পূর্ব বর্ধমান: একদিন, দু’দিন নয় পুরো এক সপ্তাহ পর হাতির দলকে জঙ্গলে পাঠাতে সক্ষম হল বনকর্মীরা। আজ ভোর সাড়ে চারটের সময় হাতির পাল দামোদর নদ পেরিয়ে বাঁকুড়ার জঙ্গলে ঢোকে। এই কয়েকদিনে বনকর্মীদের রীতিমতো নাকানি চোবানি খাইয়ে ছেড়েছে দামাল হাতির দল।
গতকাল রেললাইনে ঠাঁই দাঁড়িয়ে কারণে প্রায় দেড় ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুর্গাপুর স্টেশনের কাছে পারাজ স্টেশনে এই ঘটনা ঘটে। একেবারে রেললাইনে উঠে পড়ে তারা। যদিও পরে তাদের গলসির দিকে পাঠানো হয়। এদিকে এই দাঁতাল দলের জন্য একদিকে যেমন ট্রেন চলাচল স্তব্ধ হয়ে যায়। এরপর বুদবুদের কাছে জাতীয় সড়কেও দুলকি চালে ঢুকে পড়ে হাতিরা। সেখানেও বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল।
বর্ধমান বনবিভাগের বিভাগীয় বনাধিকারিক জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিট থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বর্ধমান আসানসোল মেইন লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। রেল লাইনে হাতির দল পারাপারের কারণে বন্ধ ছিল সমস্ত ট্রেনের চলাচল। রক্সৌলগামী আপ মিথিলা এক্সপ্রেস দাঁড়িয়ে যায় পারাজ স্টেশনে। হাওড়াগামী ডাউন ব্ল্যাক ডায়মন্ড এক্সপ্রেসও দাঁড়িয়ে গিয়েছিল মানকর স্টেশনে। প্রায় দেড় ঘণ্টা পরে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
এরপর বুদবুদের কাছে হাতির দল পারাপরের কারণে ১৯ নম্বর জাতীয় সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রাত ন’টা থেকে দশটা পর্যন্ত এক ঘণ্টা বন্ধ হয়ে যায় জাতীয় সড়কে যান চলাচল। যদিও রাতের দিকে বুদবুদের তিলডাং এলাকায় জাতীয় সড়ক থেকে হাতির দলটিকে সরাতে সক্ষম হয় বন দফতর। ৬৬টি হাতির ওই দলকে বাঁকুড়ার পাত্রসায়র ও সোনামুখীর দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলে রাত পর্যন্ত।
গত সাতদিন পূর্ব বর্ধমানের গলসি ও আউশগ্রামে তাণ্ডব চালাচ্ছে হাতির দলটি। এই দু’টি ব্লকের বহু ধানের জমির ফসল নষ্টও হয়েছে হাতির হানায়। জানা দিয়েছে, বাঁকুড়ার পাত্রসায়র থেকেই এসেছিল। বনদফতর সূত্রে খবর, এদিন দফতরের কর্মীরা এবং হুলাপার্টি হল্লা করতে করতে ৬৬টি হাতিকে রেল লাইন পার করে নিয়ে যাচ্ছিল।
পরিকল্পনা ছিল গলসি ১ ব্লকের সিমনোড় হয়ে দামোদর পার করিয়ে বাঁকুড়ার জঙ্গলে হাতির দলকে পাঠানো হবে। সেই সময়ই গোল বাধে। একে অন্ধকার। তার উপর এতগুলি হাতি। রেললাইনে উঠতেই কেউ হন হন করে এগিয়ে যায়, কেউ আবার দুলকি চালে অনেকটা পিছনে। সকলকে সংঘবদ্ধ করে নিয়ে যেতেই হিমশিম খেতে হয় বনকর্মীদের।
এরপরই রেল লাইন থেকে তিন কিলোমিটারের মধ্যে তিলডাং এলাকায় জাতীয় সড়কে বেশ কয়েকটি হাতি দাঁড়িয়ে পড়ে। এর জেরেই যান চলাচল স্তব্ধ হয়ে যায়। বন দফতর সূত্রে খবর, এই হাতিগুলির সবক’টি বাঁকুড়ার এমন নয়। সিংহভাগই ঝাড়খণ্ডের। কারণ, বাঁকুড়ায় রেসিডেন্সিয়াল হাতি সাত থেকে দশটি। ঝাড়খণ্ডের হাতিগুলি প্রথমে বাঁকুড়ায় আসে। সেখান থেকে দামোদর নদ পেরিয়ে পূর্ব বর্ধমানে ঢোকে।
আরও পড়ুন: Pandua Crime: অনেকদিন ধরেই চলছিল পারিবারিক অশান্তি! স্বামী ও মেয়েকে কোপাল মহিলা