আসানসোল : সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণের পর ওদের জীবনে এখন খুশির হাওয়া। এতদিন ধরে সবসময় ভয়ে ভয়ে থাকতে হত, কখন উর্দিধারীরা চলে আসবেন… সর্বক্ষণ এক দমবন্ধকর পরিস্থিতি। কিন্তু এখন শীর্ষ আদালত বলে দিয়েছে, যৌন পেশাকে আর বেআইনি বলা চলবে না। আদালতের পর্যবেক্ষণ, অন্যান্য পেশার মতো যৌন পেশাও একটি পেশা। যৌনকর্মীদেরও সমান অধিকার রয়েছে, মর্যাদা রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের এই পর্যবেক্ষণের পর, পশ্চিম বর্ধমান জেলার লছিপুরে যৌনকর্মীদের মধ্যে এখন অকাল বসন্ত। জেলার এই যৌনপল্লিতে প্রায় হাজার খানের মহিলা দেহ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। এতদিন ধরে এখানে গ্রাহকদের প্রবেশ করানোর জন্য উর্দিধারীদের নানান ধরনের উপঢৌকন দিতে হল বলে অভিযোগ। এবার থেকে সেই ‘জুলুম’ থেকে নিস্তার মিলবে বলেই আশাবাদী তাঁরা।
যৌন পেশার সঙ্গে যুক্ত এক মহিলা বলছেন, “আমদের এখানে অনেক ধরনের সমস্যা হচ্ছিল। আশা করি এবার গ্রাহকদের আসতে দেওয়া হবে। এবার থেকে আর পুলিশি অভিযান হয়ত হবে না। সুপ্রিম কোর্টের প্রতি আমরা ভীষণভাবে কৃতজ্ঞ।” শীর্ষ আদালতকে ধন্যবাদ জানিয়ে অন্য এক মহিলা জানিয়েছেন, “এর জন্য অনেক লড়াই হয়েছে। আমাদের জন্য যে ওনারা লড়েছেন, এটা খুব ভাল কাজ হয়েছে। আমরা চাই, পুলিশ যেন না অত্যাচার করে। কোভিডের সময় পুলিশ গ্রাহকদের তুলে নিচ্ছিল। এখনও তুলে নিচ্ছে। সেভাবে কেউ কাজ করতে পারছে না। আমরা চাই, পুলিশ যেন আর অত্যাচার না করে।”
এই যৌনপল্লিতে স্বাস্থ্য সচেতনতা ও যৌনকর্মীদের স্বাভাবিক জীবন যাপনের জন্য ১৯৯৮ সালে এখানে তৈরি হয় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা দুর্বার। বর্তমানে এই দুর্বার সমিতি প্রতিনিয়ত যৌনকর্মীদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতামূলক বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। পরিসংখ্যান বলছে, কুলটির লছিপুর এলাকায় রয়েছেন ৮৩২ জন যৌনকর্মী এবং চবকাতেও রয়েছেন ৫৪৭ জন। সুপ্রিম কোর্টের এই পর্যবেক্ষণের পর খুশি তাঁরাও। তাঁদের মতে, আর দশটা কাজের মতো দেহব্যবসাও একটা কাজ, এই কাজ এবার স্বীকৃতি পেল। এতে গ্রাহকদেরও সুরক্ষা সুনিশ্চিত হবে। পুলিশি হয়রানি থেকে মুক্তি পাবেন তাঁরা।