পশ্চিম বর্ধমান: বাবুলের সুরে সুর মেলাতে চলেছেন জিতেন্দ্র (Jitendra Tiwari)? শনিবারের বারবেলায় একরকম ‘গোপনে’ তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। তাঁর যোগদানের আসানসোলের প্রাক্তন মেয়র অধুনা বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারি স্পষ্টই জানিয়েছিলেন, ‘বাবুলদার সিদ্ধান্ত’ সম্পূর্ণ রাজনৈতিক। এমনকী, রাজনীতিতে ফুলস্টপ বলে কিছু হয় না বলেই উল্লেখ করেন বিজেপি নেতা। তারপরে ২৪ ঘণ্টাও কাটেনি। আচমকাই বদলে গিয়েছে আসানসোলের প্রাক্তন মেয়রের সোশ্যাল মিডিয়ার ছবি। বিজেপির দলীয় সমস্ত পোস্ট সরে গিয়েছে তাঁর প্রোফাইল থেকে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই শুরু জল্পনা।
ঠিক কী দেখা গিয়েছে আসানসোলের প্রাক্তন মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারির (Jitendra Tiwari) ফেসবুক প্রোফাইলে? শনিবারের পর জিতেন্দ্রের প্রোফাইলে দেখা যায়, নরেন্দ্র মোদী এবং বিজেপির সঙ্গে সম্পর্কিত সমস্ত পোস্ট ডিলিট করা হয়েছে। বদলে সেখানে জায়গা ‘রাজনীতি বর্জিত’ দ্ব্যর্থক মন্তব্য। কোথাও তিনি লিখেছেন, ‘একই অঙ্গনে ক্রমাগত কুস্তি করতে হলে কুস্তিগিররাও বন্ধু হয়ে যায়।’ কোথাও বা লিখেছেন, ‘তাদের থেকে সাবধান, যাঁরা ইতিহাসকে রহস্যে পরিণত করেন।’ জিতেন্দ্রের এ হেন পোস্ট থেকেই জল্পনার উদ্রেক। তাহলে কি বাবুলের পথেই হাঁটতে চলেছেন তিনি? ফিরতে চলেছেন নিজের পুরনো দলে?
সূত্রের খবর, ইদানিং আসানসোলেও থাকছেন না জিতেন্দ্র (Jitendra Tiwari)। বেশিরভাগ সময়েই কলকাতা হাইকোর্টে আইনজীবি হিসেবে প্র্য়াকটিস শুরু করেছেন বলেই সূত্রের খবর। বিজেপিতেও সক্রিয়ভাবে দেখা যাচ্ছে না তাঁকে। গত ২৬ অগস্ট কলকাতা হাইকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য হওয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টও করেন তিনি। তারপর থেকে আর আসানসোলে তাঁকে দেখা যায়নি।
শনিবার বাবুল সুপ্রিয় তৃণমূলে যোগদানের পরেও ক্ষুব্ধ হতে দেখা যায়নি জিতেন্দ্রকে। বেশ ‘প্রফুল্লচিত্তেই’ তিনি বলেন, “বাবুলদা ভাল লোক। তিনি কোন দলে থাকবেন তা সম্পূর্ণই তাঁর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। তবে রাজনীতিতে ফুলস্টপ বলে কিছু হয় না। রাজনীতিতে সেমিকোলন, কমা চলতে পারে। ফুলস্টপ বলে কিছু নেই।”
প্রসঙ্গত, নির্বাচন আবহে আচমকাই ফুলবদল করে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে গিয়েছিলেন জিতেন্দ্র। একবার দল ছেড়ে দিয়ে মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তৃণমূল ফিরেছিলেন তিনি। কিন্তু তারপর তৃণমূলের তরফ থেকে সমস্ত দলীয় পদ থেকে একরকম ব্রাত্য করেই রাখা হয় তাঁকে। অবশেষে গত ২ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে বিজেপিতে যোগ দেন জিতেন্দ্র।
অন্যদিকে আসানসোলের স্থানীয় রাজনীতিতে জিতেন্দ্রনাথের সঙ্গে পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর সম্পর্ক ‘আদায়-কাঁচকলায়’। কাধিকবার নিজের সোশ্যাল হ্যান্ডেলে জিতেন্দ্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছিলেন নরেন্দ্র। এমনকী, পাণ্ডবেশ্বরের দলীয় সভার কাজেও দলের তরফ থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি জিতেন্দ্রকে। ফলে অনেকদিন ধরেই দলে থেকে ‘বেসুরো’ বাজছিলেন জিতেন্দ্র।
নির্বাচন আবহে ও তারপরেও শাসক শিবিরের বিরুদ্ধে নানাসময়ে তোপ দেগেছেন এই বিজেপি নেতা। শিল্পাঞ্চলে তাঁর সক্রিয় উপস্থিতি ও সমালোচনার হাত থেকে ছাড় পায়নি আসানসোলের পুরবোর্ড। তারপর অগস্ট থেকেই কিছুটা ‘মৃদুমন্দ’ হতে শুরু করেন প্রাক্তন মেয়র। তবে, জিতেনের ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে খবর, চলতি মাসে তাঁর আসানসোলে ফেরার সম্ভাবনা নেই। অক্টোবর মাসের প্রথমে তিনি আসানসোলে ফিরতে পারেন বলেই খবর। তাহলে কি রাজনীতি থেকে সরতে চলেছেন জিতেন্দ্র নাকি ফিরতে চলেছেন নিজের পুরনো দলে?
বিজেপির তরফে সায়ন্তন বসু যদিও বলেছেন, “বাবুল পার্টির কোনও বড় নেতা ছিলেন না। তিনি গিয়েছেন তো কী হয়েছে, আসানসোলের বিজেপির আরও কোনও সদস্য দল ছেড়ে অন্য কোথাও যাবেন না।” পাল্টা তৃণমূলের তরফে বলা হয়েছে, জিতেন্দ্র তিওয়ারি যে ক্ষমতাভোগ করেছেন তার সবটাই মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের সৌজন্যে। তাঁর নিজের কোনও কৃতিত্ব নেই। বিজেপিতে গিয়েছিলেন নিজের ফায়দার জন্য। পরে যদি তৃণমূলে ফিরতে চান তা সম্পূর্ণ দল সিদ্ধান্ত নেবে।
এ প্রসঙ্গে যদিও, খোদ জিতেন্দ্র ফোনে বলেন, “এই মুহূর্তে প্রাক্তন বিধায়ক ভাতা ছাড়া আমার আর কোনও আয় নেই। তাই আপাতত কলকাতায় প্র্যাকটিসে মন দিয়েছি। দলের কোনও সাংগঠনিক পদে আমি নেই। যদি দল কোনও কর্মসূচির দায়িত্ব দেন তবে তা অবশ্যই পালন করব।” যদিও দলবদল প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করেননি জিতেন্দ্র।
আরও পড়ুন: Post Poll Violence: মামলা রুজু করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ফের নোদাখালিতে নিহত চন্দনার বাড়িতে সিবিআই
আরও পড়ুন: Babul Supriyo: ‘বিলম্বিত বোধোদয়’, কটাক্ষ হেনেই বাবুলকে স্বাগত সমবায় মন্ত্রীর