আসানসোল: দুর্গাপুরের মেয়রের ইস্তফার পরেই উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে মিলিত হলেন তৃণমূলের জেলানেতৃত্ব। আজ বারাবনির পাঁচগাছিয়া দলীয় কার্যালয়ে বৈঠকে মিলিত হন দলের জেলা সভাপতি বিধান উপাধ্যায়, জেলা চেয়ারম্যান উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়, রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসন দাশু সহ দুর্গাপুর পুরসভার কাউন্সিলররা। ওই বৈঠকে জানানো হয় আগামী ২১ তারিখ দুর্গাপুর পুরনিগমের নতুন মেয়র পদে শপথ নেবেন।
আজকের বৈঠকে পুরনিগমের ৩৯ জন কাউন্সিলর উপস্থিত ছিলেন। যার মধ্যে অন্যতম হলেন পুর চেয়ারম্যান তথা দলের তরফে দুর্গাপুরের দায়িত্বে থাকা মৃগেন পাল। ৪৩ জন কাউন্সিলরের পুরবোর্ডের এক কাউন্সিলর মারা গিয়েছেন। একজন বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। এক কাউন্সিলর ব্যক্তিগত কাজে কলকাতায় থাকায় তিনি আসতে পারেননি। স্বাভাবিক ভাবেই সোমবার মেয়রের পদ থেকে পদত্যাগ করা দিলীপ অগস্তি জেলা নেতৃত্বর ডাকে হওয়া এদিনের বৈঠকে অনুপস্থিত ছিলেন।
আসানসোলে হওয়া এদিনের বৈঠকে দুর্গাপুরের পরবর্তী মেয়র কে হবে বা দিলীপ অগস্তি কেন পদত্যাগ করেছেন, তা নিয়ে বিস্তারিত কোনও আলোচনা হয়নি বলে সূত্র মারফত জানা গিয়েছে। বৈঠক শেষে জেলা সভাপতি সাংবাদিকদের বলেন, “মেয়র কেন পদত্যাগ করেছেন, তার কারণ হিসাবে তিনি তো শারীরিক অসুস্থতার কথা বলেছেন। তাহলে অন্য কোনও কথা আসছে কেন। এদিনের বৈঠকে কাউন্সিলরদের মেয়রের পদত্যাগের কথা দল জানিয়েছে। আগামী ২১ ডিসেম্বর দুপর বারোটার সময় নতুন মেয়র শপথ নেবেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দোপাধ্যায় যাকে মেয়র ঠিক করবেন, তাকেই সবাইকে মানতে হবে।”
বলতে গেলে, ২০২০ সালের প্রথম দিক থেকেই দিলীপ অগস্তির কাজ নিয়ে অসন্তোষ শুরু হয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশাসনিক বৈঠকে দিলীপ অগস্তিকে তার কাজকর্ম নিয়ে সতর্ক করেছিলেন। ২০২০ সালের নভেম্বরে পুরসভার কাজ নিয়ে সন্তুষ্ট না হওয়ায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাকে সরিয়ে দেওয়ার কথা বলেছিলেন। যদিও তা সেই সময় হয়নি। এরপর গত কয়েক মাসে বিভিন্ন ইস্যুতে তিনি বিতর্কে জড়িয়েছেন। বেশকিছু দিন আগেও তিনি মেয়র পদ থেকে পদত্যাগ করছেন বলে খবর ছড়ায়।
কিন্তু তখনও তিনি সরেননি বা তাকে সরানো হয়নি। কিন্তু সোমবার বিকেলের পরে দিলীপ অগস্তি মেয়র পদ থেকে পদত্যাগ করেন। তিনি পশ্চিম বর্ধমানের জেলাশাসক এস অরুণ প্রসাদকে পাঠানো পদত্যাগ পত্রে কারণ হিসাবে শারীরিক অসুস্থতার কথা বলেছেন। তারপর ২৪ ঘন্টা সময় পার হয়ে গেলেও, মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত পদত্যাগ করা নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দিলীপবাবুর কাছ থেকে পাওয়া যায়নি। সেই কারণে রাজনৈতিক মহল ও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বিভিন্ন ইস্যুতে বিতর্কে জড়িয়ে পড়ায়, সতর্ক করার পরেও পরিস্থিতির পরিবর্তন না হওয়ায় দলের রাজ্য নেতৃত্ব তাকে পদত্যাগ করতে বলে।
দুর্গাপুরের পরবর্তী মেয়র কে হতে চলেছেন, তা নিয়ে জেলা নেতৃত্ব এদিন কিছু খোলসা করেননি। তবে জানা গেছে, মেয়াদ শেষের কয়েক মাস আগে নেতৃত্ব পুর কাজ সামলানোর জন্য কাউন্সিলর নয় এমন কাউকে মেয়র করা যায় কিনা তা নিয়ে ভাবনা চিন্তা করছে। তা যদি শেষ পর্যন্ত সম্ভব না হয়, তাহলে কাউন্সিলরদের মধ্যে কাউকে করা হবে। সেক্ষেত্রে গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব না হয় তাও দেখা হবে। তবে জল্পনা রয়েছে প্রাক্তন বিধায়ক অপূর্ব মুখোপাধ্যায়ের স্ত্রী তথা মেয়র পারিষদ অনন্যা মুখোপাধ্যায় মেয়র হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন। প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের জুলাই মাসে দুর্গাপুর পুর বোর্ডের ৫ বছরের মেয়াদ শেষ হবে।
আরও পড়ুন: Dhupguri: বিবাহিত প্রেমিককে লুকিয়ে রেখেছে পরিবার, প্রতিবাদে ধরনা দুই সন্তানের মায়ের