মেদিনীপুর: প্রায় কোটি টাকা খরচ করে গ্রাম পঞ্চায়েতের উদ্যোগে মেদিনীপুর সদর ব্লক পঞ্চায়েত সমিতির তত্ত্বাবধানে গত কয়েক বছর আগেই শুরু হয়েছিল ইকোপার্ক। সাধারণ মানুষের করের টাকায় তৈরি সেই পার্ক রক্ষণাবেক্ষণ এবং নজরদারির অভাবে পরিণত হয়েছে মদ-জুয়ার ঠেকে। মেদিনীপুর শহর লাগোয়া সেই পার্কে দিনের বেলায় চড়ে বেড়াচ্ছে গরু-ছাগল। আর সন্ধ্যা ঘনালেই মদ-গাঁজার আসর বসছে সেখানে। সমাজবিরোধীরা জুয়ার ঠেকও সেখান থেকে চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ।
মাত্র ৫ বছরের মাথায় বন্ধ হয়ে গেল প্রায় কোটি টাকা খরচ করে তৈরি হওয়া পার্ক। ২০১৫-১৬ অর্থবর্ষে স্বামী বিবেকানন্দ ইকোপার্ক নামে একটি পার্ক তৈরি হয়েছিল। প্রায় ১০০ বিঘা জায়গার উপর কংসাবতী নদী তীরবর্তী এলাকায় তৈরি হয়েছিল এই পার্ক। শুধু পার্কে যাওয়ার জন্য প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা খরচ করে মেদিনীপুর-খড়্গপুর উন্নয়ন পর্ষদের পক্ষ থেকে তৈরি করা হয়েছিল রাস্তা। সেই রাস্তা আছে। আছে সবরকম ব্যবস্থা। কিন্তু পার্কের মধ্য শুধুই অব্যবস্থার চিত্র। পর্যটকদের রাত্রিযাপনের জন্য কংসাবতী নদী তীরবর্তী এলাকায় জঙ্গল ঘেরা পার্কের মধ্যে তৈরি হয়েছিল ‘জঙ্গলকন্যা’ নামক একটি রিসোর্ট। সবমিলিয়ে প্রায় কোটি টাকা খরচ হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। কিন্তু পঞ্চায়েত বা প্রশাসনের রক্ষণাবেক্ষণের অভাবেই পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে এই ইকোপার্ক।
ইকোপার্কের মধ্যে থাকা জঙ্গল কন্যা রিসোর্ট এখন বহিরাগত মানুষের আড্ডা মারার জায়গা। রিসটের বা অতিথিশালায় নেই কোনও নিরাপত্তা। জানলা, দরজাও ভেঙে নিয়ে চলে যাওয়া হয়েছে। নেই ইলেকট্রিকের ব্যবস্থা। আর তার ভিতরে বসেই মদ-জুয়ার আড্ডা চলছে। টিভি৯ বাংলার ক্যামেরায় তা ধরাও পড়েছে। একসময় ওই অতিথি শালার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি জানিয়েছেন, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবেই পার্কের এই পরিস্থিতি। পার্ক যখন ঠিক মতো চালু ছিল তখন শীতের মরশুমে পর্যটক ও সাধারণ মানুষ আসতেন এখানে। ইকো পার্কে পর্যটকদের আগমন ঘিরে স্থানীয় মানুষেরও রোজগার হত। কিন্তু লোক না আসাও তা বন্ধ হয়েছে।
কিন্তু মাত্র পাঁচ ছয় বছরের মধ্যে কি এমন হল, যে একটা পার্কের রক্ষণাবেক্ষণে কোনও নজরই দিল না প্রশাসন? এ নিয়ে মনিদহ গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান নির্মল কুমার ঘোষ বলেছেন, “২০২৩ সালের নতুন পঞ্চায়েত গঠনের পরেই তাঁরা ঐ পার্ক নিয়ে উদ্যোগী হয়েছিলেন। ওই এলাকায় মাইকিং করে জানানো হয়েছে যাতে ওই পার্কের ভিতরের জিনিসপত্র কেউ চুরি না করে।” তিনি আরও জানিয়েছেন, স্থানীয় পঞ্চায়েতের সঙ্গে তৎকালীন গ্রাম পঞ্চায়েতের মিল না থাকাতেই এই অবস্থা আজ পার্কের। প্রকৃতির মধ্যে সাধারণ মানুষের ঘোরার এবং ছুটি কাটানোর জায়গা হিসাবে কবে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে, সেই প্রশ্নই এখন ঘুরছে এলাকাবাসী থেকে সাধারণ মানুষের মধ্যে।