পশ্চিম বর্ধমান (দুর্গাপুর): নদীর ধারে জনজীবন যেমন ঝুঁকির, তেমনই কোলিয়ারি এলাকার মানুষেরও সবসময়ের সঙ্গী আতঙ্ক-উদ্বেগ। বিশেষ করে খোলামুখ খনি এলাকায়। যখন তখন ধস নামে, ঘরবাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে আসতে হয় বাসিন্দাদের। শনিবার রাতে ফের ধস দেখা দিল অন্ডালের বহুলায়। এই ঘটনায় আতঙ্কে প্রহর কাটছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। কখন কী ঘটে যায়, প্রমাদ গুনছেন তাঁরা। অন্ডালের বহুলা এলাকায় খোলামুখ খনি রয়েছে। সেই খনি সংলগ্ন জনবসতিপূর্ণ এলাকায় ধসের কারণে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এলাকার লোকজন জানান, শনিবার রাতে বহুলার পাথরপুকুর এবং অফিস বাদ্যকর পাড়ায় ভয়ঙ্কর ধস নামে। বাড়ির উঠোন ধসের কবলে তলিয়ে যায়। পুকুরের পাশেও একটা অংশ ঢুকে যায় মাটির নীচে। প্রত্যেক বছর বর্ষা এলে এই এক বিপদ এলাকাবাসীর। স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায়, প্রতি বছরই বর্ষার সময় কয়লা খনি এলাকায় মাটি ধসের ঘটনা ঘটে। তবে এই বছর তেমন বৃষ্টি না হলেও ধসের চোখরাঙানি রয়েই গিয়েছে।
শনিবার রাতে যখন ধস নামে, যে বাড়ির ঘটনা, সেখানে কেউ ছিলেন না। থাকলে বড় বিপদের মুখে পড়তে হতো বলেই মনে করছেন তাঁরা। তবে বাড়িতে ফিরে এই দৃশ্য দেখে কপালে হাত। খবর ছড়াতে আশেপাশেও ভয়ের পরিবেশ তৈরি হয়। ইসিএল নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন অনেকেই। এলাকার লোকজনের অভিযোগ, খোলামুখ খনি এলাকায় কয়লা উত্তোলনের সময় মাটির নীচে বিস্ফোরণ হয়। তার জেরেই ভূমিধসের ঘটনা ঘটে। একাধিকবার ইসিএল আধিকারিকদের জানানো হলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলেই দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের। ইসিএল কর্তৃপক্ষের গাফিলতির অভিযোগ তোলেন তাঁরা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় অন্ডাল থানার পুলিশ। স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রশাসনও আসে।
অতলী বাদ্যকর নামে ক্ষতিগ্রস্ত মহিলা বলেন, “সারারাত বসেছিলাম। এই অবস্থা দেখে আমাদের চোখে ঘুম নেই। আমাদের ঘরের সামনে যে চাঙর সেটাও ধসে গেছে। এবার আমার আমাদের কী হবে? দিনরাত যদি আমাদের সঙ্গে এসব হয় আমরা কী করে থাকব? আমাদের আজই ঘর চাই। কেউ আমাদের কথা শোনে না।” খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, পাণ্ডবেশ্বরের প্রাক্তন বিধায়ক সিপিএমের জেলা সম্পাদক গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায়। নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী জানান, তিনি জেলাশাসক ও ইসিএলের সঙ্গে কথা বলেছেন। এলাকায় বাসিন্দাদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের জন্য দাবি জানিয়েছেন।