কলকাতা: উদ্বেগ বাড়াচ্ছে নাবালিকা অন্তঃসত্ত্বার সংখ্যা। পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৪-২৫ সালে ৯ হাজারের বেশি নাবাবিকা অন্তঃসত্ত্বা হয়েছে। যাদের মধ্যে ১৫ বছরের নীচে বয়স, এমন নাবালিকা অন্তঃসত্ত্বা হয়েছে ২০৩ জন। আর ১৫ থেকে ১৯ বছরের মধ্যে অন্তঃসত্ত্বার সংখ্যা প্রায় ৯ হাজার। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, নাবালিকাদের মা হওয়ার হার ১৬-১৮ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞদের মত, পরিসংখ্যান যদি নিখুঁত হয়, তাহলে এই সংখ্যা পৌঁছে যেতে পারে ২০ শতাংশে। তাহলে কি পাঁচ জন অন্তঃসত্ত্বার মধ্যে এক জন নাবালিকা? প্রশ্ন উঠছে জোরাল। সরকারি হাসপাতালগুলিতে পোলিও কার্ড নিতে বাড়ছে নাবালিকা অন্তঃসত্ত্বাদের ভিড়।
এরকমই হাসপাতালে পোলিও কার্ড নিতে গিয়েছিল এক নাবালিকা। সে হাসপাতাল কর্মীর প্রশ্নের মুখে পড়ে। তাকে প্রশ্ন করা হয়, কেন এত অল্প বয়সে বিয়ে করলে? ক্যামেরার সামনেই সে বলেন, “বাবা খুব গরিব স্যর। বিয়ে দিয়ে দিয়েছিল। ভুল হয়েছে বলো, কী করব।” আরেক জন প্রেম করেই বিয়ে করেছে। সে বলল, ” রং নম্বর থেকে ফোন এসেছিল। প্রেম করে ফেলেছিলাম। বাড়ি থেকে পালিয়েই বিয়ে।”
এক জন শাশুড়ি নিয়ে এসেছিলেন বৌমাকে। তাঁকে প্রশ্ন করা হল, কেন নিয়ে এসেছেন বৌমাকে? বৌমার বয়স কত? তিনি প্রথমে বললেন, ” বৌমার বয়স ১৯ বছর” হাসপাতালের কর্মীদের কাছেই ধমক খান তিনি। তারপর বলেন সত্যিটা। বলেন, “ওই ১৫ হয়েছে কেবল। ভাব করে বিয়ে করেছে, কী করব। ওতো তো ওর কোনও কাগজপত্র নেই।”
কেবলমাত্র পশ্চিমমেদিনীপুর জেলাতেই এই চিত্র। তাহলে রাজ্যের বাকি জেলাগুলোর কী অবস্থা? পশ্চিম মেদিনীপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর ষড়ঙ্গী বলেন, “এটা কেবল স্বাস্থ্য দফতরের নয়, এটা একটা আর্থ সামাজিক ব্যধি। এটা রুখতে সমস্ত দফতরের সম্মিলিত প্রয়াসের প্রয়োজন। ‘১০৯৮’-কে জনপ্রিয় করতে হবে। কম বয়সে বিয়ে না আটকালে, এই বিষয়গুলো রোখা যাবে না। কারণ ওই বাচ্চাগুলোকে বোঝানো খুব মুশকিল, যে পরিকল্পনা পরিকল্পনা ঠিক কখন করা প্রয়োজন।”
মেয়েদের স্কুলমুখো করতে সরকার একাধিক প্রকল্প নিয়েছে। কন্যাশ্রী, রূপশ্রীর মতো প্রকল্প নিয়েছে। তারপরও কেন এই চিত্র?
হাসপাতালে যখন একজন নাবালিকার ডেলিভারি হচ্ছে, সঙ্গে সঙ্গেই ওই কেসটা বুকড হচ্ছে। ডেটা আমরা পাচ্ছি। বাল্যবিবাহ নিয়ে কাজ করছি। কন্যাশ্রীতে অনেক সচেতন হয়েছে। তবে অনেকক্ষেত্রেই পরিস্থিতির শিকার হয়। এটা সামাজিক ইস্যু। এটা নিয়ে আমরা কাজ করছি।