ডেবরা: করোনাবিধিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে মালদায় চলছিল সরকারি স্কুল। রীতিমত নোটিস দিয়েই প্রধান শিক্ষক সেই ক্লাস নিচ্ছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে আর মালদায় যখন এই ছবি তখন ঠিক অন্য রকম ছবি ধরা পড়ল পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরার প্রত্যন্ত গ্রামে। সেখানেও ক্লাস চলছে তবে অন্যরকমভাবে।
করোনা পরিস্থিতির জেরে প্রাথমিকভাবে স্কুলের দরজা বন্ধ গত প্রায় দু’বছর ধরে। পড়ানো বন্ধ থাকায় শিশুদের লেখাপড়া নিয়ে উদ্বেগে শিক্ষক ও অভিভাবকরা। এই পরিস্থিতিতে পড়ুয়াদের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে স্কুলের গাছতলাতেই ক্লাস নেওয়া শুরু করে দিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষক-শিক্ষিকারা।
কিন্তু কীভাবে ক্লাস চলছে?
ডেবরা ব্লকের জোতহাড়ো জ্ঞানাদাময়ী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকা ও অভিভাবকদের উদ্যোগে গাছের তলায় পড়াশোনা শুরু হয়েছে চলতি মাসের প্রথম থেকে। শিশু থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত ১১০ জন পড়ুয়াকে নিয়ে পালা করে ক্লাস চলছে। সোম থেকে শুক্রবার পর্যন্ত প্রতিদিন এক একটি ক্লাসের পড়ুয়াদের নিয়ে ক্লাস চলছে গাছের তলায়। সেখানে আসন পেতে ওই ক্লাস চলছে। ক্লাস নিচ্ছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক দীপঙ্কর মাইতি, সহ-শিক্ষক অরুপ ভর্ট্টাচার্য। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বাংলা, ইংরাজি, অঙ্ক সহ বিভিন্ন বিষষের ক্লাস হয়।
স্কুল বন্ধ থাকা সত্ত্বেও ক্ষুদে পড়ুয়াদের নিয়ে এ ভাবে ক্লাস কেন?
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দীপঙ্কর মাইতি বলেন, ‘‘করোনা পরিস্থিতির জন্য প্রাথমিক স্কুল বন্ধ থাকায় শিশুদের পড়াশোনার খুবই ক্ষতি হচ্ছে। অনেক পড়ুয়া পড়াশোনায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। তাদের মানসিক বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে। অভিভাবকরা আমাদের কাছে প্রায়ই জিজ্ঞাসা করেন স্যার স্কুল কবে খুলবে? মূলত অভিভাবকদের আগ্রহেই আমরা স্কুলের পড়ুয়াদের নিয়ে পড়াশোনা চালু করেছি। এতে স্কুলের বর্তমান শিক্ষক-শিক্ষিকরাও সহযোগিতা করছেন।’’ তিনি আরও জানান, “সরকারি নিয়ম অনুযায়ী স্কুলে পড়ুয়াদের নিয়ে ক্লাস করায় নিষেধ রয়েছে। তাই বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে স্কুলের কাছে এই খোলা মাঠে আসন পেতে ক্লাস করা হচ্ছে। করোনা সতর্কতা বিধি মেনেই শিক্ষক থেকে পড়ুয়া সবাই মাস্ক পরে আসছে। প্রতিটি ক্লাসের অধিকাংশ পড়ুয়াই হাজির হচ্ছে।’’
ওই স্কুলের পরিচালন সমিতির যুক্তি, ‘‘করোনা পরিস্থিতির জন্য স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শিশুদের পড়াশোনার খুব ক্ষতি হচ্ছে। অভিভাবকদের তরফে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অনুরোধ করেছিলাম করোনা বিধি মেনে যাতে পড়ুয়াদের পড়াশোনা চালু করা যায়। স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা এগিয়ে আসায় বিকল্প উপায়ে পড়ুয়াদের পড়াশোনা চালু করা গিয়েছে। শিক্ষক ও অভিভাবকদের যৌথ উদ্যোগেই এভাবে পড়াশোনা সম্ভব হচ্ছে।’’
এক অভিভাবক রুমা দাস বলেন, ‘‘স্কুল বন্ধ থাকায় ছেলের পড়ার খুবই ক্ষতি হচ্ছিল।আমরা চাইছিলাম সপ্তাহে অন্তত একদিন স্কুলে পড়াশোনা হোক। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাছে অনুরোধ করেছিলাম। শিক্ষক-শিক্ষিকরা এগিয়ে আসায় আমরা খুশি।’’ স্কুলের পড়ুয়া সুপ্রিয়া দাস জানায়, ‘‘অনেকদিন স্কুলে যেতে পারি না। মন খারাপ লাগে। তবে এখানে স্যারেরা এসে আমাদের পড়াচ্ছেন।খুব ভাল লাগছে।’’
আরও পড়ুন: Goa Assembly Election: পিতার মূল্যবোধ দেখাল পথ! পদ্ম পতাকা ছাড়লেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর ছেলে উৎপল