দক্ষিণ ২৪ পরগনা: রাজ্যে বাঘের মোট সংখ্যা কত? কেন বারবার লোকালয়ে আসছে বাঘ? সুন্দরবনে একের পর এক বাঘের আগমনে কিছুটা উদ্বেগে সরকার। উদ্বেগে বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞরাও। শুধু নিদ্রাহীন ম্যানগ্রোভের মানুষ। এই পরিস্থিতিতে বাঘের সুমারি করার কথা ঘোষণা করলেন বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। স্পষ্ট জানালেন, বাঘ গণনা শুরু হবে। বক্সা থেকে নেওড়া ভ্যালি, সুন্দরবন এলাকায় কাজ হবে। বাঘের গলায় পরানো হবে রেডিয়াম কলার। জঙ্গলে বসানো হবে ক্লোজ় সার্কিট ক্যামেরাও।
বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “কিছুদিন ধরেই সুন্দরবনে বাঘের দেখা মিলেছে। আমার ব্যক্তিগতভাবে ধারণা বাঘের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে। তাি আমরা ঠিক করেছি, দ্রুত বাঘের সুমারির ব্যবস্থা করব। প্রত্যেক বাঘের গলায় রেডিয়াম কলার পরানো হবে। এছাড়া ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে। মূলত, সুন্দরবন, বক্সা, নেওড়া ভ্যালিতে এই সুমারি চলবে।”
একবার নয়, বারবার। সুন্দরবনের বিভিন্ন গ্রামে ঢুকছে বাঘ। এই তো কয়েকদিন আগে কুলতলি হাঁফ ছেড়েছিল বাঘ বন্দি হওয়ায়। তার আগে ৬ রাত আতঙ্কে কাটিয়েছে কুলতলি। তারপর ঝড়খালিতে মিলেছিল বাঘের পায়ের ছাপ। আর এ বার গোসাবাতে। দেখা মিলেছে রয়্য়াল বেঙ্গলের। গোসাবা কাঁপছে ডোরাকাটা আতঙ্কে।
সুন্দরবনের গত মাসখানেকের হিসেব কী বলছে?
কেন বাঘ ঘন ঘন ঢুকছে গ্রামে?
জঙ্গলের ভেতরে নেই পানীয় জল। ইয়াসে বাঁধ ভেঙে জঙ্গলের সমস্ত মিষ্টি জলের পিটই এখন নোনা। তৃষ্ণা মেটাতে বাধ্য হয়ে লোকালয়ে দক্ষিণ রায়। সেসব যেমন সত্যি, তেমনই সত্যি, কাঠ কাটতে, মাছ ধরছে, কাঁকড়া শিকারে বাঘের ডেরায় বার বার পা পড়েছে মানুষের। ঝড়ের মুখে বুক পেতে দেওয়া সুন্দরবন ধুঁকছে। আদমসুমারি বলছে বাঘের সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু বাঘের খাদ্য? হরিণ বনশূকরের অনুপাত কত? সে সংখ্যাই বা গুনছে কে?
প্রাক্তন সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়ের কথায়, “বাঘের হামলা বেড়েছে কারণ, মানুষ যেমন জীবিকার স্বার্থে জঙ্গলে যাচ্ছে, বাঘও পর্যাপ্ত খাবার না পেয়ে বাইরে বেরিয়ে আসছে।” শেষ হওয়া আদমসুমারি অনুযায়ী, বাঘের সংখ্যা এখন ৯৬। কিন্তু খাদ্যের জোগান ঠিক রয়েছে তো? সাধারণত আহত হলে বা শিকার ধরতে অক্ষম হলে বাঘ লোকালয়ে হানা দেয়।
বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এখন খাদ্য ও জলসংকট দেখা দিয়েছে সুন্দরবনের বাঘের। প্রাক্তন মুখ্য বনপাল অতনু রাহা বলেন, “বাঘকে সংরক্ষণ করতে হবে। আমাদের সহায়তা না পেলে বাঘ হেরে যাবে। তাকে বাঁচাতে হবে।”
চুরি হচ্ছে ম্যানগ্রোভ
গ্রামবাসীদের একাংশ ও বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞদের অভিমত, ভাল নেই সুন্দরবন। কারণ, বেশ কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ম্যানগ্রোভের মাটি চুরি করছেন। জমি চুরি করছেন। জেসিবি দিয়ে মাটি কেটে সেই জায়গায় মাছের ভেড়ি তৈরি করা হচ্ছে। পুরো ধুয়ে মুছে সাফ করে দেওয়া হচ্ছে জঙ্গল। ফলে জঙ্গল ছোট হচ্ছে। থাকার জায়গা কমছে বাঘের। আর তাতেই বাড়ছে বিপত্তি। বাঘ বাঁচলে বাঁচবে ম্যানগ্রোভের বাস্তুতন্ত্র। বাঘের ঘরের হানাদারদের ঠেকাতে পারলে খানিক স্বস্তি পেতে পারে সুন্দরবন। স্বস্তি পেতে পারে রয়্যাল বেঙ্গল।