পশ্চিম মেদিনীপুর: প্রশাসনের কাছে দ্বারস্থ হয়েছেন এলাকাবাসী। তাঁদের একটাই দাবি, ‘দ্রুত হোক শিক্ষক নিয়োগ। দয়া করে রক্ষা করুন স্কুল’ কিন্তু কেন এমন দাবি জানিয়েছেন তাঁরা? আসলে যেদিন স্কুলে একমাত্র অতিথি শিক্ষক আসেন না সেই দিন গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকরা স্কুলের দায়িত্ব নিয়ে সচল রাখেন।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঘাটাল ব্লকের মনসুকা গ্রাম পঞ্চায়েতের বরকতিপুর জুনিয়র উচ্চ বিদ্যালয়। সেখানে স্কুলে মাত্র একজন শিক্ষক। ফলত তলানিতে ঠেকেছে ছাত্র সংখ্যা। স্থায়ী শিক্ষক না মিললে স্কুল বন্ধ হয়ে যাবে স্কুল। এমনটাই দাবি এলাকাবাসীর। তাই স্কুল চালু রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এলাকার মানুষজন।
স্কুলের ইতিহাস
সালটা ২০১৬। বরকতিপুর জুনিয়র উচ্চ বিদ্যালয়ের অনুমোদন দেয় রাজ্য সরকার। দু’জন মাত্র অতিথি শিক্ষক (গেস্ট টিচার) দিয়ে শুরু হয় স্কুল। গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় স্কুলের সংখ্যা ২০০ পারও হয়ে যায়।
এ দিকে, সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে স্কুলের পড়াশোনা শুরু হলেও বয়সের ভারে অবসর নিয়েছেন একজন শিক্ষক। আর কয়েক বছর ধরে একজন মাত্র শিক্ষক চালাচ্ছেন ক্লাস। তবে পাশে দাঁড়িয়েছেন এলাকায় কয়েকজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক।
জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনের কাছে এলাকার মানুষ দাবি জানিয়েছিলেন শিক্ষক নিয়োগের। শিক্ষক নিয়োগ না হওয়ায় একজন শিক্ষকের পক্ষে সামলানো মুসকিল হয়ে পড়েছে। ফলত পড়াশুনো ঠিকমতো না হওয়ার কারণে প্রায় ২০০ জন ছাত্রছাত্রী থেকে কমতে-কমতে বর্তমানে ছাত্র ছাত্রী সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫০। শিক্ষকের অভাবে স্কুল থেকে মুখ ফেরাচ্ছেন ছাত্র-ছাত্রীরা।
শুধু তাই নয় আশ্চর্যের বিষয় হল একজন মাত্র শিক্ষক তিনিও বার্ধক্য জনিত কারণে মাঝে মধ্যে স্কুল না আসলে এলাকারই অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকেরা চালান স্কুল ।
এ দিকে, একজন শিক্ষক থাকার কারণে ক্লাস পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীদের একটি ক্লাসরুমের মধ্যে রেখেই পড়াশোনার পঠন পাঠান চালাচ্ছেন শিক্ষক মনোজ কুমার ভুঁইয়া। অন্যান্য দিনের মতো শনিবার দেখা গেল স্কুলের শিক্ষক আসেনি। তাই যাতে ছাত্রছাত্রীরা বাড়ি ফিরে না যেতে যায় সেই কারণে এলাকারই অবসরপ্রাপ্ত এক শিক্ষক তিনি ছাত্র-ছাত্রীদের পঠন পাঠান দিচ্ছেন। এলাকার বাসীর দাবি, ‘দীর্ঘ আবেদনের পর সরকারি অনুমোদন পাওয়ার পর তিল-তিল করে গড়ে তুলেছি স্কুল, তাই এই স্কুলটি শিক্ষকের অভাবে যাতে বন্ধ না হয়ে যায় প্রশাসনের কাছে কাতর আকুতি করছি দ্রুত শিক্ষক নিয়োগের।’ এক অভিভাবক বলেন, ‘এখনের ঘটনা বলতে পারব না। আমার মেয়ে আগে ওই স্কুলে পড়ল। ষষ্ঠ শ্রেণিতে উঠতেই ওকে সরিয়ে নিয়েছি। এখন ওখানে শিক্ষক নেই।’ অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক বলেন, ‘স্কুলের প্রতি আমার ভাল লাগ আছে সেই কারণে আসি। এই স্কুলগুলি প্রথমে পঞ্চম শ্রেণি থেকে শুরু হয়েছিল। কারণ একসঙ্গে পঞ্চম-ষষ্ঠ-সপ্তম শ্রেণি আসতে পারবে না। যেহেতু দু’জন শিক্ষক ছিলাম সেই কারণে আমরা জোর দিয়ে বলতেও পারব না আপনাদের ছেলেমেয়েদের আমাদের স্কুলে পাঠান’