অন্য সরস্বতী: সংসারের লক্ষ্মী পরিচয় ঘুচিয়ে পানাগড়ের প্রিয়া-চুমকি এখন ‘স্যাক্সোফনিস্ট সিস্টার’

TV9 Bangla Digital | Edited By: Shubhendu Debnath

Feb 06, 2022 | 3:18 PM

Panagarh: ছেলে বউমা নাতি নাতনি নিয়ে ভরা সংসার রীতিমতো ভরাডুবি হতে বসেছিল বর্ধমান জেলার পানাগড়ের কাঁকসা গ্রামের পবন বাদ্যকরের। ঠিক যে সময় আশার আলোর সন্ধান করছিলেন পবনবাবু, ঠিক সেই সময় তাঁর ঘরের লক্ষ্মীরাই এগিয়ে আসেন সরস্বতী রূপে।

Follow Us

শু ভে ন্দু দে ব না থ

পানাগড়: বাকি পাঁচজনের মতো করোনা আয় কেড়ে নিয়েছিল পবন বাদ্যকরের কাজ। ব্যান্ডে স্যাক্সোফোন বাজাতেন পবনবাবু। সংসার চালাতে নিজেরই একটা ব্যান্ড খোলার ইচ্ছে কিন্তু লোক কই। লকডাউন, নাইট কার্ফু, করোনাবিধি সমস্তই বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল জীবনে। ছেলে বউমা নাতি নাতনি নিয়ে ভরা সংসার রীতিমতো ভরাডুবি হতে বসেছিল বর্ধমান জেলার পানাগড়ের কাঁকসা গ্রামের পবন বাদ্যকরের। ঠিক যে সময় আশার আলোর সন্ধান করছিলেন পবনবাবু, ঠিক সেই সময় তাঁর ঘরের লক্ষ্মীরাই এগিয়ে আসেন সরস্বতী রূপে।

পবনবাবুর দুই ছেলের বউ প্রিয়া এবং চুমকি বাদ্যকর। ক্লাস এইটে উঠতেই সরস্বতীর আরাধনা শেষ হয়ে যায় তাঁদের জীবনে। সংসারের জোয়াল ঠেলতে ঠেলতেই সরস্বতী থেকে কখন যেনো লক্ষ্মী হয়ে উঠেছিলেন বাদ্যকর বাড়ির দুই বউ। স্বামী, ছেলে মেয়ে, শ্বশুর, শাশুড়ি নিয়েই সংসারে বাকি জীবনটা কেটে যাবে ভেবেছিলেন দুজনেই, কিন্তু আড়ালে বোধহয় মুচকি হাসছিলেন বীণাপানি। লকডাউনে শ্বশুর স্বামীর নাভিঃশ্বাস উঠতে দেখেছেন, এদিকে লকডাউনে ঘরের কাজ তেমন নেই, অনেকটাই অবসর। কী খেয়ালে যেনো দুজনেরই শখ হল শ্বশুরের কাছে স্যাক্সোফোন শিখবেন। শ্বশুরকে আর্জি জানাতেই স্বানন্দে অনুমতি দিলেন পবন বাদ্যকর। তাঁর ব্যান্ড গড়ে রোজগারের স্বপ্ন যেনো মরা গাঙে জোয়ার এনে দিল। শুরু হল শেখা। করোনা আবহেই মাত্র তিনমাসে একটা গান তুলে ফেললেন চুমকি-প্রিয়া। এমন মনোযোগী ছাত্রী পেয়ে উৎসাহের অন্ত নেই বৃদ্ধ পবনের। মনের মতো করে গড়তে লাগলেন নতুন ছাত্রীদের। এর মধ্যে মেয়ের মেয়ে অর্থাৎ ১১ বছরের নাতনী সঙ্গীতাকে বাবার কাছে রেখে গেলেন পবনবাবুর মেয়ে। নতুন পথ চলা শুরু হল বাদ্যকর পবনের। তিনজনেই ধীরে ধীরে মিউজিক ট্র্যাকে বাজানো শিখে নিলেন।

সচরাচর মেয়েরা স্যাক্সোফোন বাজায় না। এমনকি উৎসাহ দেওয়া হয় না শেখার বিষয়েও। আর মেয়েদের শখ! সে তো বাহুল্য। সমাজের বেঁধে দেওয়া নির্ধারিত মানসিকতার বাইরে গেলেই শুধু তিরস্কার নয় মেলে বাতিলেরও তকমা। শুনতে হয় “মেয়েছেলে! এসব বাজিয়ে কী হবে?” অজয়- দামোদর দুই শক্তিশালী নদীর মাঝামাঝি অবস্থানে সমান্তরালভাবে বহমান দুই জায়ের স্বপ্ন। বর্ধমানের শহরতলি পানাগড়ে মাত্র ৪২ শতাংশ মহিলার বাস, আর কাঁকসা গ্রামে তারও অনেক কম। কিন্তু গ্রাম্য পরিবেশ, চারদিকের সন্দেহ আর কানাঘুঁষো আটকাতে পারেনি দুই জায়ের অদম্য জেদ আর স্বপ্নকে।

বর্তমানে সারা দেশজুড়ে মহিলাদের সংসার ছেড়ে পালানো, হত্যা আর হননের গল্প সংবাদের শিরোনামে। স্রোতের বিপরীতে হাঁটলেই নাকচের ভয় যখন তাড়া করে বেড়ায় সেই সময় দাঁড়িয়ে নতুন করে পথ দেখাচ্ছেন প্রিয়া, চুমকি আর সঙ্গীতা। লকডাউন শিথিল হতেই ছাত্রীদের নিয়ে অনুষ্ঠানে হাজির পবনবাবু। আর প্রথম অনুষ্ঠানেই একেবারে বাজিমাত। আগুনতি মানুষকে নিজেদের সুরের জালে ভাসিয়ে নিয়ে গেলেন প্রিয়া, চুমকি আর ১১ বছরের ছোট্ট সঙ্গীতা। অনুষ্ঠানে সাড়ে তিন ঘন্টা বাজিয়ে মিলছে বার হাজার টাকা। তাঁদের সুরের মাদকতা ভিড়ের উল্লাসে সম্মতি আদায় চলেছে সন্তর্পণে।

সংসার সামলে প্রিয়া-চুমকি দুজনেই মা হয়েছেন। শুধু ইচ্ছে আর অধ্যাবসায় থাকলেই যে বয়স-সংসার- মাতৃত্ব সমস্ত বাধাই জয় করে যে উঠে দাঁড়ানো সম্ভব, তার জলজ্যান্ত উদাহরণ বাদ্যকর পরিবারের দুই বউমা। আর সঙ্গীতার যোগ দেওয়ায় ত্রিধারার স্রোত মিলে জীবন এগিয়েছে বাঁধ ভাঙা জলের মতো। মধ্যবিত্ত পরিবারের লক্ষ্মীর পরিচয় ঘুচিয়ে ওরা তিনজন এখন অন্য সরস্বতী। সমস্ত হিসেবের বাইরে ওদের পরিচয় এখন ‘স্যাক্সোফনিস্ট সিস্টার’!

বাংলা টেলিভিশনে প্রথমবার, দেখুন TV9 বাঙালিয়ানা 

বাংলা টেলিভিশনে প্রথমবার, দেখুন TV9 বাঙালিয়ানা 

বাংলা টেলিভিশনে প্রথমবার, দেখুন TV9 বাঙালিয়ানা 

বাংলা টেলিভিশনে প্রথমবার, দেখুন TV9 বাঙালিয়ানা 

শু ভে ন্দু দে ব না থ

পানাগড়: বাকি পাঁচজনের মতো করোনা আয় কেড়ে নিয়েছিল পবন বাদ্যকরের কাজ। ব্যান্ডে স্যাক্সোফোন বাজাতেন পবনবাবু। সংসার চালাতে নিজেরই একটা ব্যান্ড খোলার ইচ্ছে কিন্তু লোক কই। লকডাউন, নাইট কার্ফু, করোনাবিধি সমস্তই বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল জীবনে। ছেলে বউমা নাতি নাতনি নিয়ে ভরা সংসার রীতিমতো ভরাডুবি হতে বসেছিল বর্ধমান জেলার পানাগড়ের কাঁকসা গ্রামের পবন বাদ্যকরের। ঠিক যে সময় আশার আলোর সন্ধান করছিলেন পবনবাবু, ঠিক সেই সময় তাঁর ঘরের লক্ষ্মীরাই এগিয়ে আসেন সরস্বতী রূপে।

পবনবাবুর দুই ছেলের বউ প্রিয়া এবং চুমকি বাদ্যকর। ক্লাস এইটে উঠতেই সরস্বতীর আরাধনা শেষ হয়ে যায় তাঁদের জীবনে। সংসারের জোয়াল ঠেলতে ঠেলতেই সরস্বতী থেকে কখন যেনো লক্ষ্মী হয়ে উঠেছিলেন বাদ্যকর বাড়ির দুই বউ। স্বামী, ছেলে মেয়ে, শ্বশুর, শাশুড়ি নিয়েই সংসারে বাকি জীবনটা কেটে যাবে ভেবেছিলেন দুজনেই, কিন্তু আড়ালে বোধহয় মুচকি হাসছিলেন বীণাপানি। লকডাউনে শ্বশুর স্বামীর নাভিঃশ্বাস উঠতে দেখেছেন, এদিকে লকডাউনে ঘরের কাজ তেমন নেই, অনেকটাই অবসর। কী খেয়ালে যেনো দুজনেরই শখ হল শ্বশুরের কাছে স্যাক্সোফোন শিখবেন। শ্বশুরকে আর্জি জানাতেই স্বানন্দে অনুমতি দিলেন পবন বাদ্যকর। তাঁর ব্যান্ড গড়ে রোজগারের স্বপ্ন যেনো মরা গাঙে জোয়ার এনে দিল। শুরু হল শেখা। করোনা আবহেই মাত্র তিনমাসে একটা গান তুলে ফেললেন চুমকি-প্রিয়া। এমন মনোযোগী ছাত্রী পেয়ে উৎসাহের অন্ত নেই বৃদ্ধ পবনের। মনের মতো করে গড়তে লাগলেন নতুন ছাত্রীদের। এর মধ্যে মেয়ের মেয়ে অর্থাৎ ১১ বছরের নাতনী সঙ্গীতাকে বাবার কাছে রেখে গেলেন পবনবাবুর মেয়ে। নতুন পথ চলা শুরু হল বাদ্যকর পবনের। তিনজনেই ধীরে ধীরে মিউজিক ট্র্যাকে বাজানো শিখে নিলেন।

সচরাচর মেয়েরা স্যাক্সোফোন বাজায় না। এমনকি উৎসাহ দেওয়া হয় না শেখার বিষয়েও। আর মেয়েদের শখ! সে তো বাহুল্য। সমাজের বেঁধে দেওয়া নির্ধারিত মানসিকতার বাইরে গেলেই শুধু তিরস্কার নয় মেলে বাতিলেরও তকমা। শুনতে হয় “মেয়েছেলে! এসব বাজিয়ে কী হবে?” অজয়- দামোদর দুই শক্তিশালী নদীর মাঝামাঝি অবস্থানে সমান্তরালভাবে বহমান দুই জায়ের স্বপ্ন। বর্ধমানের শহরতলি পানাগড়ে মাত্র ৪২ শতাংশ মহিলার বাস, আর কাঁকসা গ্রামে তারও অনেক কম। কিন্তু গ্রাম্য পরিবেশ, চারদিকের সন্দেহ আর কানাঘুঁষো আটকাতে পারেনি দুই জায়ের অদম্য জেদ আর স্বপ্নকে।

বর্তমানে সারা দেশজুড়ে মহিলাদের সংসার ছেড়ে পালানো, হত্যা আর হননের গল্প সংবাদের শিরোনামে। স্রোতের বিপরীতে হাঁটলেই নাকচের ভয় যখন তাড়া করে বেড়ায় সেই সময় দাঁড়িয়ে নতুন করে পথ দেখাচ্ছেন প্রিয়া, চুমকি আর সঙ্গীতা। লকডাউন শিথিল হতেই ছাত্রীদের নিয়ে অনুষ্ঠানে হাজির পবনবাবু। আর প্রথম অনুষ্ঠানেই একেবারে বাজিমাত। আগুনতি মানুষকে নিজেদের সুরের জালে ভাসিয়ে নিয়ে গেলেন প্রিয়া, চুমকি আর ১১ বছরের ছোট্ট সঙ্গীতা। অনুষ্ঠানে সাড়ে তিন ঘন্টা বাজিয়ে মিলছে বার হাজার টাকা। তাঁদের সুরের মাদকতা ভিড়ের উল্লাসে সম্মতি আদায় চলেছে সন্তর্পণে।

সংসার সামলে প্রিয়া-চুমকি দুজনেই মা হয়েছেন। শুধু ইচ্ছে আর অধ্যাবসায় থাকলেই যে বয়স-সংসার- মাতৃত্ব সমস্ত বাধাই জয় করে যে উঠে দাঁড়ানো সম্ভব, তার জলজ্যান্ত উদাহরণ বাদ্যকর পরিবারের দুই বউমা। আর সঙ্গীতার যোগ দেওয়ায় ত্রিধারার স্রোত মিলে জীবন এগিয়েছে বাঁধ ভাঙা জলের মতো। মধ্যবিত্ত পরিবারের লক্ষ্মীর পরিচয় ঘুচিয়ে ওরা তিনজন এখন অন্য সরস্বতী। সমস্ত হিসেবের বাইরে ওদের পরিচয় এখন ‘স্যাক্সোফনিস্ট সিস্টার’!

বাংলা টেলিভিশনে প্রথমবার, দেখুন TV9 বাঙালিয়ানা 

বাংলা টেলিভিশনে প্রথমবার, দেখুন TV9 বাঙালিয়ানা 

বাংলা টেলিভিশনে প্রথমবার, দেখুন TV9 বাঙালিয়ানা 

বাংলা টেলিভিশনে প্রথমবার, দেখুন TV9 বাঙালিয়ানা 

Next Article