আসানসোল: একসময় মানুষের কোলাহলে গমগম করত গোটা গ্রাম। রাস্তায় চলত গাড়ি, মাঠে খেলত শিশুর দল। কিন্তু, আচমকা শোনা গেল গ্রামের উপর পড়েছে কালো ছায়া। রাত হলেই কারও বাড়িতে পড়ছে ঢিল, তো কারও বাড়ির দরজায় টোকা। একদিন, দু’দিন নয়, প্রায়শই ঘটতে থাকে এই ঘটনা। বাড়তে থাকে ভয়। একটা সময় ভূতের আতঙ্ক গোটা গ্রামে এতটাই জাঁকিয়ে বসে যে সব বাসিন্দাই গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়। কিন্তু, লক্ষ্মীপুজোর দিন ফের ফিরে আসেন সকলে। ধুমধাম করে হয় লক্ষ্মীর পুজো। রাতে পাত পেড়ে একসঙ্গে বসে চলে খাওয়া দাওয়া। একরাতের জন্য ইলেকট্রিকের ব্যবস্থা করা হয়। এখন আসানসোলের ‘ভূতগ্রামের’ এই লক্ষ্মীপুজোই জেলার অন্যতম চর্চার খবর।
চিত্তররঞ্জন-নিয়ামতপুর রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময়ে বাম দিকে পড়ে একটা জঙ্গলে ঘেরা রাস্তা। সেই রাস্তা দিয়ে কিছুটা এগোলেই আছে বেনা গ্রাম। গ্রামের পাশ দিয়েই চলে গিয়েছে আসানসোল ধানবাদ রেললাইন। রাতে এখানে গেলে একটু গা ছমছম করতে পারে আপনারও। গ্রামে রয়েছে লক্ষ্মীর মন্দির। সেখানেই শনিবার হয়ে গেল পুজো। একসময় প্রায় শ’খানেক পরিবারের বাস ছিল এখানে। গ্রামের বাসিন্দারা জানাচ্ছেন বছর ১৮ আগে আচমকা এই গ্রামে কিছু অদ্ভুত কাজ শুরু হয়। রাতে বিভিন্ন বাড়ির দরজায় ইট ছোড়া বা টোকা মারার আওয়াজ শোনা যেত প্রায়দিন। সবই ভূতের কাজ বলে রটে যায়। বাড়তে থাকে আরও নানা গুজব। ২০০৪ সালের পর থেকে ধীরে ধীরে খালি হয়ে যায় গোটা গ্রাম।
যদিও অনেকেই বলছেন, ভূত নয়, ও সবই দুষ্কৃতীদের কাজ। কিন্তু, গুজবের জেরেই খালি হয়েছে গোটা গ্রাম। তারপর থেকেই কুলটির এই গ্রামের পরিচয় হয়ে যায় ‘ভূতের গ্রাম’ হিসেবে। গ্রামবাসীদের ছেড়ে যাওয়া ঘরবাড়ি এখন জরাজীর্ণ। কার্যত রূপ নিয়েছে হানাবাড়ির। এখনও এখানে কেউ থাকতে চান না। পুজো সেড়েই ফিরে যাবেন নিজের নিজের বাড়িতে।