পশ্চিম মেদিনীপুর: “মুখ্যমন্ত্রীর মাথায় যা আসে, তাই হঠ্ করে করে ফেলেন! চিন্তা ভাবনা করেন না।” লোকাল ট্রেনের সময়সূচি বদল নিয়ে এবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ।
পশ্চিম মেদিনীপুরে চা চক্রে যোগ দিয়ে তিনি বললেন, “প্রথমে কেন ৬ টা করা হয়েছিল? রাজ্য সরকার ঠিক করুক আগে লোকাল ট্রেন চলবে কী চলবে না, কখন চলবে! মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাথায় যা আসে ফট করে বলে দেন। লক্ষ্মীর ভান্ডার করলেন, এখন বন্ধ করে দিচ্ছেন। দুয়ারে সরকার করলেন, বন্ধ করে দিচ্ছেন। চিন্তা ভাবনা না করে সিদ্ধান্ত নেন।”
প্রসঙ্গত, লোকাল ট্রেনের সময়সীমা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রথম থেকেই একটা বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছিল। কারণ রাজ্য সরকার প্রথমে স্পষ্ট করেছিল, শেষ লোকাল ছাড়বে ৭টার সময়। অর্থাৎ ৭ টার আগে কারোর বাড়ি ফেরার ট্রেন ৬.২০তেও থাকতে পারে। তার ক্ষেত্রে সেটাই শেষ ট্রেন। প্রান্তিক স্টেশনগুলির ক্ষেত্রেও এই একই নিয়ম। সেক্ষেত্রে সোমবার এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি হয় শিয়ালদা-হাওড়া স্টেশনগুলিতে। থিকথিকে ভিড় ভয় ধরায় আরও। পরিস্থিতি বেগতিক বোঝে সরকারও।
পরে জানিয়ে দেওয়া হয়, শেষ ট্রেন চলবে রাত দশটা পর্যন্ত। রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্ত বদলে বিরোধীদের কটাক্ষ হয় তীব্রতর। দিলীপ ঘোষ বলেন, “হাজার হাজার মানুষ প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে আছেন। ৬ টার সময় ট্রেন ছেড়ে দিলে রাতে ডিউটি করেন যাঁরা, তাঁরা আসবেন কী করে? ৫ টায় অফিস শেষ করে স্টেশন পৌঁছতেই ৬-সাড়ে ৬টা বেজে যায়। কী করে আসবেন, ভাবা উচিত ছিল আগেই।” দিলীপের সংযোজন, “মানুষকে বিনা কারণে কষ্ট দেওয়া হচ্ছে। ভয়ের পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে। চিন্তা ভাবনা করেই করা উচিৎ ছিল সিদ্ধান্ত নেওয়ার।”
প্রসঙ্গত, সোমবার ছিল বিধিনিষেধের প্রথম দিন। আগে থেকেই ছিল বিভ্রান্তি। অশান্তি যে হতই, তার আঁচও মিলেছিল আগেই। সোমবার বিকেলেই হাওড়া স্টেশন ও শিয়ালদা স্টেশনে দেখা গেল বিভ্রান্তি। সোমবার বিকেলেই হাওড়া স্টেশনে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন নিত্যযাত্রীরা। তাঁদের অভিযোগ, ৭ টা পর্যন্ত ট্রেন চলার কথা থাকলেও ৫ টার আগেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে লোকাল ট্রেন। ফলে চরম সমস্যায় পড়েছেন নিত্যযাত্রীরা।
যাত্রীদের আরও অভিযোগ, রেলের অফিসারদের কাছে গেলে তাঁরা দায়সারা উত্তর দেন। এক যাত্রী বলেন পূর্ব রেলের দফতর লেখা থাকা সত্ত্বেও যাত্রীদের বলা হয়েছে, পূর্ব রেল সংক্রান্ত কোনও তথ্য পাওয়া যাবে না। তাঁদের প্রশ্ন, ‘শিয়ালদহ থেকে যদি ৭ টা পর্যন্ত ট্রেন চালানো হয়, হাওড়া থেকে কেন ট্রেন চলবে না?’ শিয়ালদহ আর হাওড়া শাখা অর্থাৎ পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব রেলের ক্ষেত্রে সময় নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। বিধাননগরেও এ দিন বিশৃঙ্খলার ছবি দেখা যায়। এই স্টেশন থেকে একাধিক জায়গায় যাওয়ার ট্রেন ছাড়ে। সেই মতো বহু মানুষ এ দিন ৭ টার আগে ট্রেন ধরতে তড়িঘড়ি হাজির হন স্টেশনে। ট্রেনও ঢোকে সময় মতো। কিন্তু যাত্রী সংখ্যা এতই বেশি হয়ে যায়, যে অনেকেই ট্রেনে উঠতে পারেন না। অনেকে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনে ওঠেন। দমদমেও দেখা যায় একই ছবি। দমদম স্টেশন থেকে বনগাঁ লোকালে উঠতে গিয়ে প্রবল ভিড়ে পড়ে গিয়ে আহতও হন এক যাত্রী।
এই পরিস্থিতিতে তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত বদল করে নবান্ন। জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, সন্ধ্যা সাতটা নয়, লোকাল ট্রেন চলবে রাত ১০টা পর্যন্ত।
আরও পড়ুন: Kolkata Airport: কলকাতা থেকে দুুবাইগামী বিমানের পাঁচ যাত্রী পজিটিভ, চাঞ্চল্য