পশ্চিম মেদিনীপুর: কারোর পেট খারাপ, কেউ অহরহ বমি করছেন, কারোর বা জলের মতো মলত্যাগ হয়েই চলেছে। ভাইফোঁটার রেশ কাটতে না কাটতেই এমনই উপসর্গ দেখা গিয়েছে দাসপুরের রাজনগরের বাড়ি-বাড়িতে। একই পাড়ায় আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৫০ ছাড়িয়েছে। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে তাই ঘটনাস্থলে বিশেষ মেডিক্যাল টিম। পানীয় জল থেকেই এই সংক্রমণ (Waterborne Disease) কি না তা পরীক্ষা করতে জলের নমুনা সংগ্রহ জেলা স্বাস্থ্য দফতরের।
সোমবার, দাসপুরের রাজনগরে যান ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক চিকিত্সক সুদীপ্ত ঘোড়াই ও তিন সদস্যের বিশেষ মেডিক্যাল টিম। এদিন, স্বাস্থ্য দফতরের কর্মীরা আক্রান্তদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কথা বলেন। প্রাথমিকভাবে তাঁদের অনুমান, কোনওভাবে খাবারে বিষক্রিয়ার থেকে এই ধরনের সংক্রমণ ঘটতে পারে। তবে, সংক্রমণ এভাবে কী করে ছড়াল তা নিয়েও প্রশ্ন থাকছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, শুধু তাঁদের রাজনগরেই নয়, পাশ্ববর্তী এলাকাগুলিতেও এই একই ধরনের সমস্যা দেখা দিয়েছে। প্রায় সকলেই কমবেশি বমি-পায়খানা, পেটে ব্যথার মতো উপসর্গ নিয়ে আক্রান্ত। এলাকাবাসী জানিয়েছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই পানীয় জল হিসেবে সজলধারার জল ব্যবহার করেন। সেই জল থেকেই এই সমস্যা হতে পারে। নয়ত, এত ব্যাপক হারে এমন সংক্রমণ হওয়া সম্ভব নয়।
এক এলাকাবাসীর কথায়, “কালীপুজোর পর থেকেই অল্প অল্প করে শুরু হয়েছিল। ভাইফোঁটার পর থেকে মারাত্মক আকার নিয়েছে। একের পর এক সকলে আক্রান্ত হচ্ছেন। প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই লক্ষণ একই।”
ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ সুদীপ্ত ঘোড়াই বলেন, “সরকারিভাবে ওই পাড়ার দুই ব্যক্তি বর্তমানে দাসপুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এলাকায় প্রায় ১৮ থেকে ২০ জনের মধ্যে আন্ত্রিকের সমস্যা রয়েছে। এলাকার পানীয় জলের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হচ্ছে।”
ব্লক প্রশাসন সূত্রে খবর, মেডিক্যাল টিমের তত্ত্বাবধানে আক্রান্তদের শারীরিক অবস্থা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় ওষুধ ও অন্য়ান্য জরুরি পদক্ষেপ করা হচ্ছে। এলাকায় ব্লিচিং ছড়ানো হচ্ছে। দেওয়া হচ্ছে হ্যালোজেন ট্যাবলেট। তবে বর্তমান পরিস্থিতি বেলাগাম নয় বলেই দাবি জেলা স্বাস্থ্য দফতরের। পাশাপাশি, গোটা এলাকা জুড়ে মাইকিং করে অন্যান্য পদ্ধতিতে সচেতনতামূলক প্রচারও করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যকর্তারা।
তবে, দাসপুরেই কেবল নয়, সম্প্রতি কামারহাটিতেও ডায়ারিয়া সংক্রমণ চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ডায়ারিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুও হয়েছিল বেশ কয়েকজনের। ক্রমেই পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় নড়েচড়ে বসে স্বাস্থ্য ভবন। সেখানকার জলের নমুনা পাঠানো হয় নাইসেডে। পরে জানা যায়, ডায়ারিয়া নয় কলেরার প্রকোপ দেখা গিয়েছিল কামারহাটিতে।
দাসপুর ব্লক স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, সম্প্রতি বন্যা পরিস্থিতির জেরে ডুবে গিয়েছিল গোটা এলাকা। সেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি দুর্গাপুজোতেও। ধীরে ধীরে যখন জল নামতে শুরু কর তখন বেশ কিছুদিন যাবত্ টানা পানীয় জলের সঙ্কুলান দেখা দিয়েছিল এলাকা জুড়ে। তারপরেই ধীরে ধীরে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে। সেদিক থেকে পানীয় জল থেকেও এই সংক্রমণের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না স্বাস্থ্য় অধিকর্তারা।
আরও পড়ুন: Adhir Chaudhury: ‘বানিয়ে গল্প বলতে পারব না, বৈঠক হলে জানাব’, পুরভোটে কি ফের ‘হাতে-কাস্তে’?