খড়গপুর: ঘনঘন কান্নার রোল। বুকফাটা আর্ত চিৎকার। এখন এই ছবি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়গপুর শহরের বারবেটিয়া এলাকায়। লাদাখের শিয়ক নদীতে পড়ে মৃত্যু হয়েছে ৭ জওয়ানের। তাঁর মধ্যে রয়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার এক যুবক। তাঁর মৃত্যুর খবর, শুক্রবার মধ্যরাত্রে এসে পৌঁছেছে বারবেটিয়া এলাকায় খুটিয়া পরিবারে। মৃতের নাম বাপ্পাদিত্য খুটিয়া। শোকের ছায়ায় নেমে এসেছে ওই এলাকায়।
লাদাখের তুর্তুক সেক্টরে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে। নদীতে পড়ে যায় সেনাবাহিনীর একটি বাস। মৃত্যু হয় সাত জওয়ানের। আহত হন প্রায় ১৯ জনের মতো। তখনই দুর্ঘটনার কবলে পড়েন বাপ্পাদিত্য। পরিবার সূত্রে খবর, কয়েকদিন আগে গুজরাট থেকে সিয়াচেনে পোস্টিং হয় বাপ্পাদিত্যর। তাঁর বাবা সুকুমার খুটিয়া এমনই জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘শুক্রবার রাত ১২ টা নাগাদ ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়েছিলাম। কিন্তু সরকারি ভাবে তা পাইনি। পরে খবরটা সরকারিভাবে জানতে পারলাম। ততক্ষণে প্রায় দু’টো আড়াইটে বেজে গিয়েছে। শুনেছি ওঁরা ট্রেনিং-এর জন্য সিয়াচেন যাচ্ছিল। জম্মু থেকে লাদাখ পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল।’ এরপর তিনি বলেন, ‘দু’টি গাড়ি পেরিয়ে যাওয়ার পরের গাড়িতে দু’জন অফিসার সহ ২৬ জন ছিল। গাড়িটা পেরনোর সময় ধস নেমে পাথর ধাক্কা মারে গাড়িতে। সেই সময় খালে পড়ে যায়। একটা নদী ছিল, তার গভীরতাও অনেকটা ছিল। উদ্ধারকারী দল পৌঁছে যায়। যাঁরা জীবিত ছিলেন তাঁদের চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে। যাঁরা মারা গিয়েছেন তাঁদের মধ্যে আমার ছেলে ছিল। আরও বাকি ৬ জন ছিল।’
কাঁদতে-কাঁদতে তিনি বলেন, ‘আগের মাসে বাড়িতে এসেছিল। একমাস একদিন আগে বাড়ি থেকে গিয়েছে। এপ্রিলের ২ তারিখে এসেছিল ২৭ এপ্রিল ফিরে গিয়েছে। সিয়াচেন যাওয়ার আগে কথা হয়েছিল। তবে ফোনে যখন পাওয়া যাচ্ছিল না তখন চিন্তায় পড়েছিলাম। ওর ১১ মাসের শিশু আছে।’ তিনি আরও জানান, ‘আমার দুটি ছেলে। এক ছেলে সেকেন্দ্রাবাদে থাকে, সে সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। ওকেও খবর দিয়েছি।’
বাপ্পাদিত্য খুটিয়া ল্যান্সনায়েক পদে কর্মরত ছিলেন। বাপ্পাদিত্যর মা রিনা খুটিয়া বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাতে শেষ কথা হয়েছিল। শুক্রবার গাড়িতে করে ফেরার কথা ছিল সিয়াচেন।’ জওয়ানের এইভাবে মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না পরিবারের সদস্যরা।