পশ্চিম বর্ধমান (আসানসোল): সাদা পাঞ্জাবি, সাদা পায়জামা। কপালে ছোট্ট গেরুয়া টিকা। শুক্রবার বেলা ১১টা ৫৫ নাগাদ আসানসোল বিশেষ সিবিআই আদালতের এজলাসে ঢুকলেন অনুব্রত মণ্ডল (Anubrata Mondal)। ‘কেষ্টদা’ এজলাসে ঢোকার আগেই বীরভূমের জনা ৩০ তৃণমূল নেতা পৌঁছে গিয়েছেন সেখানে। বাইরে তখন আরও ৫০ জন। এজলাসে অনুব্রত মণ্ডল ঢুকে বসলেন একটি বেঞ্চে। পাশেই বসেছিলেন তৃণমূলের জেলা সহ সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায়। ভিতরেই ছিলেন দুবরাজপুরের প্রাক্তন বিধায়ক নরেশ বাউরি, দুবরাজপুরের তৃণমূল নেতা পীযূষ পাণ্ডে, ছিলেন রামপুরহাটের তৃণমূল নেতা ত্রিদিব ভট্টাচার্য-সহ অনেকে।
দু’ পক্ষের সওয়াল জবাব চলে প্রায় দেড় ঘণ্টা। এরপরই বিরতি। নিজের চেম্বারে যান বিচারক। আদালত সূত্রে খবর, এরপরই অনুব্রতর দিকে এগিয়ে আসেন তাঁর দলের লোকজন। ‘দাদা’কে ঘিরে চলতে থাকে ফিসফাস। সূত্রের খবর, সবই বীরভূমের সংগঠন সংক্রান্ত আলোচনা।
এর আগের দিনও এজলাসে বিরতি চলাকালীন এমনই ছবি দেখা গিয়েছিল। গরু পাচারকাণ্ডে ধৃত তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল সেদিনও পরামর্শ দিয়েছিলেন, পঞ্চায়েত ভোট যেন ভাল করে হয়। সূত্রের দাবি, এদিনও একই পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। সকলকে এক জোট হয়ে কাজ করার কথাও বলেন।
বীরভূমের এক তৃণমূল কর্মী অনুব্রত মণ্ডলের পা ছুঁয়ে প্রণামও করেন। রানিগঞ্জের এক আইনজীবীও এসেছিলেন এদিন। সূত্রের দাবি তিনি অনুব্রতকে বলেন, ‘দাদা চিনতে পারছেন?’। পাল্টা অনুব্রত তাঁকে বলেন, “রানিগঞ্জে যখন বক্তব্য রাখতে গিয়েছিলাম তখন তোমাকে দেখেছি। আমি যাকে একবার চিনি তাঁকে ভুলি না।”
সূত্রের দাবি, একইসঙ্গে অনুব্রত এদিন তাঁর দলের কর্মীদের বলেন, ‘খুব বেশিদিন তাঁকে আটকে রাখা যাবে না। সত্যের জয় হবেই।’ তিনি নাকি এমন কথাও এদিন বলেন, কে কী রকম তা তাঁর দেখা হয়ে গিয়েছে। তাঁর অনুপস্থিতিতে সকলে যেন ‘চাঁদু’ (মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা) ও ‘বিকাশ’ (বীরভূমের জেলা সভাধিপতি ও বিধায়ক বিকাশ রায় চৌধুরী)-এর কথা শুনে চলেন, সে বার্তাও দিয়েছেন বলে সূত্র মারফত জানা গিয়েছে।
এদিনও অনুব্রত মণ্ডলের জামিনের আবেদন খারিজ হয়ে যায়। ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত জেল হেফাজতে থাকতে হবে তাঁকে। এদিনও সিবিআইয়ের আইনজীবী কালীচরণ মিশ্র শান দেন অনুব্রতর প্রভাবশালী তত্ত্বে। এমনও বলেন, রাজ্যের এক মন্ত্রী তাঁকে তো বাঘের সঙ্গেও তুলনা করেছেন। এদিন আদালত থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় দেখা যায় অনুব্রত মণ্ডলের হাসিমুখ। অনুব্রত মণ্ডলের অনুগামীরাও বলেন, দাদা আমাদের এক থাকার বার্তা দিয়েছেন। আমরা সেই নির্দেশ পালন করব।
বীরভূমের তৃণমূল জেলা সহ সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, “অনুব্রত মণ্ডলকে বীরভূমের মানুষ ভালবাসেন। আমাদের বিশ্বাস উনি দ্রুত জামিনে মুক্ত হবেন। উনি আমাদের সকলকে এক হয়ে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। সামনেই পঞ্চায়েত ভোট।” একই কথা বলেন দুবরাজপুরের প্রাক্তন বিধায়ক নরেশ বাউরিও। তিনিও বলেন, অনুব্রতর দেওয়া সমস্ত পরামর্শই মেনে চলবেন তাঁরা।