মেদিনীপুর: কথিত আছে রাজা রাজিবলোচন রায়ের সময়ে জাড়া রাজবাড়ির পুজোতে আসতেন রাজা রামমোহন রায় ও বিদ্যাসাগরও। এখন সেই জৈলুস কমেছে। কিন্তু ২২৪ বছর ধরে প্রাচীন প্রথা রীতিনীতি মেনে আজও চলে আসছে জাড়া জমিদার বাড়ির দুর্গাপুজো। এলাকাবাসীদের কেউ কেউ বলেন, জাড়া রাজবাড়ির পুজো-কেউ বলে জাড়া জমিদার বাড়ির পুজো, তবে এই জাড়া দুর্গা পুজোকে ঘিরে একটা চরম উন্মাদনা থাকে গ্রামে।
জানা গিয়েছে, ১৭৪৭ খ্রিস্টাব্দে জমিদার বাড়ির প্রতিষ্ঠা করেন রামগোপাল রায়, রাম গোপাল রায়ের সন্তান রাজিব লোচন রায় বর্ধমান রাজার থেকে রাজ উপাধি পান। জমিদারির শ্রী বৃদ্ধি হয় সেই সময়েই রাজীব লোচন দুর্গাপুজো শুরু করে।
পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোণা ১ নম্বর ব্লকের জাড়া গ্রামে অবস্থিত রায় পরিবারের এই জমিদার বাড়ির প্রাচীন ভগ্নাংশের এখনও জমিদার বাড়ির সাক্ষ্য বহন করে চলেছে।
বৈষ্ণব মতে পুজো হওয়ায় এখানে কোনও বলি প্রথা নেই, তবে অন্যান্য জায়গা থেকে এখানে পূজোর পদ্ধতি কিছুটা হলেও আলাদা, যেমন পুজোতে ঢাক বাজে না, বায়ে ঢোল সানাই বসে নহবথ, অষ্টমীতে বাড়ির মহিলারা সিঁদুর খেলেন। পুজোর ক’দিন জমিদার বাড়ির মহিলাদের হাতে তৈরি ১৭টি পদের রান্না ভোগ নিবেদন করা হয় দেবীকে।
জমিদার বাড়ির সদস্যদের দাবি, এই পুজোতে আসতেন বিদ্যাসাগর ও রাজা রামমোহন রায়। রাজিব লোচন রায়ের বন্ধু ছিলেন রামমোহন রায় আর জাড়া জমিদার বাড়ির সঙ্গে ভাল সম্পর্ক ছিল ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের। পুজোর দিনগুলিতে তাঁদেরও পায়ের ধুলো পড়ত প্রাঙ্গনে। মহানায়ক উত্তম কুমারের এন্টনি ফিরিঙ্গি সিনেমার শুটিংও হয়েছে এই দুর্গা দালানেই।
জাড়া জমিদার বাড়ির সদস্যরা এখন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বসবাস করেন। কর্মসূত্রে তাঁরা সেখানেই থাকেন। পুজোর ক’দিন সকলেই আসেন তাঁদের জন্মভিটায়।