মেদিনীপুর: সুইসাইড নোট মানেই সেখানে প্রিয় মানুষের প্রতি একরাশ অভিমান, ক্ষোভ কিংবা ভিতরের টানাপোড়েন মূর্ত হয়ে ওঠে। কিন্তু বাড়ির পোষ্যর প্রতি উদ্বেগ সুইসাইড নোটের প্রতি ছত্রে, সচরাচর দেখা যায় না। মেদিনীপুরের ঘোষ দম্পতির আত্মহত্যার নোট দেখে কার্যত অবাক পুলিশ। প্রিয় ‘জ্যাঙ্গো’কে রেখে পৃথিবী ছাড়ছেন তাঁরা। সুইসাইড নোটে ওই দম্পতির কাতর আবেদন, কেউ যেন তাঁদের পোষ্য জ্যাঙ্গোর দায়িত্ব নেন। মেদিনীপুরের (Medinipur) ঘাটাল পুরএলাকার আলমগঞ্জের দেবাশিস ঘোষ ও জলি ঘোষ। শুক্রবার তাঁদের দেহ উদ্ধার করে ঘাটাল থানার পুলিশ। খাটের উপর পড়েছিল জলিদেবীর দেহ। তাঁর মাথার কাছেই ঝুলছিল দেবাশিসবাবুর পা। পুলিশ যখন দরজা ঠেলে ঘরে ঢোকে, দেখে পাশের ঘরে চুপটি করে শুয়ে রয়েছে জ্যাঙ্গো। এত লোক ঘরে ঢুকল, সবটা দেখেছে, টুঁ শব্দটি করেনি।
এমনিতেই বলে গোল্ডেন রিট্রিভার কুকুর খুবই শান্ত, অনুগত হয়। অচেনা লোকের সঙ্গেও কোনও ঝুটঝামেলা ওদের অপছন্দ। এমন শান্ত স্বভাবের জন্য বাড়ির লোকের বড্ড আদরেরও হয় সে। ষাটের কাছাকাছি বয়সের এই দম্পতির কাছে জ্যাঙ্গোও বোধহয় সন্তানতুল্যই ছিল। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, দেবাশিসবাবুদের দেহের পাশ থেকে যে সুইসাইড নোট পাওয়া যায়, তাতে ৫০ লক্ষ টাকা দেনার উল্লেখ রয়েছে। সে কারণেই এই আত্মহত্যা।
একইসঙ্গে তাঁরা সুইসাইড নোটে লিখেছেন, জ্যাঙ্গো যেন কোনওভাবেই অনাথ না হয়ে পড়ে। তাঁদের মৃত্যুর পর জ্যাঙ্গোর কী হবে, তা নিয়ে উদ্বেগও দেখা গিয়েছে সেই সুইসাইড নোটে। পোষ্যদের রাখে এমন কোনও সংস্থার হাতে যাতে জ্যাঙ্গোকে তুলে দেওয়া হয়, সে কথাও লেখেন দম্পতি। কিন্তু এই মুহূর্তে জ্যাঙ্গোর ঠিক কীরকম শুশ্রুষা প্রয়োজন? চোখের সামনে এভাবে দু’জনকে শেষ হয়ে যেতে কতটা বিধ্বস্ত ও? টিভি নাইন বাংলা কথা বলেছিল সায়ন্তনী চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে। কলকাতায় রুবিতে এক পেট বোর্ডিং চালান তিনি।
সায়ন্তনী চট্টোপাধ্যায় জানালেন, পোষ্যকে নিয়ে এরকম উদ্বেগের ছাপ সুইসাইড নোটে এর আগে তিনি শোনেননি। তবে এই ঘটনা যে জ্যাঙ্গোর মনে প্রভাব ফেলতে বাধ্য, তা বারবারই বলছেন তিনি। এই ঘটনা পোষ্যটিকে একটি মেন্টাল ট্রমার মধ্যে দিয়েও নিয়ে যাচ্ছে, বলেই মত তাঁর। সায়ন্তনীর কথায়, মানুষের থেকেও অনেক বেশি ‘কোমল’ ওদের মন। সারাদিন যাঁদের যত্ন, আদরে দিন কাটত ওর, যাঁরা অনায়াসে ওর খুনসুটি, নির্বাক আবদার বুঝে নিতেন, চোখের সামনে এভাবে তাঁদের চলে যাওয়ায় বড় ধাক্কা খেয়েছে এই সারমেয়।
পোষ্য বোর্ডিংয়ের প্রধান সায়ন্তনীর কথায়, “ওর মধ্যে একটা ট্রমা কাজ করবে। এই সময় জ্যাঙ্গোর একটা এমন ঠিকানা প্রয়োজন, যেখানে ও ঘোষ পরিবারের মতোই আদরে যত্নে রাখা হবে।” আরও একটি বিষয় সায়ন্তনীর বক্তব্য়ে স্পষ্ট, যেহেতু এতদিন জ্যাঙ্গো একটি পরিবারের সঙ্গে থেকেছে, তাই তাকে কোনও সংস্থার হাতে তুলে দিলে এই মুহূর্তে সেটা সঠিক সিদ্ধান্ত হবে না। বরং পোষ্যদের ভালবাসে, এমন কোনও পরিবারের মধ্য়েই এখন কুকুরটির থাকা দরকার। সেই আদর, যত্নই পারবে জ্যাঙ্গোকে এই মেন্টাল ট্রমা বা মানসিক অস্থিরতা থেকে বের করে আনতে। একইসঙ্গে জ্যাঙ্গোর শরীরের একটি ‘থরো চেকআপ’ এই মুহূর্তে প্রয়োজন বলেও মত তাঁর। এবং অবশ্যই যে ডাক্তার এতদিন জ্যাঙ্গোকে দেখেছেন, তাঁর হাতেই এই চেকআপ প্রয়োজন।