বর্ধমান : রাজু ঝা হত্যাকাণ্ডে (Raju Jha Murder Case) রাজনৈতিক চাপানউতর যেন শেষই হচ্ছে না। এই খুনের ঘটনায় অন্যতম দুই সাক্ষী রাজু ঝা ঘনিষ্ঠ ব্রতীন মুখোপাধ্যায় ও আব্দুল লতিফের গাড়িচালক নুর হোসেন। সোমবার রাত পর্যন্ত তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ (Police)। কিন্তু, এবার নুর এবং ব্রতীনকে অরক্ষিত অবস্থায় ছেড়ে দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলল বিজেপি (BJP)। বিজেপির (BJP) জেলা সম্পাদক মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র সরাসরি পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিলেন। আসল ঘটনাকে যেন ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে পুলিশের তরফে। এদিন এমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, সোমবার দুপুরের পর সিটের সদস্যরা ব্রতীন মুখোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তাঁকে আনা হয় জেলা পুলিশ সুপারের অফিসে। সেখানে প্রথমে সিটের সদস্যরা তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন। সূত্রের খবর, ওই সময় গোটা পুলিশ সুপার অফিসকে কার্যত নিশ্চিদ্র নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা হয়। বের করে দেওয়া হয়েছিল সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের। মেইন গেটে হয়ে গিয়েছিল বন্ধ। নিয়ে আসা হয় গাড়ির ড্রাইভার নূর হোসেনকে। যার এফআইএরের বয়ান গোটা ঘটনাক্রমের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। সেই বয়ানে তিনি জানান ঘটনার সময় আব্দুল লতিফ ছিলেন গাড়িতে। অথচ সংবাদমাধ্যমকে ব্রতীন জানান, এ বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। তিনি লতিফকে চিনতেন না।
সোমবার রাত ৮.৫০ নাগাদ জেলা পুলিশ সুপার অফিস থেকে জিজ্ঞাসাবাদের পর ব্রতীন মুখোপাধ্যায় ও সেখ নুর হোসেন বেরিয়ে যান। প্রসঙ্গত, সোমবার দুপুর ৩টার সময় ব্রতীন মুখোপাধ্যায়কে পুলিশ সুপার অফিসে আনা হয়। আর বিকেল ৪ টায় সময় আনা হয় নুরকে। তারপর দীর্ঘক্ষণ জেরা চলে দফায় দফায়। দু’জনকে আলাদা করেও চলে জেরা। রাতে ব্রতীন মুখোপাধ্যায়ের গাড়িতে চেপে ব্রতীন নিজে ও নুর হোসেন বেরিয়ে যান পুলিশ সুপারের অফিস থেকে। চালকের পাশে বসেছিলেন ব্রতীনের আত্মীয় রঘুনাথ চক্রবর্তী। পিছনের সিটে বাঁদিকে ব্রতীন মুখোপাধ্যায় ও তার ডানদিকে ছিলেন সেখ নুর হোসেন।
এখানেই প্রশ্ন তুলেছেন বিজেপি নেতা মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র। তার কথায়, “নুর এবং ব্রতীনকে কিভাবে ছাড়ল জেলা পুলিশ? তাঁদের কেন হেফাজতে নিল না পুলিশ? বিশেষত যেখানে দুজনে দুরকম বয়ান দিয়েছেন। এদের অরক্ষিত অবস্থায় ছাড়া হল কেন? পুলিশ কী করে জানলো ওদের উপর কোনও আক্রমণ হবে না?” এরপরই শাসকদলের বিরুদ্ধে চাঁচাছোলা আক্রমণ শানিয়ে তিনি বলেন, ৭২ ঘণ্টা হতে চলেছে। এখনও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি দলদাস পুলিশ। তার অভিযোগ, রাজ্য সরকারকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে জেলা পুলিশ। নাহলে এই খুন করে গাড়ি ফেলে খুনিরা পালিয়ে গেল কীভাবে? তার কথায়, কীভাবে উধাও হল আব্দুল লতিফ? তবে কি সিট গঠন করা হয়েছে সব কিছু চাপা দিতে?
অন্যদিকে ছেড়ে কথা বলছে না শাসকদলও। তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস বলেন, “মৃত্যুঞ্জয়বাবু অনেক কথা বলেছেন। উনি বরং রাজনীতি ছেড়ে গোয়েন্দার কাজ নিন। তার কথায়,’পুলিশ তদন্তের ভার নিয়েছে। দোষীদের শাস্তি দেওয়া তার দায়িত্ব। পুলিশ কাকে ধরবে, কাকে ছাড়বে সেটা পুলিশের ব্যাপার। মৃত্যুঞ্জয়বাবু বলছেন পুলিশ রাজ্য সরকারকে বাঁচাতে চাইছে, এ কথার কোনো মানে নেই। বাংলার পুলিশ যথেষ্ট তৎপর।”