পূর্ব বর্ধমান: এক গৃহবধূর আত্মহত্যার অভিযোগ ঘিরে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে পূর্ব বর্ধমানের ভাতারে। ২৪ বছর বয়সী ওই তরুণীর বাপের বাড়ি থেকে ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। তাঁর বাবার অভিযোগ, মেয়েকে নিয়মিত অত্যাচার করত জামাই। গায়ে হাত তোলা, অকথ্য ভাষায় কথা বলত। শনিবারও ফোন করে মেয়েকে আজেবাজে কথা বলে। এরপরই মেয়ে নিজেকে শেষ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এদিকে শ্বশুরবাড়ির অভিযোগ, এই গৃহবধূর অন্য এক ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে। গত বুধবার তাঁর স্বামী ওই গৃহবধূ ও এক যুবককে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলেন। এ নিয়ে ঝামেলা হয়। শ্বশুরবাড়ির লোকজন ওই তরুণীকে বাপের বাড়ি রেখে আসতে বলেন। তরুণী চলেও যান। শ্বশুরবাড়ির দাবি, কেলেঙ্কারি থেকে মুখ লুকোতেই বউ এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। এ বিষয়ে তরুণীর বাবা ভাতার থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
সীমা দাস নামে ওই তরুণীর বাপের বাড়ি ভাতারের ঢেরিয়া গ্রামে। বছর সাতেক আগে ভাতারেরই বলগোনা গ্রামের বিজয় দাসের সঙ্গে সম্বন্ধ করে বিয়ে হয় তাঁর। সীমার বাবা পল্টু দাসের অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই তাঁর মেয়ের উপর নির্যাতন চলত। স্বামীর পাশাপাশি তাঁর শ্বশুর, শাশুড়িও সীমার উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেন বলে অভিযোগ। দিন দুই আগেও তাঁর মেয়েকে বেধড়ক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। এমনকী মেয়েকে বাপের বাড়িতে রেখেও দিয়ে যায়।
শনিবার বিজয়ের সঙ্গে ফোনে ঝগড়া হয় সীমার। এরপরই নিজেকে শেষ করে দেন বলে অভিযোগ তরুণীর বাবার। যদিও বিজয় দাসের জামাইবাবু অনুপ দাসের দাবি, বেশ কয়েক বছর হল সীমা বলগোনারই এক যুবকের সঙ্গে পরকিয়ায় লিপ্ত হয়েছেন। যা নিয়ে সংসারে অশান্তি হচ্ছিল। এসবের মধ্যেই বুধবার ওই যুবকের সঙ্গে সীমাকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখেন ফেলেন বিজয়। এরপরই লজ্জায় আত্মঘাতী হন তিনি। যদিও এই অভিযোগ মানতে নারাজ সীমার বাবা।
পল্টু দাস বলেন, “বুধবার আমার মেয়েটাকে খুব মারধর করে। মেরে মাথা ফুলিয়ে দেয়, গালেও মেরেছে। আমি সবসময় বলতাম, গায়ে হাত দেবে না। যাই করুক, আমাকে জানাবে। আমি দরকার হলে মেয়েকে বাড়ি নিয়ে চলে আসব। বুধবার ওরা জোর করে পাঠিয়ে দেয়। শনিবার আবার জামাই ফোন করে নোংরা নোংরা কথা বলে। এমনকী আমার মেয়েকে, নাতনিকে মেরে ফেলার হুমকি পর্যন্ত দিয়েছিল। সেসব সহ্য করতে না পেরে মেয়েটা নিজেকে শেষ করে দিল। থানায় সব জানিয়েছি।”
যদিও বিজয়ের জামাইবাবু অনুপ দাসের কথায়, “বুধবার বিজয় বাড়ি ফিরে বউকে দেখতে পায়নি। ওর মেয়েকে জিজ্ঞাসা করে, মা কোথায়? কোনও সাড়া না পেয়ে উপরের ঘরের সামনে গিয়ে হুটোপাটির শব্দ শুনতে পায়। কথাও কানে আসে। এরপরই উঁকি মেরে দেখে ছেলেটার সঙ্গে নোংরামি করছে। বিজয় বাইরে থেকে শিকলটা তুলে দিয়ে নেমে এসেছে তালা নিতে। তালা মেরে পাঁচজনকে ডাকবে। এরমধ্যে ওই ছেলেটা সব বুঝে দরজা ভেঙে পালাতে যায়। বিজয় আটকানোর চেষ্টা করতেই বউ চেপে ধরে। তাই ছেলেটা পালাতে পারল। বুধবারের ঘটনা। এরপর বউটা বলছে ওই ছেলেটার সঙ্গে থাকবে। এদিকে ওই ছেলের বাড়ির লোক তো মানবে না। এরপরই সকলে বলে এই বউকে বাপের বাড়ি রেখে আসতে। লজ্জায় এসব করেছে। কেউ কোনও অত্যাচার করেনি।” পুলিশ সূত্রে খবর, ঘটনা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। ময়নাতদন্তের জন্য মৃতদেহটি বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।