পশ্চিম মেদিনীপুর: মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা মত পড়াশোনার জন্য পড়ুয়ারা লোন পাবেন স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডে। কিন্তু একাধিক ব্যাঙ্কের দুয়ারে ঘুরেও মেলেনি টাকা। লেখাপড়ার ভবিষ্যৎ কি হবে এই আশঙ্কায় বিষ খেয়েছিল সদ্য উচ্চ মাধ্যমিক পাশ তিথি দোলই। না, তৎক্ষণাৎ মৃত্যু হয়নি তার। ১৫ দিনের যমে-মানুষে টানাটানিতে হার মানল তিথি। মৃত্যুকেই নিজের জীবন সমর্পণ করলো উচ্চশিক্ষার আশায় বুঁদ ছাত্রী।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা পুরসভা এলাকার ১২নম্বর ওয়ার্ডের ভেয়েরবাজারের বাসিন্দা জয়দেব ও রিঙ্কুর একমাত্র মেয়ে তিথি দোলই। উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর সে ভর্তি হয় ব্যাঙ্গালুরুর একটি নার্সিং কলেজে। কোর্স ফি হিসেবে কর্তৃপক্ষ তাঁকে জানায়, কলেজে জমা দিতে হবে সাড়ে তিন লক্ষ টাকা। এলাকাবাসীর সহযোগিতায় এক লক্ষ টাকা জমা করে তিথি। কিন্তু পরীক্ষার আগে তাকে দ্বিতীয় কিস্তির টাকা জমা দিতে হবে বলে নির্দেশ দেয় কলেজ। তাই স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডে বাকি টাকা লোন করার পরিকল্পনা ছিল তার। কিন্তু মৃত ছাত্রীর পরিজনদের অভিযোগ, প্রয়োজনীয় সমস্ত নথি নিয়ে বিভিন্ন ব্যাঙ্কের দুয়ারে একাধিকবার ঘুরেও লোন পাওয়া যায়নি। কার্যত অন্ধকার নেমে আসে তিথির মনে। আত্মহননের পথ বেছে নেয় ওই পড়ুয়া।
এই বিষয়ে মা রিঙ্কু দোলই বলেন, ‘নবান্ন থেকে শুরু করে বিকাশ ভবন, সামান্য কটা টাকা পাওয়ার জন্য আমার মেয়েটা হন্যে হয়ে ঘুরেছে। বিভিন্ন ব্যাঙ্ক দিনের পর দিন কড়া নেড়েছে। কিন্তু সব জায়গা থেকেই তাকে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে।’
প্রসঙ্গত, উডেন ক্রেডিট কার্ডে টাকা না মেলায় গত ১৪ অগস্ট রাতে বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে তিথি। পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি বুঝতে পেরে তাকে দ্রুত নিয়ে যায় চন্দ্রকোনা গ্রামীণ হাসপাতালে। কিন্তু সেখানে ক্রমাগত অবস্থার অবনতি হতে থাকায় স্থানান্তর করা হয় মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। টানা লড়াইয়ের পর সেখানেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে তিথি। তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া গোটা এলাকায়। তবে এই ঘটনা নিছকই এক পড়ুয়ার আত্মহত্যার কাহিনী নয়। বরং এই মৃত্যু তুলে দিয়ে গিয়েছে একগুচ্ছ প্রশ্ন। যদি স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড লোন নাই মেলে তাহলে ফলাও করে তা সরকার জাহির করছে কেন? সরকারের অনুমোদিত কার্ড কেনই বা নিচ্ছে না ব্যাঙ্কগুলি? প্রশ্ন করছেন তিথির পরিবার-পরিজন-আত্মীয়রা।