ্ঠানে আগমনীর সুর পাওয়া গেল শিল্প শহরে।
কেন্দ্রের সং এন্ড ড্রামা প্রকল্পে রাজ্যজুড়ে ছৌ নাচ করছেন পুরুলিয়ার বলরামপুরের শিল্পীরা। কিন্তু গত দু’বছর করোনা আবহে কোনও কাজ নেই তাঁদের হাতে। এখন কেন্দ্রের একটি প্রকল্পের ফলে আয়ের মুখ দেখছেন ছৌ শিল্পীরা। স্বাধীনতার ৭৫ তম বর্ষে ‘আজাদি কা মহোৎসব’ কর্মসূচিতে নেমেছেন তাঁরা। পুজোর অনেক আগেই শহরে আগমনীর বার্তা ছড়িয়ে দিয়ে ‘মহিষাসুর বধ,’ ‘ঘোড়াসুর বধ’ পালা করছেন। ছৌ শিল্পীদের এই পালায় থমকে যাচ্ছেন পথ চলতি মানুষজন। শুরু হয় শিল্পীদের সঙ্গে সেলফি তোলার হিড়িক-ও। বাংলার লোকশিল্পের মধ্য দিয়েই যেন পুজোর বাদ্যি বেজে গেল শিল্পাঞ্চলে।
আসলে বনমহল পুরুলিয়া তথা সাবেক মানভূমে সমাজ জীবনের হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ সবথেকে বেশি ধরা পড়ে যে লোকআঙ্গিকে তা হল ছৌ। ভারতের অন্যতম প্রসিদ্ধ এবং সবচেয়ে পুরনো লোকনৃত্য ছৌ-এর ঠিকানা আক্ষরিক অর্থে দুটি। ওড়িশার ময়ুরভঞ্জ এবং পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া। পুরুলিয়া ছৌ-কে বিশ্বের দরবারে পরিচিত করেছে তার মুখোশ আর সাজপোশাক। সেই পোশাক আর সাজপোশাকে ছৌ শিল্পীদের দেখতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে পড়ছেন আসানসোলবাসী।
জঙ্গলমহল বলরামপুরের রাঙাডি এলাকার এই ছৌ দল এদিন শারীরিক দূরত্ব মেনে ঢোল বাদক-সহ মোট ২০ জন শিল্পীকে নিয়ে পৌরাণিক পালা তুলে ধরেছেন শহরের রাস্তায় রাস্তায়। দুর্গা পুজো পর্যন্ত রয়েছে তাদের বায়না। একসময় বহু বিদেশে পালা করলেও এই মুহূর্তে করোনা আবহে বেসরকারি অনুষ্ঠান নেই। তবে কোভিড বিধি মেনে আবার ছন্দে ফেরার চেষ্টায় পুরুলিয়ার ছৌ শিল্পীরা। তাঁদের মহিষাসুর বধের উপস্থাপনা উস্কে দিয়ে যাচ্ছে পুজোর উন্মাদনা। গ্রামবাংলার ছৌ শিল্পীদের রাস্তা-ঘাটে পালা পরিবেশন দেখে স্বস্তি পাচ্ছেন শহুরে বাঙালিরাও। মনে মনে সবারই প্রার্থনা তৃতীয় ঢেউ যেন আর না আসে। আশ্বিনের শারদপ্রাতে সত্যিই এবার হয়তো মঞ্জুরি বেজে উঠবে, এটাই সবার আশা।
দারিদ্রের মধ্যেও সীমাহীন সারল্যকে সঙ্গী করে রুখাশুখা এলাকায় নাচগানের অশেষ প্রবাহ বাঁচিয়ে রেখেছেন এই সব শিল্পীরা। করোনার আঁধার ছিঁড়ে বেরিয়ে আবার আলোয় ভরা মঞ্চে নামতে চাইলেন শিল্পীরা। সরকারি উদ্যোগে আয়োজিত বিভিন্ন মেলা, উৎসব, অনুষ্ঠানে প্রায়ই ডাক পেতেন শিল্পীরা। কিন্তু সর্বনাশা করোনার দাপটে উৎসব, মেলা এখন সবই বন্ধ। কেন্দ্রের নয়া উদ্যোগে আশার আলো দেখছেন এই শিল্পীরা। আরও পড়ুন: ‘বিশ্বভারতী ভাল চলছে, তাই তৃণমূলের কষ্ট হচ্ছে,’ অনুব্রতকে নিশানা দিলীপের