দাসপুর: সাদা দেওয়াল। সেই দেওয়ালে টাঙানো জগদীশ চন্দ্র বসু ও সুকান্ত ভট্টাচার্যের ছবি। মাঝে চওড়া ফাটল। আর সেই ফাটল দিয়ে বইছে বাতাস। এই চিত্রই এখন সরকারি স্কুলের। একবার মালদা (Malda), একবার পুরুলিয়া (Purulia)। পরপর দু’বার শৌচাগার ভেঙে মৃত্যু হয়েছিল পড়ুয়াদের। কিন্তু তারপরও কি হেলদোল রয়েছে প্রশাসনের? পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুরের দু’টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বেহাল অবস্থা দেখে উত্তরটা অন্তত না বলাই চলে।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঘাটালের (Ghatal) কুশপাতা প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং দাসপুরের বেলিঘাটা দেশবন্ধু প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্কুল ঘরের বেহাল অবস্থা। ক্লাস রুমের দেওয়ালে বড়বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। আর সেই ফাটলের মধ্যে দিয়েই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলছে পড়াশোনা। যেকোনও সময়, যে কোনও মুহূর্তে ঘটে যেতে পারে দুর্ঘটনা। আশঙ্কায় মধ্যে রয়েছে পড়ুয়ারা থেকে শুরু করে শিক্ষক-শিক্ষিকারা ও অভিভাবকরা সকলেই। শুধু তাই নয়, মাঝে মধ্যে স্কুলের দেওয়ালের ফাটল থেকে বের হচ্ছে সাপ এমনটাই জানাচ্ছেন অভিভাবকরা।
প্রথমে আসা যাক কুশপাতা প্রাথমিক স্কুলের অবস্থায়। সেখানে ঘরের দেওয়ালের একাধিক জায়গায় দেখা দিয়েছে বড়-বড় ফাটল। তারই মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণভাবে চলছে ক্লাস। বিদ্যালয়টি তৈরি হয়েছিল ১৯৩৮ সালে। মাটির তৈরি এই স্কুল।
স্কুল শিক্ষিকাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে স্কুলের বেহাল অবস্থা। স্কুল ঘরের একাধিক জায়গায় দেখা দিয়েছে বড় বড় ফাটল, ঝুঁকিপূর্ণভাবে চলছে ক্লাস, যে কোনও সময় ঘটে যেতে পারে বড় দুর্ঘটনা। মহকুমা প্রশাসন থেকে শুরু করে জেলা প্রশাসন কেউ স্কুল ঘরের বেহাল অবস্থা লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। এমনকী জেলা প্রশাসন থেকেও স্কুল পরিদর্শন করে গিয়েছেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনও সুরাহা হয়নি। স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাস নেওয়ার দু’টি রুম রয়েছে। তার মধ্যে একটি রুম সম্পূর্ণ বেহাল যার কারণে রুমটি বন্ধ রাখা হয়েছে।
বর্তমানে একটি রুমের মধ্যে ৭৭ জন পড়ুয়া একসঙ্গে ক্লাস করছে। স্কুলে নতুন ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হতে আসলেও ভর্তি নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না কারণ স্কুলে বসার জায়গা নেই। শুধু তাই নয়, স্কুলঘরের অবস্থা দেখে অভিভাবকেরা ভর্তি করছে না বলেই দাবি কর্তৃপক্ষের। এই বিষয়ে পার্শ্ব শিক্ষিকা শান্তনা গুড়িয়া বলেন, ‘ভগ্ন দশায় রয়েছে স্কুল। আমাদের পড়াশোনা করাতে খুবই অসুবিধা হয়।’
অপরদিকে, দাসপুরের বেলিয়াঘাটা দেশবন্ধু প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছবিটাও দেখা গেল ঠিক একই রকম। ওই স্কুলের শিক্ষক রাকেশ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আমাদের স্কুলের ১৬৯ জন ছাত্রছাত্রী রয়েছে। স্কুল ভবনের অবস্থা খুবই খারাপ। ঝুঁকিপূর্ণভাবে চলছে ক্লাস, যে কোনও সময় ঘটে যেতে পারে দুর্ঘটনা। আমরা চাই স্কুলের দিকে নজর দিক প্রশাসন।’
এই বিষয়ে ঘাটাল মহকুমা শাসক সুমন বিশ্বাস বলেন, ‘যে সমস্ত ভবনগুলির পরিকাঠামো খারাপ, সেগুলি তথ্য সংগ্রহ করেছি। আরও কিছু বাকি আছে। সে সব তথ্যও জোগাড় করা হচ্ছে। এরপর সমস্ত তথ্য জেলায় পাঠাবো। এবং দ্রুত স্কুলগুলিকে সারিয়ে তোলার ব্যবস্থা করব।’
উল্লেখ্য, মালদার মোথাবাড়ি এলাকায় একটি স্কুলের শৌচাগারের দেওয়ার ভেঙে এক পড়ুয়ার মৃত্যু হয়েছিল। গুরুতর আহত হয়েছিল আরও একজন। এরপর পুরুলিয়ার আদ্রায় সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। ফের স্কুলের শৌচাগারের লাগোয়া দেওয়াল চাপা পড়ে মৃত্যু এক নাবালকের। শুক্রবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে পুরুলিয়ার আদ্রা থানা এলাকায় শ্যামসুন্দরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। মৃত ওই পড়ুয়ার নাম মণীন্দ্র চিত্রকর। বয়স ৯ বছর।