Paschim Medinipur : পরস্পরের বিরুদ্ধে মামলা লড়তেই ব্যস্ত শিক্ষকরা, পঠনপাঠন শিকেয় পশ্চিম মেদিনীপুরের এই স্কুলে

TV9 Bangla Digital | Edited By: সঞ্জয় পাইকার

May 04, 2022 | 8:21 PM

Paschim Medinipur : শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ৫০টির বেশি মামলা। তার মধ্যে ১২-১৪টি আবার খুনের চেষ্টার অভিযোগ। অন্য কেউ নয়, খড়গপুরের এই স্কুলের শিক্ষকরাই পরস্পরের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।

Paschim Medinipur : পরস্পরের বিরুদ্ধে মামলা লড়তেই ব্যস্ত শিক্ষকরা, পঠনপাঠন শিকেয় পশ্চিম মেদিনীপুরের এই স্কুলে
শিক্ষকদের অন্তর্দ্বন্দ্বে শিকেয় স্কুলের পঠনপাঠন

Follow Us

খড়গপুর : কোথাও স্কুল ভবনের বেহাল দশা। কোনও স্কুলে শিক্ষক সংখ্যা একেবারেই কম। পঠনপাঠনের ক্ষেত্রে এমন সমস্যার কথা বারবারই উঠে আসে। কিন্তু, পর্যাপ্ত শিক্ষক সংখ্যা থাকতেও স্কুলে পঠনপাঠন ব্যাহত হচ্ছে পশ্চিম মেদিনীপুরের (Paschim Medinipur) খড়গপুরের ভেটিয়া চণ্ডী হাইস্কুলে। আর তার কারণ খুঁজতে গিয়ে চমকে যাওয়ার মতো তথ্য উঠে আসছে। এই স্কুলের শিক্ষকরা পরস্পরের বিরুদ্ধে ৫০টির বেশি মামলা করেছেন। তার মধ্যে ১২-১৪টি আবার খুনের চেষ্টার মামলা।

১৯৪৬ সালে প্রতিষ্ঠা হয় ভেটিয়া চণ্ডী হাইস্কুল। শিক্ষকদের বিবাদে স্কুলের অবস্থা কঙ্কালসার। এই স্কুলে এক সময় হাজারের বেশি ছাত্রছাত্রী ছিল। এখন সেখানে খাতায় কলমে পড়ুয়া সংখ্যা মেরেকেটে সাড়ে চারশো। আর প্রতিদিন গড়ে স্কুলে আসে আড়াইশো থেকে তিনশো ছাত্র। গোলমালের জন্য ওই স্কুলে ছেলে-মেয়েদের পড়তে পাঠাতে চান না অভিভাবকরা। তাই অন্য স্কুলে ছেলেমেয়েদের ভর্তি করিয়েছেন অনেক অভিভাবক।

স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকা ২৭ জন। শিক্ষাকর্মী-সহ ৩২ জন আছেন। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ পঞ্চাশের বেশি! এই অভিযোগ অন্য কেউ করেননি। স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারাই একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ করেছেন। মামলা থেকে বাদ যাননি প্রধান শিক্ষকও। প্রতি মাসে ৪ থেকে ৫ বার পুলিশ আসে গোলমালের খোঁজ নিতে। কয়েকজন শিক্ষক শিক্ষিকার বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার মামলাও চলছে।

জানা গিয়েছে, খড়গপুর-১ ব্লকের এই স্কুলে প্রায় দশ বছর ধরে গোলমাল চলছে। শেখ রবিউল হোসেন নামে স্কুলের এক শিক্ষক প্রায় আড়াই বছর সাসপেন্ড ছিলেন। কয়েক মাস আগে ফের স্কুলে যোগ দিয়েছেন। মূল অভিযোগের তির ওই শিক্ষকের দিকেই। স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা দুটি ভাগে বিভক্ত।

খড়গপুর গ্রামীণের এই স্কুল নিয়ে অতিষ্ঠ পুলিশও। খড়গপুর লোকাল থানার অধীনে পড়ে স্কুলটি। পুলিশ সূত্রে খবর, ওই স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকারা একে অপরের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে কিছুদিন ছাড়াই জেনারেল ডায়েরি, এফআইআর করে থাকেন।

দিন তিনেক আগে শিক্ষিক-শিক্ষিকারা স্কুলে নিরাপত্তার দাবিতে প্ল্যাকার্ড হাতে মেদিনীপুর শহরে ডিআই অফিসে অবস্থানে বসেছিলেন। তাঁদের অভিযোগ, দুই শিক্ষকের জন্যই এত সমস্যা। তাঁদের বদলির দাবি জানান তাঁরা। একইসঙ্গে স্কুল ভবনের বেহাল দশার কথাও জানান তাঁরা।

তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ খারিজ করে শেখ রবিউল হোসেন বলেন, “আমার নামে শিক্ষকরা মিথ্যে অভিযোগ করছেন। আমি স্কুলের ভাল চাই। যদি আমার বদলি হলে স্কুল ভালভাবে চলে, তবে আমাকে বদলি করে দেওয়া হোক।”

স্কুলের বর্তমান প্রধান শিক্ষক তরুণ কুমার শীট বলেন, “মাস পাঁচেক আগে আমি এই স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে এসেছি। এসে যা দেখছি তা বলার নয়। স্কুলের বর্তমান ছাত্রছাত্রী সংখ্যা সাড়ে চারশো। লকডাউনের পর দৈনিক উপস্থিতি আড়াইশো থেকে তিনশো। স্কুলের পরিকাঠামো একেবারে খারাপ। তার উপর গোটা পঞ্চাশ-ষাটেক মামলা চলছে। তার মধ্যে ১২-১৪ জনের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার অভিযোগ। সমস্ত ঘটনা ডিআই থেকে শিক্ষা দফতর, এমনকি মুখ্যমন্ত্রীকেও চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। আমার আবেদন, স্কুলটা ভালভাবে চালাতে দিন।”

আর এক শিক্ষক বলছেন, “বাড়ি ফিরলেই নানা প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। বাড়ির লোক জিজ্ঞাসা করে, স্কুলে গিয়ে কী করো? তোমার বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার মামলা কেন? তখন অস্বস্তি হয়।” স্কুলের অন্য আর এক শিক্ষকের টিপ্পনি, “ছাত্রের তুলনায় অতিরিক্ত শিক্ষক থাকলে কী আর করবে!”

Next Article