ঝাড়গ্রাম: ভোট এলেই গাড়ি বা হেলিকপ্টারে চেপে তাঁরা আসেন, নানা রকম আশ্বাস দিয়ে যান। ভোট ফুরোলে আর দেখা পাওয়া যায় না। রাজনৈতিক নেতাদের সম্পর্কে এমন ধারনাই পোষণ করেন বেশিরভাগ মানুষ। তবে বাংলার রাজনীতিতে এখন সব দলেরই অন্যতম হাতিয়ার, জনসংযোগ। মানুষের কাছে গিয়ে যে বোঝাতে পারবে আমি তোমাদেরই লোক, ভোটের বাক্সে সেইই কিছুটা এগিয়ে যাবে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। বিরসা মুণ্ডার জন্মদিনে তাই আদিবাসী সংযোগের সুযোগ ছাড়লেন না শাসক-বিরোধী কোনও পক্ষই।
জঙ্গলমহলের এক প্রান্তে হাজির ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর অপর প্রান্তে বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। কেউ বাড়ির উঠোনে গিয়ে মহিলাদের সঙ্গে কথা বললেন, আবার কেউ অন্দরমহলে মেঝেয় বসে ভাত-ডাল খেলেন। কথা বললেন, গল্প করলেন, শুনলেন অভাবের কথাও।
বাড়ির উঠোনে খোদ মুখ্যমন্ত্রী উপস্থিত হবেন, এটা বোধ হয় স্বপ্নেও ভাবেননি মুচিডাঙা গ্রামের বাসিন্দারা। মঙ্গলবার বিরসা মুণ্ডার জন্মদিন উপলক্ষে পশ্চিম মেদিনীপুরে যান মমতা। সভা সেরে হেলিকপ্টারে চেপেই ঝাড়গ্রাম রাজবাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু সভা শেষে মমতা বলে বসলেন, হেলিকপ্টারে নয়, তিনি যাবেন গাড়িতে চেপেই। সঙ্গে সঙ্গে গাড়ির ব্যবস্থাও হল।
গাড়িতে যাওয়ার পথে মুচিবাঁধ গ্রামে আচমকাই নেমে পড়েন মমতা। এলাকায় আদিবাসী পরিবারের বাড়ির উঠোনে পৌঁছে যান তিনি। তাঁকে সামনে পেয়েই অভাব-অভিযোগের কথা বলেন মহিলারা। তাঁরা জানান, তাঁদের বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হয়নি। পঞ্চায়েতে গেলে, সাহায্য করা তো দূরের কথা, কথাই বলতে চান না কেউ। এ কথা শুনেই মমতা স্পষ্ট জানান, স্থানীয় নেতারা কী বলছেন, তা তাঁর জানা নেই, তবে তিনি বলছেন, ২০২৪-এর মধ্যে ঘর তৈরি করে দেওয়া হবে।
আর এক জায়গায় গেলে মুখ্যমন্ত্রীকে জলের সমস্যার কথা জানান আদিবাসীরা। তাঁদের অভিযোগ, পঞ্চায়েতে গেলে বের করে দেওয়া হয় তাঁদের। সে সমস্যাও মেটানোর আশ্বাস দেন মমতা। মহিলাদের সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলেন তিনি। এক শিশুকে মায়ের কোল থেকে নিয়ে আদরও করেন।
চপ ভেজে আয় করার কথা মমতা অনেক সময় বলেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর সেই পরামর্শকে কটাক্ষ করে প্রতীকী চপ বিক্রি করতেও দেখা গিয়েছে বিরোধী দলের নেতাদের। তবে সে সব সমালোচনাকে তোয়াক্কা না করে এবার নিজেই চপ ঙাজলেন মমতা। পশ্চিম মেদিনীপুরের একটি চা-চপের দোকানে এদিন চপ বিক্রেতার সঙ্গে হাত লাগান মুখ্যমন্ত্রী।
মমতাকে দেখতে, দোকানের সামনে ভিড় করেন এলাকার মানুষ। নিজে হাতে চপ ভেজে, তেল ছেঁকে, কাগজে মুড়ে মানুষের হাতে তুলে দেন তিনি। সবাই পেলেন কি না, খোঁজও নেন তৃণমূল নেত্রী। দোকানে থাকা চকোলেটের কৌটো খুলে শিশুদের চকোলেটও দেন তিনি।
এদিন ঝাড়গ্রামের সভায় যোগ দেন সুকান্ত মজুমদার। ঝাড়গ্রাম ব্লকের মানিকপাড়া অঞ্চলের ঠাকুরথান গ্রামে বিজেপি রাজ্য সভাপতি একটি আদিবাসী বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজ সারেন তিনি। ঠাকুরথান গ্রামের বাসিন্দা শত্রুঘ্ন মুদির বাড়িতে আয়োজন করা হয়েছিল। শালপাতায় পরিবেশন করা হয় ভাত, ডাল, মাছ।
খাওয়া সেরে এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলেন সুকান্ত। আড্ডা দেন বেশ কিছুক্ষণ। শোনেন তাঁদের সমস্যার কথা। এরপর ঝাড়গ্রামে বিজেপির কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষের বাড়ি যান তিনি। তাঁর মায়ের হাতে ফল মিষ্টি দিয়ে আসেন।
এই ধরনের জনসংযোগ অবশ্য নতুন নয়। একুশের নির্বাচনের সময় অমিত শাহ, জে পি নাড্ডাদের এভাবেই সাধারণ মানুষের বাড়িতে গিয়ে খাওয়া-দাওয়া করতে দেখা গিয়েছে। শুধু তাই নয়, সম্প্রতি বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে চায়ের দোকানে ‘চায়ে পে চর্চা’ শুরু করেছেন দিলীপ ঘোষ। আর তৃণমূলের তরফে একাধিক কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে এই জনসংযোগের জন্য। বিশেষত পঞ্চায়েত ভোট এগিয়ে আসায় আরও বেশি করে মাটির কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়ার চেষ্টা করছে শাসক দলে। ‘চলো গ্রামে যাই’ নামেও একটি কর্মসূচি শুরু হয়েছে সম্প্রতি। তবে কে সত্যিকারের কাছের মানুষ বলে বিশ্বাস তৈরি করতে পারছে, তার প্রমাণ মিলবে ভোটবাক্সেই।