ঘাটাল: নাম দুর্গা। দশ হাত নেই তাঁর। কিন্তু ২ হাতেই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। বিষমদের বিরুদ্ধে তাঁর লড়াই। একা এই লড়াই শুরু করলেও এখন রীতিমতো বাহিনী রয়েছে তাঁর। সেই বাহিনীর সদস্যা সংখ্যা ৫০ ছাড়িয়েছে। এলাকায় বিষমদের কারবার শুরু হলেই তা বন্ধ করতে উদ্যত হন দুর্গার প্রমীলা বাহিনী। এই লড়াই দেখে দুর্গাদের পাশে থাকে প্রশাসনও।
গ্রামে গ্রামে চোলাই মদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে এলাকার পরিচিত মুখ দুর্গা মালিক। বিষমদ খেয়ে অকালে প্রাণ হারিয়েছিলেন তাঁর স্বামী ও এলাকার অনেক কম বয়সী যুবক। নিজের গ্রাম থেকে বিষমদের ব্যবসা বন্ধ করতে এলাকার মহিলাদের নিয়ে একটি প্রমীলা বাহিনী গঠন করেন দুর্গা । প্রশাসনের সাহায্য নিয়ে দুর্গার তৈরি প্রমীলা বাহিনী এলাকা থেকে বিষমদের কারবার বন্ধ করেন।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঘাটাল ব্লকের মনোহরপুর দুই নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত। সেখানেই বাড়ি দুর্গা মালিকের। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, এক সময় এলাকার বহু মানুষই এই বিষ মদ কারবারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বিষমদ কারবারের জেরে এলাকার অনেক যুবক অকালে প্রাণ হারিয়েছেন। অনেক চেষ্টা করেও প্রশাসন এই বিষমদের কারবার বন্ধ করতে পারেনি। এলাকারই গৃহবধূ দুর্গা মালিক প্রথম এই বিষ মদ কারবারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। এলাকার প্রায় ৫০ জন মহিলাকে সংগঠিত করে তৈরি করেন প্রমীলা বাহিনী। প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা পালা করে লাঠি হাতে গ্রামে টহল দিতেন এই প্রমিলা বাহিনীর সদস্যরা। প্রথম দিকে এই বিষমদ কারবার বন্ধ করতে গিয়ে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছিল এই প্রমিলা বাহিনীকে। পরবর্তীতে প্রশাসনের সাহায্যে মনোহরপুর এলাকা থেকে বিষমদের কারবার বন্ধ করেন এই প্রমিলাবাহিনীর সদস্যরা, যার নেতৃত্বে ছিলেন দুর্গা মালিক।
দুর্গার দাবি খুব কম বয়সে তিনি বিধবা হন। তার পরই সংসারের হাল ধরতে হয় তাঁকে। শুরু করেন মাছের ব্যবসা। সঙ্গে বিষমদ বন্ধের জন্য লড়াই। এ নিয়ে দুর্গা বলেছেন, “আমার স্বামী, দেওরের মৃত্যু হয়েছে বিষমদে। এর পর আমরা সংগঠিত হয়ে এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই। অন্য গ্রামেও আমরা গিয়েছি বিষমদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছি। এখন প্রশাসনও পাশে দাঁড়ায়।”
গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান জয়দেব দোলই বলেছেন, “শুধুমাত্র সরকারি নজরদারির মাধ্যমে এই বিষমদ বন্ধ করা সম্ভব নয়। দুর্গাবাহিনীর মতো স্থানীয় বাসিন্দাদের নজরদারি থাকলে তবেই বিষমদের কারবার বন্ধ হবে।”