বর্ধমান: পুজোর আগে স্বাস্থ্যে ফের অস্বাস্থ্যের ছবি। প্রায় ১৫ জন রোগীর চোখ ক্ষতিগ্রস্ত। কাঠগড়ায় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ। চোখের ছানি অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে একসঙ্গে ১৫ জনের দৃষ্টিশক্তি নষ্ট করার অভিযোগ উঠল সরকারি এই হাসপাতালের বিরুদ্ধে। এরমধ্যে বর্তমানে ১১ জন রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অব অপথ্যালমোলজিতে চিকিৎসাধীন। জানা যাচ্ছে এই ১১ জনের মধ্যে তিন পর্যায়ে তাঁদের চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আরও মর্মান্তিক যে এদের মধ্যে দু’জনের চোখ রাখাই যাবে না। কারণ একটি চোখ যদি রাখা যায় তাহলে অপর চোখটিও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের স্টেরিলাইজেশন প্রসেস ঠিক ছিল না। যার কারণে চোখে ছড়িয়ে পড়ে সংক্রমণ। রোগীদের মধ্যে কারোর বয়স চল্লিশ, কারোর আবার বেয়াল্লিশ! তাঁরা অন্ধ হয়েছেন এই বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের চক্ষু বিভাগের গাফিলতির কারণে। আরও জানা যাচ্ছে, অস্ত্রোপচার কক্ষও চক্ষু অস্ত্রোপচারের জন্য অনুপযুক্ত ছিল। সেই কারণে তৈরি হয়েছে এমন পরিস্থিতি। আরও অভিযোগ, এখনও পর্যন্ত স্বাস্থ্য ভবনের তরফে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি।
১২ সেপ্টেম্বরের ঘটনা। ১৮ জনের চোখের ছানি অপারেশন হয়। এরপর ১৫ সেপ্টেম্বর জানা যায় ১৮ জনের মধ্যে ১৫ জনের দৃষ্টিশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সংক্রমণের শিকার হয়েছেন তাঁরা। অভিযোগ, এরপর তড়িঘড়ি তাঁদের সকলকে পৃথক-পৃথক অ্যাম্বুলেন্সে করে রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অব অবথ্যালমোলজিতে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর এখানকার চিকিৎসকরা তাঁদের দৃষ্টিশক্তির পরীক্ষা করেন। তারপরই তাঁরা জানিয়ে দেন যে দু’জনের চোখ কার্যত বাদ দিতে হবে।
এক রোগী বলেন, ‘ছানি কাটানোর জন্য এসেছিলাম। এরপর মঙ্গলবার বা বুধবার গিয়েছিলাম বাড়ি। তারপর হঠাৎ দেখি চোখ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এরপর হাসপাতালে গেলাম। ডাক্তারবাবু চোখের পরানো লেন্স বের করে দিল। চোখের ভিতরে ইঞ্জেকশন দিল। দুহাতে দুটো দিল। তারপর গাড়ি করে নিয়ে চলে গেল।’
চিকিৎসক সংগঠনের নেতা মানস গমটা বলেন, ‘এটার দায় স্বাস্থ্য প্রশাসকদের নিতে হবে। কয়েকদিন আগে একটি অর্ডার সমস্ত জেলাতে চলে গিয়েছিল। সেই অর্ডারে লেখা ছিল যে প্রচুর অপারেশনের ফর্ম হচ্ছে তাই কোটা বেধে দেওয়া ছিল। কিন্তু যন্ত্রপাতি যদি স্টেরিলাইজ না করা হয় তাহলে এমন ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটবে। এই ঘটনার যথাপযুক্ত তদন্ত হোক।’
বিজেপি নেতা সজল ঘোষ বলেন, ‘চোখের ছানির অস্ত্রোপচার করতে হলে তা আগে জীবাণুমক্ত করে নিতে হবে। তা না করেই শুনেছি অপারেশন হয়েছে।’