Road Crack: মাটিতে ধস, রাস্তা ফেটে চৌচির! অবৈধ খাদান গিলে খাচ্ছে গ্রাম?
Asansol: আলডিহি গ্রামটি পরে ইসিএলের সোদপুর এরিয়ার মধ্যে। অতীতে এই আলডিহি গ্রামের আশপাশের চত্বরে কয়লার খাদান ছিল। সেই সব অবৈধ কয়লা খাদানের জন্যই এলাকায় বার বার ধস নামছে বলে অভিযোগ উঠছে।

আসানসোল: রাস্তার মাঝ বরাবর চওড়া ফাটল। মাটি ধসে পাকা রাস্তা ভেঙে চৌচির। ভয়ঙ্কর কাণ্ড আসানসোলের কুলটিতে। সেখানে আলডিহি গ্রাম থেকে নিয়ামতপুর যাওয়ার রাস্তার মাঝে বুধবার এই ফাটল দেখা যায়। প্রায় একশো মিটার রাস্তায় ফাটল ধরেছে। শুধু তাই নয়, আলডিহির মসজিদ পাড়া যাওয়ার এক ঢালাই রাস্তাতেও ফাটল ধরেছে। আর এই নিয়েই আপাতত বেশ সমস্যায় গ্রামবাসীরা। এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে যেতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন গ্রামবাসীরা। ঝুঁকি নিয়েই যেতে হচ্ছে রাস্তা দিয়ে। আজ যেমন ব্যান্ড-বাজা নিয়ে এক বরের গাড়ি আটকে যায় এই রাস্তায়। শেষ পর্যন্ত বরকে কাঁধে নিয়ে পার করতে হয় ওই বিপজ্জনক রাস্তা।
কিন্তু কেন এই হাল হল? কেন হঠাৎ করে ধস নামল রাস্তায়? তা নিয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতর। এই আলডিহি গ্রামটি পরে ইসিএলের সোদপুর এরিয়ার মধ্যে। অতীতে এই আলডিহি গ্রামের আশপাশের চত্বরে কয়লার খাদান ছিল। সেই সব অবৈধ কয়লা খাদানের জন্যই এলাকায় বার বার ধস নামছে বলে অভিযোগ উঠছে। অবৈধ খাদানের সমস্যার কথা একপ্রকার মেনে নিচ্ছেন ইসিএলের কর্তারাও। সংস্থার খনি বিশেষজ্ঞদের যুক্তি, সাধারণভাবে মাটির নীচে কয়লার স্তর কাটার পর সেই ফাঁপা অংশ ভরাট করে দেওয়া হয় বালি দিয়ে। আবার কখনও শালের খুঁটিও ব্যবহার করা হয়। সেই খুঁটি দিয়ে উপরের মাটি আটকানো হয়। আবার অনেক আধুনিক প্রযুক্তিও রয়েছে। যেমন হাইড্রলিক লং ওয়াল নামে একটি পদ্ধতি অনেক ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু সমস্যা হল, যেসব জায়গায় অবৈধভাবে কয়লা তোলা হয়, সেইসব জায়গায় এসবের তোয়াক্কা করা হয় না। মাটির তলা ফাঁপা থেকে যায় অনেক সময়। ফলে ধস নামার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
গতকালের ওই ঘটনার পর খবর পেয়ে ইসিএলের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘিরে দিয়ে গিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু কোনও স্থায়ী সমাধান হচ্ছে না বলে বার বার অভিযোগ উঠছে। ১৯৯৮ সাল থেকে শুরু হয়েছিল এই ঘটনা। ধস নেমে অনেকগুলি বাড়ি খনির মধ্যে ঢুকে গিয়েছিল সেই সময়। গ্রামটিকে ধস কবলিত বলে ঘোষণাও করা হয়েছিল। কিন্তু তারপরও পুনর্বাসন মিলছে না বলে অভিযোগ গ্রামবাসীদের। বছর কয়েক আগেও ধস নেমেছিল। অবৈধ খাদানে ঢুকতে গিয়ে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে অতীতে। ফলে নতুন করে এই ধস নামায় আতঙ্কে রয়েছেন গ্রামবাসীরা। পুনর্বাসন প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করার দাবি তুলছেন তাঁরা।
এদিকে ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতর। আজ ধস কবলিত এলাকা পরিদর্শনে গিয়েছিলেন তৃণমূল কাউন্সিলর সুনীতা বাউরি। পুনর্বাসনের কাজ আটকে থাকা নিয়ে কেন্দ্রকে দুষছেন তিনি। খনি ভরাট না হওয়া নিয়েও বিস্তর অভিযোগ তাঁর। যদিও বিজেপির জেলা সম্পাদক অমিত গড়াইয়ের পাল্টা দাবি, কয়লা মন্ত্রকের থেকে ধস পুনর্বাসনের জন্য টাকা পাঠানো হয়ে গিয়েছে। কিন্তু আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদ সেই টাকা খরচ করছে না। গ্রামবাসীদের আপাতত অস্থায়ী পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
যোগাযোগ করা হয়েছিল আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও। তাঁর আবার যুক্তি, কেন্দ্র টাকা পাঠাতে দেরি করছে। তাই পুনর্বাসনের কাজ থমকে থাকছে। সেই শুনে পাল্টা দিয়েছে বিজেপিও। তাদের আবার বক্তব্য, কেন্দ্র সময় মতোই টাকা পাঠিয়েছে। কিন্তু শাসক দলের নেতারা নিজেদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারায় ব্যস্ত, তাই দেরি হচ্ছে পুনর্বাসনে।
অর্থাৎ, ধস পুনর্বাসন নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য চাপানউতর চলতেই থাকছে। আর মাঝখানে ফ্যাসাদে পড়ে রয়েছেন সাধারণ গ্রামবাসীরা। প্রতিদিন একরাশ দুশ্চিন্তা, ভয় নিয়ে ঘুমোতে হচ্ছে তাঁদের। মাঝে মধ্যেও তাঁরা মাটি ফুঁড়ে ধোঁয়া বেরতে দেখেন। সঙ্গে ঝাঁঝালো গন্ধ। পরিত্রাণ কবে মিলবে? সেই অপেক্ষাতেই দিন কাটাচ্ছেন গ্রামবাসীরা।





