আসানসোল: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শিখিয়েছেন খোলা আকাশের নীচে পড়াশোনার কথা। তারই এক ঝলক আপনি দেখতে পাবেন পশ্চিম বর্ধমানের জামুরিয়ায়। এই গ্রামে গেলেই আপনার মনে হতেই পারে, এ কোথায় চলে এলাম! গ্রামের কাঁচা বাড়ির দেওয়ালগুলি বিভিন্ন ধরনের আঁকিবুকি করা। কোথাও স্বরবর্ণ, ব্যাঞ্জনবর্ণ। কোথাও আবার নামতা। তো কোথাও আবার অঙ্ক কষা। গোটা গ্রামটাই যেন একটা ক্লাসরুম হয়ে উঠেছে। আর যাঁর দৌলতে এটা হয়েছে, তিনি দীপনারায়ণ নায়েক। জামুরিয়ার তিলকা মাঝি আদিবাসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। লোকে তাঁকে ডাকে ‘রাস্তার মাস্টার’বলে।
দেওয়ালগুলি সব ব্ল্যাক বোর্ড আর স্লেট। আর রাস্তা হল ক্লাসরুম। করোনাকালে যখন প্রত্যন্ত গ্রামগুলির পড়ুয়াদের ‘ডিজিটাল ডিভাইড’ নিয়ে কথা হয়েছে, তখনও কিন্তু ব্যতিক্রমী জামুরিয়ার এই স্কুল। কম্পিউটার বা স্মার্টফোন না থাকলেও, অনলাইন ক্লাসের সুযোগ-সুবিধা না থাকলেও, করোনাকালে এই প্রত্যন্ত গ্রামের ছোট ছোট পড়ুয়াদের পড়াশোনা বন্ধ হয়নি। ‘রাস্তার মাস্টার’ দীপনারায়ণবাবুর এই উদ্যোগ চর্চিত হচ্ছে গোটা বিশ্বে।
I’m incredibly grateful and humbled to be chosen as a top 10 finalist for the 2023 Varkey Foundation Global Teacher Prize, supported by UNESCO and Dubai Cares. Thank you, @varkeyfdn, @UNESCO, and @DubaiCares, for this incredible honor. 🙏🌟 #GlobalTeacherPrize2023 #Education pic.twitter.com/jMAUh7MtVm
— Deep Narayan Nayak (@DeepNarayanNay2) October 26, 2023
ইউনেসকোর সহযোগিতায় আয়োজিত গ্লোবাল টিচার প্রাইজ় ২০২৩-এর দশ ফাইনালিস্টের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন জামুরিয়ার ‘রাস্তার মাস্টার’। ১৩০টি দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত শিক্ষক ও শিক্ষাবিদরা এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন। সেখানে সবাইকে পিছনে ফেলে ১০ জন ফাইনালিস্টের তালিকায় উঠে এসেছেন তিনি। শিক্ষাক্ষেত্রে অনবদ্য অবদানের জন্য এই গ্লোবাল টিচার প্রাইজ় দেওয়া হয়ে থাকে, যার পুরস্কার মূল্য ১ মিলিয়ন ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা)। করোনাকালে সমাজের পিছিয়ে থাকা শ্রেণির পড়ুয়াদের বিকাশের জন্য তিনি যে পদক্ষেপ করেছেন, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই গোটা বিশ্বে ভূয়সি প্রশংসা হয়েছে।
গ্রামে শুধু ছোট ছোট পড়ুয়াদের জন্যই নয়, বয়স্ক শিক্ষার দিকেও জোর দিয়েছেন তিনি। সব মিলিয়ে এ যেন ‘দুয়ারে শিক্ষা’র এক বিরাট কর্মসূচি নিয়ে ফেলেছেন তিনি।