Netai massacre case: কেন চলেছিল গুলি? গণহত্যার এক যুগ পর কী বলছে নেতাই?

TV9 Bangla Digital | Edited By: সায়নী জোয়ারদার

Feb 06, 2023 | 9:09 PM

Netai: ৩১ জানুয়ারি নেতাই গণহত্যার মূল তিন অভিযুক্তকে জামিন দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। আট বছর জেল খাটার পর জামিন পান ডালিম পাণ্ডে, অনুজ পাণ্ডে, তপন দে।

Netai massacre case: কেন চলেছিল গুলি? গণহত্যার এক যুগ পর কী বলছে নেতাই?
আজও সেই রক্তাক্ত অতীত ভোলেনি নেতাই।

Follow Us

ঝাড়গ্রাম: রাজ্যের মসনদে তখনও সিপিএম। তবে শাসকদলের বিরুদ্ধে ‘কণ্ঠস্বর’ ক্রমশ চড়ছে। একের পর এক ঘটনায় কোণঠাসা লাল ঝান্ডা। অভিযোগ ওঠে, মাওবাদীদের প্রতিহত করতে সিপিএমের পক্ষ থেকে জঙ্গলমহলের বিভিন্ন এলাকায় ক্যাম্প করা হয়েছে। আরও অভিযোগ ছিল, সেই ক্যাম্পে এমন লোকজনকে রাখা হয়েছিল, যাঁরা বন্দুক চালনায় দক্ষ। নেতাইয়ে এরকমই একটি ক্যাম্প থেকে ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি গ্রামবাসীদের উপর নির্বিচারে গুলি চালানোর অভিযোগ ওঠে। কেন এই গুলিচালনার অভিযোগ, তা আরও ভয়ঙ্কর। সেই ঘটনায় প্রাণ হারান ৯ জন। ২৮ জন আহত হন। এই ঘটনার জল গড়ায় বহুদূর। কম দিন চলেনি মামলা মোকদ্দমা। ৩১ জানুয়ারি নেতাই গণহত্যার মূল তিন অভিযুক্তকে জামিন দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। আট বছর জেল খাটার পর জামিন পান ডালিম পাণ্ডে, অনুজ পাণ্ডে, তপন দে। বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার থেকে ডালিমরা জামিনের কাগজও পেয়ে যান। তবে অনুজ পাণ্ডের কাগজ সংশোধনাগারে না আসায় জামিনের প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়নি তাঁর। এক যুগ আগে নেতাইয়ের সেই দিন এখনও ভয় ধরায় মানুষগুলোর মনে। ঠিক কী হয়েছিল সেদিন?

সিপিএম নেতা রথীন দণ্ডপাটের বাড়ি

ঝাড়গ্রাম মহকুমার বিনপুর-১ ব্লকের লালগড় গ্রামপঞ্চায়েত। সেখানকার নেতাই গ্রামে সিপিএম নেতা রথীন দণ্ডপাটের বাড়ি। অভিযোগ ওঠে, এই বাড়িতেই সিপিএমের সশস্ত্র বাহিনীর ক্যাম্প করেছিল। আর এই ক্যাম্পে থাকা লোকজনের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এমনকী নেতাই গ্রামের ছেলেদের নাকি অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হচ্ছিল বলে অভিযোগ ওঠে সে সময়। ক্যাম্পে যাঁরা থাকতেন, তাঁরা বিরক্ত করে তুলতেন গ্রামের মহিলাদেরও। ওই যুবকদের যাবতীয় কাজকর্ম তাঁদের দিয়েই করানো হত বলে অভিযোগ ওঠে। মহিলাদের ওই ক্যাম্পে গিয়ে রান্না পর্যন্ত করে দিতে হতো বলে অভিযোগ।

জ্বলে উঠল নেতাই

এরপরই এলাকার মহিলারা প্রতিরোধে নামে বলে সে সময় শোনা গিয়েছিল। দিনটা ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি। গ্রামবাসীরা মুখের উপর বলে দেন, ওই সশস্ত্র বাহিনীর কোনও ফরমায়েস তাঁরা খাটবেন না। এই নিয়ে ঝামেলার সূত্রপাত বলে অভিযোগ ওঠে। এরপরই গ্রামবাসীর উপর ওই বাড়ি থেকে গুলি চালানো হয় বলে অভিযোগ। মারা যান ৯ জন গ্রামবাসী। গুলিবিদ্ধ হন ২৮ জন। ইতিহাসের পাতায় নেতাইয়ের এই ঘটনাকে গণহত্যা বলেই উল্লেখ করা হয়।

সিআইডি থেকে সিবিআই

এই ঘটনায় মোট ২০ জন সিপিএম নেতাকর্মীর নামে অভিযোগ দায়ের করা হয়। প্রথমে তদন্ত শুরু করে সিআইডি। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে সিবিআই তদন্তভার নেয়। ২০১৪ সালের ২৮ এপ্রিল নেতাইকাণ্ডে অভিযুক্ত ডালিম-সহ পাঁচজনকে হায়দরাবাদ থেকে গ্রেফতার করা হয়। তদন্ত চলে। তিনজন মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগরে বন্দি ছিলেন। বৃহস্পতিবার ডালিম, তপন জেল থেকে জামিন পেলেও কাগজপত্র ঠিক না থাকায় অনুজ এখনও সংশোধনাগার থেকে বেরোতে পারেননি। এই নিয়ে মোট ১০ জন জামিন পেলেন নেতাই কাণ্ডে। গত বছরের অগস্টে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে জামিনে মুক্ত হন সিপিএম নেত্রী ফুল্লরা মণ্ডল। নেতাই মামলার বিচার চলছে মেদিনীপুর আদালতে। মামলার ১০০ জনের সাক্ষীর মধ্যে এখনও পর্যন্ত ৩০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে।

কী বলছে সিপিএম?

বৃহস্পতিবার ডালিমরা জামিন পাওয়ার পর সিপিএমের ঝাড়গ্রাম জেলা সম্পাদক প্রদীপ সরকার জানান, মিথ্যা মামলায় তাঁদের ফাঁসানো হয়েছিল। তাই দল তাঁদের পাশে আছে।

সেদিনের ঘটনার কথা কি আজও মনে পড়ে বাসিন্দাদের?

এক যুগ কেটে গিয়েছে। নেতাইয়ের কল্পনা সেনরা সেদিনের কথা মনে করলে শিউরে ওঠেন আজও। তাঁর স্বামী দিলীপ সেনের চোখে, হাতে গুলি লেগেছিল। তিনি জানেন, সেদিনের অভিযুক্তদের অনেকেই জামিন পেয়েছেন। কল্পনার কথায়, “গ্রামে আসেন, দেখি তো। এখন তো ভয় করে।”

Next Article