আসানসোল: পুলিশকে বিভ্রান্ত করতে একের পর এক ছক। আর সেসবই টিভিতে ক্রাইম সিরিয়াল দেখে কষেছিল খুনিরা। একটা চাবির রিং দিয়েই সেই মৃত্যু রহস্যের কিনারা করল জামতাড়া পুলিশের মিহিজাম থানা। চিত্তরঞ্জন সংলগ্ন মিহিজামে কলকাতার প্রোমোটারের অপহরণ ও খুন কাণ্ডে গ্রেফতার হল দুই অভিযুক্ত।
গত বুধবার কলকাতার প্রোমোটার মহম্মদ সঈফ খান ওরফে গুড্ডুর রক্তাক্ত দেহর উদ্ধার হয় মিহিজাম-দেওঘর হাইওয়ের ধরে। তদন্তে নামে পুলিশ। জানা যায়, কলকাতার আশেপাশেই হত্যা করা হয়েছিল ওই প্রোমোটারকে। যদিও পুলিশকে ধন্দে ফেলতে গাড়িতে চাপিয়ে মিহিজাম – দেওঘর হাইওয়ের পাশে ফেলে দিয়ে পালিয়েছিল দুস্কৃতীরা। মৃতের প্যান্টের পকেট থেকে একটি চাবির রিং পুলিশ খুঁজে পায়। আর সেখান থেকেই বেরিয়ে এল আসল রহস্য।
মৃতের কাছ থেকে পাওয়া চাবির রিং- এর মধ্যে লেখা ছিল একটা নাম্বর। একটু তদন্তেই বেরিয়ে আসে সেটা আসলে তাঁর গাড়ির নম্বর। তা থেকেই অতি দ্রুত রোমহর্ষক এই হত্যাকাণ্ডের কিনারা করে ফেলল জামতাড়া পুলিশের মিহিজাম থানা। বিভিন্ন সূত্র এবং তথ্যকে হাতিয়ার করে চিত্তরঞ্জন সংলগ্ন মিহিজাম থানার পুলিশ কলকাতা পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে কলকাতার বেনিয়াপুকুর এলাকা থেকে খুন হওয়া প্রোমোটারের দুই বন্ধু বছর ৪৫-এর মহম্মদ আফতাব আলম এবং বছর ২৬ এর মহম্মদ আলমকে গ্রেফতার করল পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, টিভিতে ক্রাইম সিরিয়াল দেখে এই হত্যার ছক কষেছিল দুষ্কৃতীরা। সিরিয়ালে যেমন দেখায় এক রাজ্যে খুন করে অন্য কোন রাজ্যে গিয়ে মৃতদেহ ফেলে দেওয়া হয়। তাতে ওই হত্যাকাণ্ডের কিনারা করতে পুলিশকে বেগ পেতে হয়। তেমনই কলকাতার প্রমোটার অপহরণ ও খুনের ঘটনায় সেই ঘটনায় ঘটানো হয়েছিল বলে দাবি পুলিশের।
ব্যাঙ্কশাল কোর্টের মাধ্যমে পুলিশ ধৃতদের ট্রানজিট রিমান্ডে কলকাতা থেকে মিহিজামে নিয়ে আসে। তাদের লাগাতার জিজ্ঞাসাবাদের সূত্রে পুলিশ জানতে পারে, প্রায় ৪ লাখ টাকা লেনদেনের কারণেই কলকাতার প্রোমোটার ৪১ বছরের মহম্মদ সইফ খান ওরফে গুড্ডুকে হত্যা করা হয়। গ্রেফতার হওয়া দুই অভিযুক্ত অবশেষে পুলিশের কাছে স্বীকার করে, কলকাতার কাছাকাছি গুড্ডুকে হত্যা করে তারা মিহিজামের কাছে এনে তাঁর দেহ ফেলে পালায় তারা। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এই হত্যাকাণ্ডের যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে মিহিজাম পুলিশ। তবে হত্যাকাণ্ডের চারদিনের মাথায় পুলিশ গ্রেফতার করতে সমর্থ হল হত্যাকারীদের।
উল্লেখ্য, মহম্মদ সইফ ওরফ গুড্ডুকে চিত্তরঞ্জন সংলগ্ন মিহিজামে হাইওয়ের ধারে ফেলে পালিয়েছিল খুনিরা। মৃতদেহটি যাতে কোনওভাবেই চেনা না যায় সে জন্য ওই ব্যক্তির গলা কেটে ঝোপের মধ্যে উপুড় করে ফেলে রাখা হয়েছিল। জামা প্যান্টের পকেট থেকে যাবতীয় কাগজপত্র মানিব্যাগ মোবাইল সরিয়ে ফেলেছিল তারা। রক্তাক্ত দেহটিকে সহজে চেনার উপায় ছিল না। তবে স্থানীয় মানুষজন মারফত সংবাদ পেয়ে মিহিজাম পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মৃতদেহটিকে শনাক্ত করে ফেলেন।
মৃতের পকেট থেকে কোন পরিচয় পত্র না পেলেও খোঁজাখুঁজি করে তার জিন্সের পকেট থেকে একটি ঘড়ি ও বাইকের চাবির রিং উদ্ধার করে পুলিশ। ওই রিংয়ে গাড়ির নম্বর উল্লেখ করা ছিল। সেই নম্বর ধরে গাড়ির শোরুমের খোঁজ পায় পুলিশ। সেখান থেকে মৃতের পরিবারের সন্ধান পেয়ে যায় মিহিজাম পুলিশ। বুধবার দেহটি উদ্ধার হয়েছিল চিত্তরঞ্জন মিহিজাম রোডে। তার এক সপ্তাহের মধ্যেই খুনের কিনারা করে ফেলল পুলিশ। আরও পড়ুন: খোদ পুলিশ সুপারের দফতরেই দুষ্কৃতী তাণ্ডব! মারের চোটে ঘর ছেড়ে পালালেন পুলিশ আধিকারিক!