জলপাইগুড়ি: গতকাল ‘রেফার রোগ’ নিয়ে সরব হয়েছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গতকাল তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, রেফার করার জন্য কোনও গর্ভবতী মহিলার মৃত্যু হলে যে চিকিৎসক রেফার করেছেন দায়িত্ব তাঁর। বারবার নিষেধ করা সত্ত্বেও ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা জেলার হাসপাতালের চিকিৎসকদের রোগী রেফার করার ঘটনায় গতকাল তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি। আর তাঁর এই বার্তার পরই ফের স্বাস্থ্য পরিষেবায় গাফিলতির অভিযোগ উঠল জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। জানা গিয়েছে, হাসপাতালে হাতের প্লাস্টার কাটতে গিয়েছিলেন রোগী। প্লাস্টার কাটার পরিবর্তে বলা হল পানের দোকানে যেতে! তবে পান খেতে নয়, প্লাস্টার কাটার জন্যই হাসপাতাল নয়, পানের দোকানের ঠিকানা বাতলে দেওয়া হল হাসপাতালের তরফে।
সোমবার দুপুরে যখন খোদ মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের স্বাস্থ্য আধিকারিকদের সাথে ভিডিয়ো কনফারেন্সে স্বাস্থ্য পরিষেবা সংক্রান্ত নানাবিধ আলোচনা করলেন ঠিক তার কয়েক ঘণ্টা যেতে না যেতেই উলটো ছবি দেখা গেল জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। গতকাল বিকেলে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন বাপী প্রধান। সেই সময় তিনি লক্ষ্য করেন এক বয়স্ক ব্যক্তি তাঁর হাতের প্লাস্টার নিজে নিজেই খুলতে খুলতে যাচ্ছেন। রোগীর নাম গোবিন্দ দত্ত রায়। তাঁর বাড়ি জলপাইগুড়ি পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ডের নয়াবস্তি পাড়ায়।
তাকে দাঁড় করিয়ে বাপী বাবু জিজ্ঞেস করেন হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে আপনি নিজে কেন প্লাস্টার খুলছেন? উত্তরে তিনি জানান, তিনি প্লাস্টার খুলতে হাসপাতালেই গিয়েছিলেন প্রথমে। তারপর হাসপাতাল থেকে তাঁকে বলা হয়, প্লাস্টার কাটার মেশিন খারাপ। বাইরে পানের দোকানে গিয়ে সেই প্লাস্টার কাটিয়ে নেওয়ার কথা বলা হয় তাঁকে। এরপর তিনি দোকানে গেলে প্লাস্টার কাটার জন্য দোকানদার ১৫০/- টাকা চায়। তাঁর কাছে টাকা না থাকায় তিনি নিজেই খুলে প্লাস্টার খুলতে শুরু করেন। যেদিন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রকে যথাযথভাবে কাজের হুঁশিয়ারি দিলেন ঠিক সেদিনই এই ঘটনা রাজ্যের হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে আবারও বড়সড় প্রশ্ন তুলে দিল।
এই ঘটনায় জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজের উপ অধ্যক্ষ ডাক্তার কল্যান খাঁ বলেছেন, এই ধরনের কোনও অভিযোগ তাঁর কাছে নেই। বিষয়টি অত্যন্ত বেদনাদায়ক বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। এর পাশাপাশি এই সংক্রান্ত কোনও অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। তিনি আরও জানিয়েছেন, হাসপাতালে রোগী সহায়তা কেন্দ্র রয়েছে। তা দিন রাত খোলা থাকে। কোনও সমস্যায় পড়লে ভুক্তভোগীদের সেখানে যাওয়ার আবেদন জানিয়েছেন তিনি।